২৮ মে ২০১৯, ১৫:৪০

স্বপ্নের শুরু এখানেই...

  © ফাইল ফটো

বিবর্তন তাত্ত্বিক ডারউইন বলেছিলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। একটি জাতি অগ্রসর হয় তার শিক্ষার আলোতেই। শিক্ষার ইতিহাস যার যত সমৃদ্ধ সে সমাজ ততটাই সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল কুমিল্লার শিক্ষার ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি এলাকাটির আধুনিকায়নের রূপ রেখাই তুলে ধরে। সূচনা লগ্ন যদি ধরা হয় তাহলে ১৩০০ বছর আগের সেই বৌদ্ধ-বিহারের কথা বলতেই হয়।

কুমিল্লার শালবন বিহারে আজ থেকে ১৩০০ বছর আগেই শিক্ষা ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটেছিলো। আধুনিকায়ন বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা সেই বৌদ্ধ বিহারেরই রূপরেখা। বিহার মানে শিক্ষার স্থান। এই কুমিল্লা অঞ্চলকে উপমহাদেশের শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু বলা যেতে পারে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে আবাসন ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলো। শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিলো ১৩০০ বছর আগেই, যখন কিনা বর্তমান সভ্যতা হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড এর চিন্তা ও করতে পারেনি। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে হাজার বছর আগে শিক্ষাকেন্দ্র চালু হওয়ার স্থানটিতে আজকের অবস্থা অন্যরকম। এই অঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার তীর্থ প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬ পাস হয়।

কুমিল্লার কোটবাড়িতে ২০০৬ সালের ২৮শে মে সেই বৌদ্ধবিহারের সন্নিকটেই স্থাপিত হয় দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী এক বছর পরে মাত্র সাতটি বিভাগে ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে এ বিদ্যাপীঠে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।দেশের এই নবীন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে চলতে তের বছর পেরিয়ে আজ চতুর্দশ বর্ষে পদার্পণ করছে ।

কাঁঠালতলা, শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য, সানসেট ভ্যালী, বাবুই চত্বর, কৃষ্ণচূড়া চত্বর, দক্ষিণ মোড়, নবী মামার চা দোকান এ সবগুলো জায়গা প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর স্বপ্নময় জীবন শুনে এবং শুনায়। ক্যাম্পাসের লাল বাহন, নীল বাহন হাজারো শিক্ষার্থীর নিয়মিত স্বপ্ন বহন করে। বঙ্গবন্ধু হল, দত্ত হল, নজরুল হল, ফয়জুন্নেসা হল শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় পরিবার। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার পরিবারের বাইরে এসে যার যার হলকেই নিজের পরিবার বানিয়ে নিয়ে থাকে। সাথে শুরু হয় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আবেগের তীর্থস্থান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমুন্নত করার কর্মযজ্ঞ।

প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার মনের সুপ্ত গহীনে নিজেকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়ে জীবন যুদ্ধে থাকে তেমনি প্রত্যেকের মনোজগতে একটাই বাসনা আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকবে হাজার বছর। নবীন এই বিদ্যাপীঠের শত প্রতিকূলতার মাঝেও অর্জনের কমতি নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন সারা দেশে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা সহ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও শিক্ষকতা করছেন।

দেশের সব নামীদামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রশাসন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে চলেছে এই নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরাটা সবারই চোখে পড়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার এখন একদিকেই চোখ!

গতবছর অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মেঘা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে সবাই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে শত প্রতিকূলতা এবার হয়ত গুছবে। যাতে রয়েছে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরিসহ একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো সুবিধা। সবার এখন একটাই প্রত্যাশা সবার প্রিয় স্বপ্নের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। শুভ জন্মদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখকঃ ফয়জুল ইসলাম ফিরোজ
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।