কোরআন নাজিলে সম্পূর্ণ হয় আল্লাহর নেয়ামত
কালিমাযুক্ত মানব অন্তরকে দুনিয়ার মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে মুক্ত করতে আল্লাহর সান্নিধ্যের কোন বিকল্প নেই। আর সেটি একমাত্র ইবাদতের মাধ্যমেই সম্ভব। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর যদি সেটি হয় এ মহিমান্বিত গ্রন্থ নাজিলের মাসে তাহলে তো আর কথাই নেই!
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন ‘রমজান মাসই হলো সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের সুস্পষ্ট পথ নির্দেশকারী’। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
এ আয়াতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস রমজানুল মোবারক বলা হয়েছে। সে কারণেই এ মাসকে কোরআনের মাস বলা হয়েছে।কোরআনের আগমনে রমজান মাসের এতই মর্যাদা যে, যখন রমজান মাস আসে তখন আসমান ও জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ হিসেবে রমজান মাস হলো কোরআন নাজিল হওয়ার বার্ষিকী।
সুতরাং, কোরআন নাজিলের বার্ষিকীর এই মাসে কোরআন তেলাওয়াতের সাওয়াব মহা ফযিলতপূর্ণ। মানুষকে আল্লাহ যত নেয়ামত প্রদান করেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত হলো আল কোরআন। কোরআন নাজিল যখন সম্পন্ন হলো তখন আল্লাহ ঘোষণা করলেন: আজ আমি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম। (সূরা মায়িদাহ:৩)
গোটা মানবজাতির জন্য এই কোরআনকে গাইডলাইন হিসেবে প্রদান করতে পেরেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা নিজেই আনন্দিত হয়ে এই রমজানকে অন্য এগারো মাসের তুলনায় মর্যাদাবান করেছেন। এজন্য এ মাসের কোরআন তিলাওয়াতের ফযিলত এতটাই বেশী যে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জিবরাঈল (আ.) রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে নবী করীম (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন পড়ে শোনাতেন। (বুখারী-১৯০২)।
হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, স্বাভাবিকভাবে কোরআন তিলাওয়াতে প্রতিটি হরফে ১০ নেকি করে পাওয়া যায়, কিন্তু রমজানে তা ৭০ গুণ বৃদ্ধি হয়ে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ৭০০ নেকি। সাধারণত নামাজে তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ১০০ নেকি কিন্তু রমজানে নামাজে তেলাওয়াত করলে তা ৭০ গুণ বৃদ্ধি হয়ে সাত হাজার নেকি পাওয়া যায় প্রতি হরফে।
যারা রমজানে কোরআন পড়তে পারেন না তাদের জন্য এ সাওয়াব অর্জনের মহাসুযোগ হলো খতমে তারাবীতে অংশগ্রহণ। মসজিদে হারামসহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মসজিদে এ মাসে ধ্বনিত হয় পবিত্র কুরআন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজ সুন্নত করেছি; অতএব যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হবে; যেমন নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। (নাসায়ী, প্রথম খণ্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা)।
রমজান এলে পূর্বেকার মুসলিম মনীষীরা কোরআনময় হয়ে যেতেন। পবিত্র কোরআনের প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিল অমলিন ঈর্ষণীয় ও সীমাহীন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) প্রতি রমজানে একষট্টি বার কোরআন খতম করতেন (তারিখে বাগদাদ)। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) রমজানে ষাট খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং ষাট খতমই নামাজে তিলাওয়াত করতেন (সিয়ারা আ’লামিন নুবালা, ১০/৩৬)। ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) ইমাম বুখারী (রহ.) এর আমল সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি রমজান মাসে প্রত্যেক রাতে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১১/৩১)।
কাজী নজরুল বলেছিলেন,
ইসলাম সে তো পরশ-মানিক তারে কে পেয়েছে খুঁজি!
পরশে তাহার সোনা হলো যারা তাদেরেই মোরা বুঝি!
তো যারা ইসলামের পরশে সোনা হয়ে ইতিহাস সৃজন করেছে তাদের রমজানও কেটেছে কোরআনময়। রমজানের বিশেষত্বই কোরআন। প্রতি রজনীতে কোরআন খতম দিয়ে যেন আমাদেরকে এই মহান শিক্ষাই দিয়েছেন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম বুখারী (রহ,) সহ অন্যরা।
তাই এ রমজানে বেশী বেশী কোরআন তিলাওয়াত, এর অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবন করে নিজেদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন এবং কুরআনের আলোকে সমাজ গঠন অতীব জরুরী।
আসুন কুরআন নাজিলের এ মাসে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা নিজেদের জীবনকে ‘কোরআনময়’ করে তুলি।
লেখক: মিনহাজুর রহমান আরমান
শিক্ষার্থী: ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