প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুখ দুঃখ
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজ। জাতি গড়ার কারিগরদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমাদের বিদ্যা অর্জনের হাতেখড়ি। ছোট বেলায় আমরা পিতামাতার পর যাদের সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি তারা হলেন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী।কথায় বলে পিতামাতা জন্মদাতা আর শিক্ষক হলেন জ্ঞানদাতা। তাইতো বলা হয় শিশুর শিক্ষক দু’জন- প্রথমত:বাবা-মা, দ্বিতীয়ত: স্কুলশিক্ষক।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনেক শিক্ষক পেয়েছি কিন্তু শৈশবের সেই সমস্ত শিক্ষা গুরুর তালিম তাদের কর্তব্য নিষ্ঠা, আদর্শ আজো মনে দাগ কাটে ও তাদের মতো সুনাগরিক হবার প্রেরণা মনে জাগে। এদেশে একসময় মক্তব মাদরাসায় ছোট বাচ্চারা পড়াশোনা করত। এখন এসব নেই বললেই চলে। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়।
১৯৯০ সালে জাতীয় সংসদে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক আইন’পাস হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামোকে শক্তিশালী করা, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের আগস্টে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগও গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৯৩টি। শহর, গ্রাম,চরাঞ্চল, হাওড়,বাওড়, দুর্গম পাহাড়ী এলাকাসহ সব খানেই প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ।দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ যার মধ্যে সরকারি ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৭৬৬ জন । ২ কোটির অধিক শিক্ষার্থীকে তারা নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন অ্যানুয়েল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট’-২০১৭ সালের তথ্যমতে আট হাজার ৫৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষকের চরম অভাবে। এসব স্কুলের মধ্যে সাতটি বিদ্যালয় চলছে মাত্র ১ করে শিক্ষক নিয়ে, ৭২১টি স্কুল চলছে মাত্র ২জন করে শিক্ষক দিয়ে আর সাত হাজার ৭৬৪টি বিদ্যালয়ে রয়েছে ৩জন করে শিক্ষক। এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে কোনো মতে কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য হলেও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৪ জন ‘ওয়ার্কিং টিচার’ থাকা প্রয়োজন। তা না হলে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান প্রদান করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছিল।
বাংলাদেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানত চার ধরনের বিদ্যালয় রয়েছে। যথা – ক- সরকারি বিদ্যালয়, খ-পরীক্ষণ বিদ্যালয় যা প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের (PTI) সাথে সংযুক্ত,গ- নিবন্ধীকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঘ- কমিউনিটি বিদ্যালয়। এছাড়া রয়েছে নিবন্ধন ছাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন এবং কিছু এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় এদেশে রয়েছে।২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছিল।
বর্তমান সহকারী শিক্ষকদের ১৪তম প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের বেতন ভাতা চালু রয়েছে। সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড পেতে প্রায় চার বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। সংশোধিত শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রস্তাবনায় সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড, আর প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদাপূর্ণ গ্রেড প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৪তম গ্রেডের পরিবর্তে ১২তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের পরিবর্তে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।যদিও সহকারী শিক্ষকরা এতে খুশি নন। তারা ১১তম গ্রেড পেতে আন্দোলন করারও হুমকি দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একসময় চরমভাবে অবহেলিত ছিলেন। সময়ের সঙ্গে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অনেক তরুণ তরুণীকে এখন এ পেশা আকৃষ্ট করছে।
একটি দালান তৈরীর সময় যেমন শক্ত মজবুত ফাউন্ডেশন প্রয়োজন হয় তেমনি আমাদের উচ্চ শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের শক্ত ভিত গড়ে দেন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ছোট বেলায় সাত আট ঘন্টা স্কুলে কাটানোর সময় শিক্ষকদের স্নেহাশিস আদর ভালোবাসা ছিল অফুরন্ত। তাদের জন্য শ্রদ্ধায় মাথা এখনো নুয়ে আসে। ইচ্ছে করে স্যারদেরকে জড়িয়ে ধরি। কুর্নিশ করি। ছোটবেলার সেই ভালোবাসা আদর একটু হলেও ফিরিয়ে দেই। সৎ মানুষগুলোর সংস্পর্শে নিজে আবেশিত ও শিহরিত হই কিছুক্ষণ। এই মানুষ গুলো একেবারে নিরেট মাটির মানুষ। এখনো তাদের গায়ে লেগে আছে গ্রাম্য মৃত্তিকার সুঘ্রাণ। হয়তো তারা ঠিকমতো পোশাক আশাকে ওতোটা মনযোগী না । প্যান্ট শার্ট হয়তো ঠিকমতো পরিষ্কার করে পরেন না। খুব স্মার্টলি কথাও বলেন না। চশমাটার ডাঁটটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তবুও চশমার ফাঁক দিয়ে এখনো তার ক্ষুদে শিষ্যদের তালিম দানে ব্যস্ত উনারা।
