জন্ম পরিচয় ফিরে পাবার আকুতি শারমিনের
আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা যদি কাকতালীয়ভাবে কারো সাথে মিলে যায়, দয়া করে আমাকে আমার পরিচয় ফিরিয়ে দিন। আমি সব সময়ে দাবি করি, ছোট বেলায় আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। আর সেটির নির্দিষ্ট কারণ হলো, আজ থেকে ১৭ বছর আগে আমার বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন আমাকে ঢাকার রামপুরা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় শরীয়তপুর জেলার ড্যামুডা থানা আদাশন গ্রামে। সেখানে নিয়ে যায় ওখানকার বাসিন্দা মাহমুদা ও তার স্বামী আবদুল হক সরদার।
এরপর একই গ্রামের হায়দার শিকদার ও আসমা বেগম দম্পতি কাছে আমাকে দিয়ে দেয়া হয়। হায়দার শিকদার ও মাহমুদা সম্পর্কে খালা-ভাগিনা। সেই সমায়ে হায়দার শিকদারের কোন ছেলে-মেয়ে ছিলো না। আমাকে নিয়ে যাওয়ার ৫/৬ বছর পর হায়দার শিকদার ও আসমা দম্পতির একটি মেয়ে আসে। সেই সময়ে আমার বয়স ছিল ৯/১০ বছর। তখন তাদের নিজস্ব সন্তান হওয়ার পর মাহমুদা ও হায়দার মিলে প্রথমে ঢাকায় আমাকে একটি বাসায় কাজে দেয়। সেখানে আমি কান্নাকাটি করতাম বলে একমাস পর আবার আমাকে শরীয়তপুর নিয়ে যায়।
হায়দার শিকদার ঢাকায় থাকতো। তিনি আমাকে আদর করলেও তার স্ত্রী আসমা বেগম আমাকে দুচোখে দেখতে পারতো না। আমাকে দিয়ে সংসারের সব কাজ করিয়ে নিতো। করতে না পারলে কপালে খাওয়া জুটতো না, মারধরের কথা নাইবা বলি। কাজ করতাম না বলে এক সময়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর ঐ এলাকার মহিলাদের সহায়তায় পাশ্ববর্তী গোঁসাইর হাট থানার ব্যবসায়ী লোকমান সরদারের বাসায় আমাকে আশ্রয় নিতে হয়। সেখানে আমার জীবনের ৪ বছর কেটে যায় কাজের মেয়ে হিসাবে।
হায়দার শিকদারের ভাইয়ের বৌ আমার চাচী। এরপর তিনি আমাকে ঢাকায় একটা বাসায় কাজ দেয়। ঢাকায় আসার পর মানুষের বাসায় কাজ করি আর আমার শিকড়, মানে নিজের জন্ম পরিচয় খুঁজতে থাকি। এমন পরিচিতির মাঝে আমার কষ্টের কথা গুলো শুনে একটা ছেলে আমাকে বিয়ে করে। আমাদের ৫ মাস বয়সের একটা মেয়ে বেবী আছে।
ফেসবুকে অনেক সময়ে অনেক পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এজন্য জন্য আমি কৃতজ্ঞ। অনেকেই বলে থাকেন যারা আমাকে ঢাকা থেকে নিয়ে গিয়েছিল এখন তাদের নামে মামলা করতে। মামালা করা সহজ কিন্তু এর ব্যয়ভার বহন করা আমার জন্য কঠিন। তাছাড়া আমি চাইনা আমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে আমার জন্য তাদের কষ্ট হোক।
যে আমাকে ঢাকা থেকে নিয়ে ছিলো মাহমুদার বক্তব্য এমন, ১৭ বছর আগে আমার মা রামপুরায় বাসা ভাড়া থাকতো। আমি যখন তিন-সাড়ে তিন বছরের শিশু। একদিন আমার মা আমাকে পাশের বাসার এক মহিলার কাছে রেখে কোথাও যেনো গিয়েছিল। দুই তিনদিন কেটে গেলোও আমার মা নাকি আর ফেরত আসেনি। তখন মাহমুদা ও আব্দুল হক তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আমাকে শরীয়তপুর জেলার ড্যামুডায় নিয়ে যায় ও তার ভাগিনা হায়দার শিকদার ও আসমা বেগম দম্পতির নিকট আমাকে পালতে দেয়। আমাকে নেয়ার ৬ মাস পর নাকি আমার বাবা-মা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে শরীয়তপুরে চলে গিয়েছিলো। কিন্ত আমি নাকি আমার বাবা-মায়ের সাথে আসতে চাইনি। আমার বাবা-মা ছাড়াও তাদের সাথে আমার একটা ছোট বোন ও বড় ভাই ছিলো, ভাইটির নাম রাজু। সে আরো বলেছে, আমার মায়ের যার সাথে যার বিয়ে হয়েছিল তার নাম ফজলার রহমান। তিনি নাকি হলি ফ্যামিলি হসপিটালে চাকুরী করতেন।
আমি আমার পরিচয় জানতে এবং তার কথার সত্যতা নিশ্চিত হতে ঐ হসপিটালে একদিন গিয়ে ছিলাম। কিন্তু ঐ নামে কোন স্টাফকে খুঁজে পাইনি। তবে হয়তো উচ্চ কোন কর্মকর্তা সাথে কথা বললে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যেতো। তবে মাহমুদার কথা যদি সত্যি হয় তবে কেনো বা কি কারণে আমার বাবা-মা আর ১৭ বছর কোন খোঁজ খবর নেয়নি। সেটাই ভাবার বিষয়। আমার জীবনে যাই ঘটুক না কেন আমি আমার পিতৃ পরিচয় ফিরে পেতে চাই।
[শারমিন আবেদিনের ফেসবুক থেকে নেয়া]