২৯ জুলাই ২০১৯, ১৯:২০

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এক বছর

ফারুক হাসান  © ফাইল ফটো

গতবছরের আজকের এই দিনে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকাসহ সমগ্র দেশের রাজপথ যখন উত্তাল ঠিক সেই সময়টিতে আমিসহ আমার সহযোদ্ধারা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মিথ্যা মামলায় লোহার শিকলের চার দেয়ালে বন্দী।

ঘটনাপ্রবাহ আপনাদের সকলেরই জানা, শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্ট. কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে একটি বাস এসে চাকার তলে পিষ্ট করে দিয়ে যায়। সেখান থেকেই আগ্নেয়গিরির লাভা বের হতে শুরু করে, দিন গড়াতে না গড়াতেই সেই লাভা ঢাকা ছাড়িয়ে সমগ্র দেশে বিস্তৃত হয়।

প্রশাসনের নাকের ডগায় কলম রেখে শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দেয় কিভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হয়; কিভাবে কাগজপত্র চেক করতে হয়; কিভাবে জরুরি সেবার যানবাহন গুলোকে আলাদা লেনে দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়; কিভাবে ট্রাফিক সিগনাল ঠিক রাখতে হয়। ক্ষুদে এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিশ্ব বিকেককে দারুণভাবে নাড়া দিলেও নাড়া দেয় নি আমাদের সরকারকে।

ক্ষুদে বাচ্চারা যখন আবদ্ধ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে রাজপথে আসল ঠিক তখনই রাষ্ট্রযন্ত্রকে বুঝা উচিত ছিল এই আন্দোলন একটি শতভাগ যৌক্তিক আন্দোলন। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ঠিক তার উল্টোটা বুঝলেন, আর এখানেও ষড়যন্ত্রের লাভার গন্ধ খুঁজা শুরু করলেন। একটি রাষ্ট্র যখন তার জনগণের পাল্স বুঝতে ব্যর্থ হয়, তখনই বিকল্প পন্থায় সবকিছুকে দমানোর জন্য বেছে নেই সরকারি পেটোয়া বাহিনী এবং পোষ্য লেলুয়া বাহিনীকে।

শিক্ষার্থীদের কে নিয়ে শুরু হয়ে যায় গুজব আর গুজব। রটানো হয় নানা কুৎসা ও গুজব। এই সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপ তাদের ফাইদা হাসিলের জন্যে গুজবে সামিল হয়ে গুজবের শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটাতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের গতি ভিন্ন দিকে মোর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি সব প্রতিষ্ঠান কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন কলাকৌশলে তারা কিছুটা সফলও হয়।

পরিপূর্ণ সফল হওয়ার জন্য এইবার সাধারণ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দেওয়া হয় হাতুড়ি হেলমেট বাহিনীকে। হাতুড়ি হেলমেট বাহিনী তাদের খেলাধুলার সরঞ্জাম হাতুড়ি, রড, রামদা, হকিস্টিক সহ দেশীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। রক্তাক্ত করে অসংখ্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে। শুধু শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেই তারা ক্ষান্ত হন নাই, সাংবাদিকদের উপরও বর্বর আক্রমণ করে ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে তারা।

এভাবেই ধীরে ধীরে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ঝিমিয়ে যায় আর আমাদের সড়কের মৃত্যুর মিছিলটি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে...!

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন তো কোন নির্দিষ্ট দল, গোত্র বা মতের ছিল না। এই আন্দোলন ছিল সবার, তাহলে কেনই বা সরকারের পেটোয়া বাহিনীর সাথে হাতুড়ি হেলমেট বাহিনী দিয়ে আন্দোলন কে দমানো হলো...?

শুধু পিটিয়েই তারা থেমে যাননি, শিক্ষার্থীদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা রুজু করা হলো। অনেক শিক্ষার্থীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হলো। আমরা কেন্দ্রীয় কারাগারে সবার সাথে সাক্ষাৎ করলাম কথা বললাম তাদের আন্দোলনের আন্দ্যোপান্ত নিয়ে।

আজও শিক্ষার্থীদের সেই মিথ্যা মামলা চলমান, প্রতিমাসে তাদের হাজিরা দেওয়া লাগে আদালতে।

অথচ যারা এই বর্বর হামলা চালিয়েছিল তাদের ছবি সহ ভিডিও গণমাধ্যমে এসেছে। সেইসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ প্রাই সব দায়িত্বশীলগণ বলেছিলেন তাদের বিচার করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোন শব্দ পর্যন্ত লেখা হয়নি আর ভবিষ্যতেও হবে না এটা নিশ্চিত।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যে কতটুকু যৌক্তিক এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বুঝতে পারি যখন নিজের পরিবারের কেউ রাস্তায় প্রাণ হারায়। কারো জীবন যাতে এই দেশের বিশৃঙ্খল সড়ক কেড়ে না নেই সেই কামনায় আজ এখানেই শেষ করছি...!

লেখক: যুগ্ম-আহবায়ক
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