বিকৃত মস্তিষ্কের সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
ঘুম ঘুম চোখে যখন বুঝতে পারি শিক্ষিত জাতি কিংবা শিক্ষিত সমাজ আজকেও আমাকে মুক্তি দিবে না। তখনি ইচ্ছে করে অন্ধকার কোনো এক কোনে লুকিয়ে পড়ি। খুব ইচ্ছে করে অন্ধকারের সাথে বন্ধুত্ব করতে। কিন্তু স্বপ্নের টানে শিহরিত হয়েই তো আজ ইট-পাথরের গড়া এই অচিন পুরে পাড়ি জমিয়েছি। মিশে গিয়েছি রাস্তার প্রতিটি ধুলো বালির কণার সাথে। ত্যাগ করেছি সেই পরিচিত মুখ, যে মুখ গুলো দেখে প্রতিটি দিনের সূচনা শুরু হতো। কিন্তু আজ ইট-পাথরের শহরকে আমরা যতই শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা উচ্চশিক্ষিত বলি না কেন, সমাজে নারীর প্রতি শিক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে সমাজ যত শিক্ষিত হচ্ছে, সে শিক্ষিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি দিনদিন আরো অধঃপতিত হচ্ছে। এ শহরের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়ে গুলোর সংগ্রামী জীবন কেবল তারাই জানে। পরিবার, সমাজ তাদের আপনজন রেখে এসে এতকিছুতেও যদি পাড়ি জমানো ইট-পাথরের শহরটা তাদের জন্য অনিরাপদ হয় তাহলে জীবন আসলে দূর্ভিসহ হয়ে উঠে।
মূলত প্রত্যেকের স্বপ্নই তাকে এসবের মাঝেও এগিয়ে নিয়ে যায়। ঘুরে ফিরেই যেতে হয় সেই শিক্ষিত সমাজের মাঝে, মিশতে হয় তাদের মাঝে। শুনতে হয় তাদের উন্নত মস্তিষ্কের ব্যবহার। নিশ্চয়ই ভাবছেন কেনো শুধু শিক্ষিত সমাজের শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে কথা বলছি?
রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে এমন হয় না এ ধরেন বুকের দিকে তাকিয়ে থাকা উন্নত মস্তিষ্কের শিক্ষিত ছেলেটাকে যখন জিজ্ঞাসা করি, এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? সে খুব সুন্দর মতো তার সেই উন্নত মস্তিষ্ক ব্যবহার করে উত্তর দেয়, আরে আইডি কার্ড দেখছি।
কর্মস্থলে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গাড়িতে বসা আংকেল যখন শরীরের সাথে ঘেঁসে বসেন, যখন ভদ্র ভাষায় বলি আংকেল একটু সরে বসুন না প্লিজ! তখন সেই শিক্ষিত উন্নত মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আংকেল জবাবে বলবে, শুনো মেয়ে তোমার বয়সের আমারও একটা মেয়ে আছে। তার এই জবাব হলো পরিস্থিতি শান্ত করার মতো যথেষ্ট প্রচেষ্টা। আসলে তারা হলো শিক্ষিত জাতি। পরিস্থিতি শান্ত করার মতো জবাবের কোনো অভাব নেই তাদের মস্তিষ্কে।
এসব চোখ বুঝে সহ্য করেও করা হয়ে উঠে না অনেক সময়। খুব সময় তো ইচ্ছে হয় অনেক কিছু বলে দেই। কিন্তু কই পারছি না তো। কারণ হলো তারা শিক্ষিত সমাজের শিক্ষিত মানুষ। তাদের কাছে শুধু নিজের সন্তানের মূল্যটাই অনেক বেশি। তারাই তাদের নিজেদের সন্তানকে পাঠ্য কেন্দ্রে কিংবা বাসা থেকে বাহিরে পাঠানোর সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আম্মু সাবধানে যেও। হাস্যকর, খুবই হাস্যকর লাগে আমাদের এই শিক্ষিত সমাজের উন্নত কর্মকাণ্ডে।
স্বপ্নের সিংহাসনে আহোরনের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনের কৃতকাজ সম্পূর্ণ করে যখন নিজ বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি, তখন মাথায় ছক তৈরি হয় বিভিন্ন পদার্থের। ম্যাথের ক্যালকুলাসের সূত্র এলোমেলো হয়ে পেঁচিয়ে যায়। রসায়নের মৌলগুলো উত্তেজিত অবস্থায় ছুটতে থাকে। ঠিক তখনি কেউ একজন ব্যস্ত থাকে শরীরের প্রতিটা অংশের দিকে তাকাতে। উন্নত শিক্ষিত জাতি গুলোর চোখ গুলো এতোটাই তীক্ষ্ণ যে, এক নজরে পুরো স্ক্যান করে মনে হয়। তারপর চোখে চোখে যখন নজর পড়ে, তখন সে তার সেই শিক্ষিত জাতির উন্নত মস্তিষ্ক নামক হাতিয়ারটাকে ব্যবহার করে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
দিন শেষে রাত ঘনিয়ে আসলে যখন সারাদিনের সময়ের হিসাব নিয়ে মস্তিষ্ক ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন চিন্তায় ভরা তিন ভাগের দুই ভাগ পূর্ণ থাকে শিক্ষিত সমাজের উন্নত মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ মানুষের আচরণ আর কৃতকর্ম দিয়ে। তাদের এই উন্নত মস্তিষ্ককে তখন ধিক্কার জানানো ছাড়া অন্য কোনো মূল্যবান উপাধি দেওয়া সম্ভব হয় না।
আয়েশা কনিকা
শিক্ষার্থী, কবি নজরুল সরকারি কলেজ