আত্মনির্ভরশীল বনাম কোচিং
কোচিং, প্রাইভেট, হোমটিউটর, বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাচ— কত রকম মাধ্যম আছে আমাদের পড়াশোনার কর্ণধারে। এইগুলো কোথায় পায়, কোন কোচিংয়ে পড়লে ভালো, কোন ব্যাচে ভর্তি হলে নিশ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যাবে, কোন স্যার সবগুলো গুছিয়ে দেন— এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আহার-নিদ্রার কথা পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
তবে এতো বিষয় নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে প্রথমেই জানতে হবে কেন কোচিং? আমরা সাধরণত কোচিংয়ে যাই— ‘‘ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত শিক্ষা যথেষ্ট না হওয়ায় এবং সহজে পাশ করতে নতুন নতুন কৌশল শিখতে। কিন্তু কৌশল রপ্ত করার দায়িত্ব নিজের। এক্ষেত্রে পুরুস্কার প্রাপ্ত কোচিং, একশ জনে নিরানব্বই জন চান্স প্রাপ্ত কোচিং; যতপ্রকার কোচিং হোক না কেনো তা শুধু একজন শিক্ষার্থীকে কৌশলের পথ বাতলে দিতে পারে। কোচিংয়ে শুধু একজন শিক্ষক তার বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্লাস নিবে; শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় বুঝতে না পারলে সে তা বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকে বুঝে নিতে হবে শিক্ষক কতটুকু বুঝিয়েছে আর আমি কতটুকু বুঝতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির জন্য এই সময় বিভিন্ন জেলার গ্রাম-মফস্বল থেকে হাজারো শিক্ষার্থী ঢাকায় পাড়ি জমায়। যার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার স্থায়ী শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলাতে পারে না। যার জন্য তারা ক্লাসের পড়াশোনায় কি যে বুঝে না, তাও তারা জানে না।ফলশ্রুতিতে এরকম হাজারো শিক্ষার্থীর অবশেষে যা পায় তা হচ্ছে, বছর বছর ধরে লালিত স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশা ও স্বপ্ন দেখা পিতা-মাতার বিশাল অঙ্কের টাকার লোকসান।
এতক্ষণ কোচিং নির্ভরতার এ বিষয়টি আলােচনা করা হলো শুধু তাদের কথা ভেবে, যারা মনে করে কোচিংয়ে ভর্তি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিশ্চিত। এবার আসি কোচিং নির্ভরতা নয় বরং আত্মনির্ভরতাই পারে তোমার বিশ্ববিদ্যালয় চান্সকে নিশ্চিত করতে সেই বিষয়ে—
রুটিন মাফিক প্রতিদিন একজন শিক্ষক যা পড়াবে সে বিষয়গুলো বাসায় গিয়ে নিবিড়ভাবে আয়াত্ত করতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কোচিংয়ের পড়া হোমটিউটরের কাছে শেখার আশায় তা জমিয়ে রাখে। এভাবে দৃঢ়ে দৃঢ়ে তাদের আত্মনির্ভরতা হারিয়ে যাবে এবং তাকে পরনির্ভরশীল হতে শেখাবে। আর পরনির্ভরশীলতা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করে।
ক্লাস টেস্টে ভুল হওয়া প্রশ্নগুলোর সমাধানেও নিজের উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। ক্লাস শিক্ষক আগামীকাল প্রশ্নের সমাধান করে দিবে সে ভরসায় থাকলে সময় এবং প্রশ্নের সমাধান আরো বেশি কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে যারা ঢাকায় কোচিং করবে তারা যানজটের কারণে পরের দিনের ক্লাসে পৌছাঁতে পারবে কি না সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে— কোচিংয়ে যা পড়াবে তাই ভর্তি পরীক্ষায় আসবে এরকম বদ্ধমূল ধারণা থেকে বের হয়ে এসে নিজের উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়ের উপর ধারণা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বনির্ভরতাই পারে তোমার আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করতে। পরিশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পিপাসু শিক্ষার্থীদের প্রতি আগাম শুভকামনা ও সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়