১৭ জুলাই ২০১৯, ১৯:০৯

স্বাধীন দেশে পরাধীন নাগরিক আমি

  © টিডিসি ফটো

প্রিয় মাতৃভূমি আমাকে এমন একটা নিরাপত্তা বলয়ের সন্ধান দাও যেখানে আমি রুনি, রুহিকে রেখে আসতে পারবো।জাতি এখন খামছে ধরে আছে।তাই দুই বছরের আরিনকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বলতে হচ্ছে আনকেল আমাকে রেপ করো না, আমি আপনার মেয়ের মত।

মনে আছে, আমি তনুর কথা? দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ের কাছেই হার মানতে হয়েছে আমাকে।আমি বিশ্বজিৎ, নুসরাত, নাদিয়া, মুচকি হেসে কবর থেকে বলছি,আমরা কবর থেকেই তোমার কর্মকাণ্ড দেখে না হেসে পারছি না। আমার ও আরো কিছু দিন বাচঁতে ইচ্ছে ছিল।প্রিয় মাতৃভূমি তুমি আমাদের কতই না প্রিয় ছিলে।

প্রিয় মাতৃভূমি আমি রাজন বলছি,আমায় তারা গাছের সাথে বেধে পিটাইয়া মারছে,আমার চিৎকার তাদের কান পর্যন্ত পৌছাতে পারে নাই। আমি আইরা বলছি, কার কাছে বিচার চাইবো? শিক্ষকের কাছে? তারাই তো রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে ধর্ষণে লিপ্ত। মন্ত্রীদের কাছে? এই দেশের কলেজের মেয়েদের তো তাদের কাছে উপঢৌকন হিসেবেই পাঠানো হয়। শরীরের বিনিময়ে মিলে পার্টিতে পদ কিংবা হলে সিট।

আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বিচারকের সামনেই আমাকে আত্তহুতি দিতে হলো।আমার সর্বশেষ আশ্রয় স্থল আমাকে রক্ষা করতে পারে নাই। আমি বাবার হাতে ধর্ষণ হওয়া সেই মেয়েটা বলছি, আমি আমার মা কতৃক পতিতালয় বিক্রি হওয়া সেই হতভাগা মেয়েটিই বলছি,আমি হুজুর কতৃক ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ ও কেরোসিন পুড়ে মরে যাওয়া নুসরাত বলছি।পোড়া লাশের গন্ধে তোমার আকাশ বাতাস ভারি করা আমি তাজরিন বলছি।

প্রিয় মাতৃভূমি আমি বিশ্বজিৎ, আমি নুসরাত,আমি তনু,আমি ফেলানি,আমি অভিজিৎ, আমি নাদিয়া, আমি রাজন, আমি ব্যর্থ ছাত্র, আমি প্রশ্নপত্র না পাওয়া হত দরিদ্র, আমি লাল সবুজের কফিন, আমি পিলখানার অসহায় সেনা অফিসারদের আঁধারে দাফন, আমি বাসে ধর্ষিতা মাজেদা, আমি ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা, আমি ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন!

আমি গুম হওয়া সন্তানের মায়ের নিরব কান্না, আমি রানা প্লাজার ধুলোয় উড়ানো লাশ, আমি তাজরিনের অগ্নিকান্ডের অসহায় গরিব কর্মচারি, আমি ধ্বংসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের গন্ধ আর, আমি সাগর রুনির মেঘ, আমি জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু!আমি সাত খুন, আমি ফেলানি!

আমি মস্তিষ্ক বিকৃত বাবা, নেশাগ্রস্ত ভাই, মন্ত্রী, শিক্ষাগুরু, সেনানিবাস, আদালত, মন্দির, মক্তব, গির্জা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাঠ, ঘাট, বাস, ট্রেন, বিমান আজ আমি কারো কাছে, কোথাও নিরাপদ না। তাদের কাছে আমি এখন ভোগ্য পণ্য।

প্রিয় মাতৃভূমি, এই দেশে বন্ধুক যুদ্ধের নামে নিরাপরাধির পৈশাচিক খুনে উল্লাস করা হয়, আবার ক্ষমতা ও টাকার জোরে আইনকে বৃদ্ধা আংগুল দেখিয়ে রেপিস্টরা পার পেয়ে যায়। ক্ষমতার জোরেই সব কিছু হয় এই খানে। আবার নিরপরাধ মানুষ বলির পাঠা হয়। আমার স্বাধীন দেশে এখন আমি পরাধীন। আমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমি ভয়ে বিভৎস।আজ আমি স্বাধীন দেশে পরাধীন নাগরিক। প্রশ্ন জাগে মনে, আমার কোথাও নিরাপদ আশ্রয় স্থল আছে?

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়