নিজের সংসার ফেলে জীবনের আট দশটা ঘন্টা প্রতিনিয়ত ব্যয় করছেন মানুষ গড়ার আঙিনায়। ফুলকলিদের নিয়ে নতুন ফুল ফোটানোর ব্রত নিয়ে। তারা তো আমাদের কচি মনে আদর্শ। ভালো মানুষ হবার বীজ তারাই তো বপন করে দেন। ঝড় বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাস বন্যা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের কর্তব্য পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে তারা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। নিজের সংসার বাল বাচ্চা ফেলে শিক্ষকেরা এসব ফিরিশতাতুল্য ছোট ছেলে মেয়েদের মাঝে নিজের সংসার ও ছেলে মেয়ে যেন খুঁজে পান তারা। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সিংহভাগ সময় ব্যয় করেন ছাত্র ছাত্রীদের কল্যাণে। আমার পরিচিত এমনো শিক্ষক আছেন যার স্কুল বাসা থেকে প্রায় ২০কিমিঃ দূরে। কখনো বাসে আবার কখনো সিএনজিতে আবার কিছু পথ পদব্রজে তাকে যাতায়াত করতে হয়।
বর্ষাকাল হলে তো রক্ষা নেই। কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তায় কিছু পথ না হাঁটলে গন্তব্যই যেন মিলে না। অতি কাছ থেকে তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার স্কুল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গিয়েছি । একদম অজ পাড়া গায়ে নিভৃত জনপদে ছিল স্কুলটি। শহর থেকে তাকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ কিমি রাস্তা আসা যাওয়া করতে হতো। উদায়াস্ত স্কুল নিয়েই ব্যস্ত দিন যেন তাকে অতিবাহিত করতে হতো। এতো ঝাঁক্কি ঝাঁমেলা পোহানোর পর, নিজের সংসার স্বামী শ্বশুর শাশুড়িকে দেখভালের মতো সময় কোথায় তার? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোটামুটি এটিই সাধারণ দৃশ্য। যদিও বাড়ির আশেপাশে স্কুলে অনেকেই আরামছে ক্লাস নিচ্ছেন।যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজ এলাকায় এমনকি বাড়ির পাশের স্কুলে শিক্ষকতা করার সুযোগ সুবিধা আছে ।
কিছুদিন আগে শুনলাম বদলী হয়ে বাসার কাছাকাছি স্কুলে এখন আছেন। দূরত্ব , বাসায় ফেরার টেনশন ও সংসার সামলানোর দুশ্চিন্তা তাকে আর পেয়ে বসে না। মেয়েদের জন্য প্রাইমারির শিক্ষকতা পেশাটা খুব মানানসই যুতসই যাই বলি না কেন?প্রাইমারির অধিকাংশ শিক্ষক নারী। নিয়োগ লাভে তাদের জন্য ৬০ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে, ২০ ভাগ পুরুষ ও ২০ ভাগ পোষ্য কোটা (বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ছেলে ও অবিবাহিত মেয়ে) অনুসরণ করে থাকে। বিদ্যমান এসকল কোটার মধ্যে আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও প্রতিবন্ধী কোটা তো আছে।তবে সরকার কোটা বিলুপ্ত করায় তাদের কপালে কি আছে বলা যাচ্ছে না। আগের দিনে এসএসসি পাশ মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতো পারতেন। এখন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে অনেক উচ্চ শিক্ষিত নারী বেকার। সেখানে এসএসসি পাস দিয়ে মান সম্মত শিক্ষক কতটুকু পাওয়া সম্ভব?এখন সহকারী শিক্ষক হিসেবে আবেদন করতে পুরুষদের কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হয়, নারীদের উচ্চমাধ্যমিক পাশ হতে হবে। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে নারীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক পাশ।
একজন নারী একজন ছোট বাচ্চার যতটা কেয়ার নিতে পারেন পুরুষেরা ততটা পারেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ছোটদের মাতৃস্নেহের তৃষ্ণা কিছুটা হলেও নিবারণ করতে পারে। তবে মেধাবী, দায়িত্বশীল, প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষক প্রাথমিক পর্যায়ে খুব বেশি প্রয়োজন। তাদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণমূলক কোর্সের আয়োজন করা অপরিহার্য। যাতে কচি অবুঝ শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম ও পরমত সহিষ্ণুতা, ভালো মানুষ হবার বীজ শিশু মনে অংকুরিত করাতে পারেন। ছোট বাচ্চারা অনুকরণ ও অনুসরণ প্রিয় সুতরাং বড়দের দেখেই তারা শিখে এবং তা করার চেষ্টা করে।
