‘পাঠ্যক্রমে ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ শতকরা ৯৮ ভাগ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সেসময়ে আওয়ামীলীগকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দেন। ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সমবেত উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালজয়ী ভাষণ দেন। যা ছিল বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির মুক্তির জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা। মহান নেতার এ কালজয়ী ভাষণ পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি।
১৮ মিনিটের এ কালজয়ী ভাষণ ছিল একটি নিপীড়িত জাতির মুক্তির নিশান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণের মাধ্যমে পাকিস্তান শাসন আমলে বাঙালি নিপীড়ন, বৈষম্য ও অত্যাচারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তেইশ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার মানুষের অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস, তেইশ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এ ভাষণ, নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে জয়বাংলার সৈনিকে রূপান্তরিত করার মধ্য দিয়ে লাভ করে মহান স্বাধীনতা।
ঐতিহাসিকদের মতে, ১০ লক্ষ লোকের সমাগমে ৭ মার্চের এ ভাষণ বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষকে মুক্তির তরে শত্রুর বিপক্ষে লড়াই করার আহ্বান করেছে। ‘তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর’ এ কথা মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অন্যায় ও শত্রুর বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান করেন। আর ঐতিহাসিক এ ভাষণের উপর ভিত্তি করে বাঙালি জাতি নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দুই লক্ষ নারীর লাঞ্ছনার বিনিময়ে লাভ করেন লাল সবুজের পতাকা।
ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছে ৭ মার্চের এ ভাষণ। তবে সম্প্রতি বাঙালির ত্যাগ ও সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরুপ ৭ মার্চের ভাষণকে জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই ভাষণ নতুন প্রজন্মের কাছে অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার জন্য অনুপ্রেরণার বস্তু হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া প্রতিবছর এ দিনটিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক আলোচনা হয়। জাতির জনকের জ্বালাময়ী এ ভাষণ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির বিকল্প নেই।
কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মহামূল্যবান এ ভাষণ পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যদি এটা করা যায়, তবে আরো ব্যাপকভাবে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের প্রারম্ভিককালে ১৮ মিনিটের এ ভাষণের মাধ্যমে বাঙালির উপর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে ধারণ লাভ করতে পারবে। বাঙালি যে এক ঐক্যবদ্ধ জাতি প্রয়োজনের তাগিদে মাতৃভূমির ও স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারে হাসিমুখে। পাঠ্যক্রমে এ ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হলে নবাগত শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের মহামন্ত্রে উজ্জীবিত হবে।
আগামী ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এ ভাষণ অন্তর্ভুক্তির জন্য দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা এখন সময়ের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যানন্দিনী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।
লেখক: ইফরান আল রাফি
শিক্ষার্থী: কৃষি অনুষদ,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়