কৃষি শ্রমিক সংকট নিরসনে যান্ত্রিকীকরন প্রয়োজন
- ইফরান আল রাফি
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৯, ০৪:৪১ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৫১ AM
সাম্প্রতিক কৃষি শ্রমিক সংকট বিষয়টি তৃণমূল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার পেছনের গল্পের কারিগর হলেন কৃষিজীবী মানুষ।
এক জরিপ মতে, দেশের মোট জিডিপির এক চতুর্থাংশ কৃষি সেক্টরে অর্ন্তভুক্ত এবং কৃষি সেক্টরের মধ্যে শুধু শস্য খাতেই এর অবদান ৬০ শতাংশ।কৃষি যান্ত্রিকায়নের ফলে উন্নত দেশগুলোতে কৃষি শ্রমিক নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে যার কিছুটা আভাস আমাদের দেশেরও পাওয়া যাচ্ছে।বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক শিল্পায়ন হওয়ায় কৃষি জমির পরিমান হ্রাস পেয়েছ কিন্তু বিগত ২০ বছরে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়েও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সম্ভব হয়েছে কৃষি যান্ত্রিকায়নের ফলে।
কৃষিতে যন্ত্র ব্যবহারের ফলে ফসল উৎপাদন খরচ যেমন হ্রাস পায় তেমনি ভাবে একটি ফসল থেকে আরেকটি ফসলের মধ্যবর্তী সময় হ্রাস পায়। বর্তমানে কৃষি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মেশিনারি গবেষণার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক জরিপ মতে,বারি গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র ও মাড়াই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে ইউরিয়া সাশ্রয় ও ফসলের ক্ষয় ক্ষতি সাশ্রয় বাবদ ৭৩৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশে জন্য একটি আশার কথা এই যে, কৃষি যন্ত্রপাতির রয়েছে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবহার। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, একটি শেলো টিউবওয়েল এর ইঞ্জিন দিয়ে একজন কৃষক ধান, গম ইত্যাদি ফসল মাড়াইয়ের জন্য মাড়াই যন্ত্র তৈরী করতে পারেন।একইভাবে এ ইঞ্জিনটিই আবার গ্রামীন যান ভটভটি তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে বর্ষাকালে নৌকা চালানোর কাজে।কৃষি শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হচ্ছে ফলশ্রুতিতে শস্য রোপন ও কর্তনের মৌসুমে শ্রমিক সংকট চরম তীব্র আকার ধারন করে।কম্বাইন হারভেস্টার বা রাইস রিপারের মত যন্ত্র সহজলভ্য থাকলে এ সমস্যা সৃষ্টি হতনা।
প্রশ্ন হল তৃণমূল কৃষকদের মাঝে কৃষি যান্ত্রিকীকরন শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব? আমাদের দেশে বহু বছর আগেই যান্ত্রিকীরন শুরু হয়ে গেছে।কৃষক এখন আর চাষাবাদের জন্য হালের বলদ পালন করেনা বরং কাঠের লাঙ্গল জোয়ারের বদলে ব্যবহার করছেন পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর। ধান রোপনের জন্য ব্যবহার করছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ফসল মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করছে থ্রেসার। সাম্প্রতি কৃষিতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার যা দিয়ে একই সাথে ফসল কাটা, মাড়াই ও ব্যাগিং করা যায়।দুঃখের কথা হল আমাদের বেশীর ভাগ কৃষকই দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে যান্ত্রিকায়ন বাস্তবায়নে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদের বিকল্প নেই।অভিযোগ রয়েছে বাণিজ্যেক ব্যাংকগুলো সরাসরি কৃষকদেরকে ঋণ না দিয়ে কৃষিভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে ঋণ প্রদান।ব্যাংকগুলোকে এ চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এ ব্যাপারে সরকারকে আরো নজরদারী প্রদান করতে হবে।কৃষি যন্ত্রপাতির দাম তুলনামূলক বেশী হওয়ার এ ক্ষেত্রে কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তিতে ব্যাংকগুলোর কাছে বড় পরিসরে জামানত প্রদান করতে হয়।সরকারকে আরো আন্তরিক হয়ে বিনা জামানতে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করতে হবে এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উপর আরো ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী (কৃষি অনুষদ),পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।