তদন্ত
- মো. শাহাবউদ্দিন
- প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৩ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০৩ PM
লাল নীল হালকা সাদা নানা রকম বাতি। তবুও ঘরটি ঝকঝকে পরিষ্কার না । হালকা হালকা পরিষ্কার। এ যেন চাঁদনী ময় রাত কিংবা সবে ভোর অথবা পরন্তু সন্ধ্যা । সবার মন ফুরফুরে। গোল গোল টেবিলে কত রকম চকচকে নকশা । এ যেন নকশার রাজধানী । হালকা মিউজিকের তালে সরাব হাত পা দুলে ।
এই দোলা যে কত মহা সুখের দোলনা তা অনুভব করছে ওরা তিন জন, মো. খালেদ, আহমেদ হোসেন, এবং পাইলট প্রশান্ত । মালি মিউজিক রেস্টুরেন্টের গোল টেবিলে তিন খানা চেয়ার ত্রিভুজ আকৃতির করে মুখামুখি বসে আছে তিনটি কপির কাপ নিয়ে ওরা তিন জন । মাঝে মাঝে চকচকে সাদা দাঁত গুলো বেড়িয়ে আসছে হায়নার মত । এ কি হাসি, মহা উল্লাসের হাসি। পৃথিবীর সবাই হেরে গেছে তাদের কাছে। মিডিয়া, পাবলিক, সমালোচক সবাইকে বানিয়ে দিয়েছে নিরন্তর ধূসর গাঁদা।
ওরা সবাই বোকা, বলে হাহা করে হেসে উঠলেন মো: খালেদ। আহমেদ হোসেন ওর কথার সাই দিয়ে বলে উঠলো, আমরা কারা বুঝতে হবে, খালেদ মিয়া। স্ব-গর্বে বলে যেতে লাগলো পাইলট প্রশান্ত, আরে দেখতে হবে না, আমরা কারা, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে বিদ্যা অর্জন করেছি বলে কথা; এতটুকু যদি না করতে পারি তাহলে ত প্রতিষ্ঠানের মান কোথায় থাকে !
কথা শেষে সবাই উচ্চ স্বরে হাহা করে হেসে উঠলো । বাঘের মতো করে হরিণ মেরে আজ যেন উৎসবে মেতেছে তারা। হঠাৎ হাসি থামিয়ে খালেদ , প্রশান্তকে জিজ্ঞাসা করে, ভাই, তুমি যখন বিষয় টি দেখলা তখন তোমার কেমন লেগেছিল? ---আরে শুনে না! প্রথম বিষয় টি দেখলাম আমার পরিচিত একজনের ফেসবুক প্রোফাইলে। রাতারাতি অনেকের প্রোফাইল দেখলাম। তারপরে বিভিন্ন পাবলিক মিডিয়ায়। এমনকি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কথা তুলছে। আমার গায়ে ভাই জ্বর চলে এলো। এবার বুঝি আমি শেষ। আমাদের আর বুঝি রক্ষা নেই। ঈশ্বরের বিশেষ কৃপায়, দেখ ভাগ্য ক্রমে বিষয়টির তদন্ত পরে গেল আমাদের উপর।
হাহা করে হেসে আহমেদ হোসেন বলে চললো, আপন মামা মন্ত্রণালয়ের সচিব, তদন্ত আমাদের উপর পরবে না ত কাদের উপর পরবো! প্রশান্ত একটু করুনার সুরে, যাই বল মিয়া ওমন সহজ সরল সোলতান আলীকে আমাদের ফাঁসানো উচিত হয় নাই । কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলেন আহমেদ হোসেন, কিসের উচিত হয় নি? শালা আস্তা একটা হারামজাদা ।ওর জন্য গুলশানের চার তালা বাড়ির কাজ শেষ করতে পারি নাই । শালা ঘুষ খাবে না, দুর্নীতি করবে না । দু'টাকা বেতনে ওর পোষায়, আমাদের পোষায় না। শালা জীবনটারে হেল করে দিছে।
খালেদের কন্ঠেও যেন আগুন, শালা নাস্তিক, নামাজ নাই, কালাম নাই। ফছিগিরি করে। ঘুষ খাবে না , দুর্নীতি করবে না, দেখ এখন কেমন লাগে,দিছি ত ফাঁসিয়ে। গত বছর বায়না দিয়েও ওর জন্য সাভারে এক বিঘা জমি কিন্তে পারি নাই ।শালা জীবনটারে নরক বানিয়ে দিছে।
কথা গুলো অসহ্য লাগল, প্রশান্ত আপন মনে অতীতের নোংরা কাজ গুলো নিজের মনের আয়নার ভাসাতে লাগলো--আমি, খালেদ আর আহমেদ তিন জনে যখন সন্ধ্যা বেলায় নিজের বাড়ি ছাদে প্লান করি যে' নদী খনন এবং পার সংরক্ষণ কাজের প্রকল্পের আমরা চার জনই হলাম উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এর মধ্যে সোলতান আলী খুব সৎ ।
সে কোন কাজে ভেজাল চায় না। তার জন্য আমরা অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই। তিনি অন্য একটি কাজের জন্য বিদেশ থাকায় এই প্রকল্পে তিনি তেমন ভাবে ঠিকমতো দেখবাল করতে পারে নাই, সেই সুযোগ আমরা খুব খারাপ ভাবে নিয়ে প্রকল্পের প্রায় ষাট শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ করি। পরে যখন সোলতান আলী বিষয় টি বুঝতে পারে তখন খুব সতর্কতা সাথে গোপনে বিষয় টি প্রকাশ করে দেয়। এই সততাই তার জীবন কে নষ্ট করে দেয় । আমরা যখন তিন জন তদন্তের কাজ করি তখন সকল তথ্য ওলটপালট করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, জাল কাগজপাতি বানিয়ে মন্ত্রণালয়ের জমা দেই । তাতে সকল দুর্নীতি দায়ভার চাপে সোলতান আলীর উপর। বাংলা মন্ত্রণালয়। আমাদের তদন্তই হবে চূড়ান্ত তদন্ত । আর কেউ এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা আর দেখা হবে না । সত্য জয় চির দিন নয়।
কথা গুলো স্মরণে আসতেই নিজের প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে মত প্রবল বেগে ধেয়ে আসতে লাগলো আত্মসংশোধনের লাল নীল হালকা সাদা কাল সহস্র ঘৃণা। তাই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশান্ত ওদের লক্ষ না করে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, তোমরা থাকো,আমি আসি।
আর একটু থেকে গেলে হয় না, আমার কেমন যেন লাগছে। আমি আর পারছি না, বলে বেড়িয়ে গেলেন প্রশান্ত। ওর এই যাত্রা পথ কেউ খেয়াল করলো না । এইটাই পৃথিবী। এটাই চরম সত্য।
লেখক: শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগ, ৩য় বর্ষ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।