প্রাইমারির শিক্ষকেরা দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সামাজিক সচেতনতা, আদমশুমারি, ভোটার তালিকা প্রনয়ণ,নির্বাচনী কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে তারা দৃঢ় ও সচেষ্ট। এছাড়াও তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। শিক্ষক সমাজ যতটা আত্মমর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার কথা ততটুকু পায় না। তাদের কে সমাজে এখনো তুচ্ছ ও নিম্ন শ্রেণীর পেশাদার মনে করা হয়। অধিকাংশ মানুষের মনে শিক্ষক সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। তবে এ ধারণার ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে।এখন সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে।ইতিহাস বলে, যুগে যুগে অতি অত্যাচারী শাসকও নত শিরে গুরুর সামনে দাঁড়িয়েছেন। গুরুকে অসম্মানের ধৃষ্টতা কেউ দেখাননি। চাণক্য শ্লোকে বলা আছে ‘এক অক্ষরদাতা গুরুকেও গুরু বলিয়া মান্য করিবে। এক অক্ষরদাতা গুরুকে যে গুরু বলিয়া মান্য করে না, সে শতবার কুকুরের যোনীতে জন্মগ্রহণ করে চণ্ডালত্ব লাভ করিবে।’
ইউনেস্কোর মতে 'শিক্ষকের মর্যাদা’ বলতে বুঝানো হয়েছে শিক্ষকতা কাজের গুরুত্বানুসারে এবং সততার সাথে সম্পন্নের যোগ্যতা ও পারদর্শিতার কারণে প্রদত্ত সম্মান ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি অন্যান্য পেশাজীবি সম্প্রদায়ের তুলনায় তাঁদের কাজের শর্তাদি, পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদির মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান।
আজ কয়েকটি কারণে প্রাইমারি শিক্ষকরা বেশ আলোচনায়, বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা এমদাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক জাতীয় পতাকা একবার টানিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহেও তা নামান না। বিদ্যালয়ের সামনে রাতদিন জাতীয় পতাকাটি টানিয়ে রাখেন। অভিভাবকরা বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালেও তিনি কর্ণপাত করেননি। প্রধান শিক্ষকের মর্জির ওপর নির্ভর করে জাতীয় পতাকা ওঠানামা। এ ছাড়া জাতীয় দিবসগুলোও তিনি যথাযথভাবে পালন করেন না বলে অভিযোগ। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক জানিয়েছেন, অভিভাবকদের অভিযোগ মিথ্যা। বিদ্যালয়ে দপ্তরি নেই। ছাত্রছাত্রীরা পতাকাটি ওঠানামা করে। ভুলবশত একদিন জাতীয় পতাকা নামানো হয়নি। এটা কখনও অবমাননা হতে পারে না। যেই সত্য বলুক না শিক্ষক সমাজ কে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। সাদা কাপড়ের দাগ বেশি ফুটে উঠে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন গ্রেড বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা নিয়ে ব্যস্ত তখন মোখলেছুর রহমান মানিক বাইক চালিয়ে নিজের সংসার চালান। তাঁর আসল পরিচয় তিনি একজন জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকতা করেন একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু তিনিই নন তার মতো এমন অনেক শিক্ষকই আছেন যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি বাইক-ইজিবাইক চালিয়ে নিজের সংসারের খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকে করছেন কৃষিকাজ। ৪৭ দিন ধরে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আন্দোলন করেছিলেন। আশ্বাস পেয়েছিলেন সরকারি হবে সবই গুড়ে বালি। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কেন্দুয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শুরু থেকেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন মানিক। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ভেবেছিলেন কষ্টের দিন বুঝি শেষ হয়ে আসছে। কারণ সে সময় জাতীয়করণের যে সকল শর্ত ছিল তার সবটাই পূরণ ছিল বিদ্যালয়টির। কিন্তু সে দফায় বাদ পড়ে যায় স্কুলটি। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি এ বাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিলেন এই জাতি গড়ার কারিগর।
এবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিরীহ শিক্ষিকাকে এক হাত দেখিয়ে নিলেন ঝিনাইদহ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো. আক্তারুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়াতে না পারার অজুহাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ছবিকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। বহিষ্কারের প্রতিবাদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দিলেন আন্দোলনের ডাক। অবশেষে বহিষ্কার প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো. আক্তারুজ্জামান তার বহিষ্কারাদেশের যে চিঠি দেন সেখানে ২২টি বানান ভুল ।বানান ভুলের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষা কর্মকর্তাকে এখন কে বহিষ্কার করবেন? এভাবে হযবরল ভাবে চলছে দক্ষ অদক্ষ, ক্ষমতাবান ক্ষমতাহীনদের দ্বন্দ্ব। মাঝখানে সাধারণ জনগণ পিষ্ট। পরিশেষে বলি, আমাদের শিক্ষকরা হলেন সুনাগরিক তৈরির করার সুমহান কারিগর। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের মহান শিক্ষা ও পরিশ্রমের ফলেই সমগ্র বিশ্ব অবলোকন করছে দেখছে সুসভ্য সমাজ ও আলোকিত জাতি।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক