ডেঙ্গু প্রতিরোধ: বিদ্যালয় হতে হবে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। ইসলাম ধর্মে বলা আছে ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’। আমাদের বসবাসের জায়গা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ হাটবাজার মোদ্দাকথা মানুষের বিচরণ যেখানে থাকবে সেটি হতে হবে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন। ময়লা আবর্জনা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়েছেন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। তারা সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে এটাই প্রত্যাশা করি। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ময়লা আবর্জনা বা নোংরা পরিবেশে মশারা বংশবিস্তার করে। এবং সেখান থেকে রোগব্যাধি ছড়ায়। ডেঙ্গু এরকমই একটি ভাইরাস জনিত রোগ। যার বাহক হলো ‘এডিস’ নামক এক প্রকার মশা।
শিশুরা যেনো এর ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচতে সেজন্য আমাদের সচেতনতা জরুরী। বিদ্যালয় শিশু শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। যেখানে প্রাণ খুলে হাসি আনন্দে শিশুরা বেড়ে উঠে। বেড়ে উঠার এই সময়ে তারা পরিবেশের প্রতি অতটুকু সচেতন হয়ে উঠে না, যতটুকু আমরা প্রত্যাশা করি। শিশু, শৈশব মানেই একটু উড়নচন্ডী, খামখেয়ালিপনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের সচেতন করা, কিছু শেখানোর দায়িত্বটা আমাদেরই।
গত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম- আল হোসেন মহোদয়ের স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবং সে আলোকে ৩১ জানুয়ারি সারা দেশে একযোগে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এবং প্রতি বৃহস্পতিবার শিক্ষক, শিক্ষার্থী একসঙ্গে বিদ্যালয় আঙ্গিনা এবং এর আশপাশ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়েও অনেক বিদ্যালয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং ক্লাস রুটিনে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি শিশুকাল থেকেই শেখানো জরুরী। জীবন-যাপনে শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকে সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করানো হয়। এবং নিজের কাজ নিজেই করতে আগ্রহী করে গড়ে তোলা হয়। যার কারণে তাদের মধ্যে সামাজিকতা এবং দেশপ্রেম শুরু থেকেই গড়ে উঠে।
sustainable Development Goal- 4 (SDG-4) অর্জনের জন্য মানসস্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্ন সবার আগে জরুরী। শিশু পরিষ্কার জামা কামড় পরিধান করা, হাত পায়ের নখ ছোট রাখা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি তাকে সচেতন এবং শেখানোর দায়িত্ব শিক্ষক এবং অভিভাবকদের। শিশু যদি ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্ন হতে শেখে সে কখনই তার আশপাশ নোংরা করাটাকে পছন্দ করবে না। তাকে ডাস্টবিনের ব্যবহার শেখাতে হবে।
বিদ্যালয় পরিচ্ছনতা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলতে হবে। এবং বিদ্যালয় ছুটির পর ময়লাগুলো ফেলে দিয়ে পাত্রটিকে পরবর্তী দিনের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা জরুরী।
নোংরা পরিবেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ায়। মশা-মাছি হচ্ছে সে সকল রোগের বাহক। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু মশা ছড়িয়ে পড়ার পিছনে পরিবেশকে নোংরা রাখা অনেকাংশে দায়ী। আমরা যদি প্রকৃতি কিংবা পরিবেশকে যথাযথভাবে না রাখি তাহলে তা আমাদের সাথে বিরূপ আচরণ করবে এটাই স্বাভাবিক।
ছোট এই ভূখণ্ডে প্রায় সতেরো কোটি মানুষের বসবাস। সকল মানুষই একটি পরিবেশে বেড়ে উঠছে। নিজের বেড়ে উঠার জায়গাটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত? কি করা উচিত আর করছি? প্রতিটি মুহূর্তে যদি আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি তাহলে বাসস্থান কিংবা বিদ্যালয় আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখার জন্য কোন পরিপত্রের প্রয়োজন হবে না।নিজ থেকেই করতে পারবো।
এদেশ আমাদের। প্রতিটি শিশুই সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার অধিকার রাখে।তাদের শৈশব যেনো নিরাপদ হয় সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব।পরিবেশকে কিভাবে সুন্দর রাখা যায় তা শিশুদের শেখাতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজে নেমে যেতে হবে।শ্রেণীকক্ষ, বিদ্যালয় আঙ্গিনা ও তার আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে যে শিশুর আগ্রহ এবং অবদান বেশি তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। এ ব্যাপারে সচিব মহোদয়ের চিঠিতেও স্পষ্ট বলা আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় সকল বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চলছে। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয় কাজ। আমাদের দেশটাকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।
লেখক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
naforhad.du@gmail.com