সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরীতে সিয়ামের ভূমিকা

  © ফাইল ফটো

প্রতিবছর দীর্ঘ এগারো মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেই পবিত্র রমজান মাস রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়ে থাকে। সিয়াম সাধনা শুধু উপবাস তথা খাওয়া দাওয়া, পানাহার ও কামভাব থেকে বিরত থাকার নাম নয়। সকল প্রকার ঝগড়া বিবাদ, যাবতীয় অশ্লীলতা ও গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নাম সিয়াম। এ মাসে কেউ অশ্লীল গালাগাল, কটূক্তি বা ঝগড়াঝাঁটি করলেও তার সাথে বাক্য বিনিময় না করে ধৈর্য্য ধারণ করে সুন্দর ও মাধুর্যমন্ডিত আচরণ করার শিক্ষা দেয়।

রাসুল (সাঃ) বলেন, রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ, যখন তোমাদের কেউ রোজা রাখে,সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের ন্যায় কাজ না করে। কেউ যদি গালি দেয় বা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়, সে যেন বলে আমি রোজাদার। (সহীহ বুখারী-১৯০৪, সহীহ মুসলিম-১১৫১)

সিয়ামের মাধ্যমে ধনী গরীব, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, অধীনস্থ ও সহকর্মী মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। এ মাসে আপন গোলাম(কর্মচারী)ও অধীনস্থদের সাথে সুন্দর আচরণ ও ভাল ব্যবহার করা, তাদের ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা, তাদের কাজের বোঝা হালকা করে সাধ্যানুযায়ী বেতন বাড়িয়ে দেওয়াও অনেক সওয়াবের কাজ। কারণ রাসুল (সাঃ) বলেন, এই মাস (রমজান মাস) সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। (মিশকাত)

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশী, সহকর্মী, পথিক ও দাস-দাসীর সাথে ভাল ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অহংকারী-দাম্ভিককে পছন্দ করেন না’ (সুরা আন-নিসাঃ৩৬)

ব্যক্তির আত্মাকে অহংকার ও হিংসা বিদ্বেষের কু-প্রবৃত্তির দাসত্ব দূর করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মানুষকে আত্মসংযমী মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে উদারতা,ন্যায়পরায়ণতা ও পরোপকারীতার শিক্ষা সিয়াম সাধনা থেকেই উপলব্ধি হয়ে থাকে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, সবরের মাসের (রমজানের) রোজা এবং প্রতিমাসের তিন দিনের রোজা (আইয়্যামে বীয) অন্তরের হিংসা বিদ্বেষ দুর করে দেয়। (মুসনাদে আহমদ)

দলমত, ধর্ম বর্ণ সাধ্যানুযায়ী সবার পাশে থেকে সকলকে সহযোগিতা করার প্রেরণা রোজার মাধ্যমে উপলব্ধি হয়। এই মাস গরীব ও মিসকিনের প্রতি দয়া ও সদ্ধ্যবহারের মাস। আশে পাশের সবার খোজ খবর নিয়ে তাদের খাওয়ার ও পানাহারের ব্যবস্থা করা ধনীদের দায়িত্ব। নিঃস্ব ও অসহায়দেরকে যাবতীয় সহায়তা করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব-ই নয়, এটি রাসুলের নির্দেশও বটে৷ রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় সে ঐ রোজাদারের সমান সওয়াব পায়, কিন্তু এর ফলে রোজাদারের সওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না (তিরমিযী-৭৩৫)

সর্বোপরি রমজানের সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বন্ধনের শিক্ষা বাকী এগারো মাসের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমাজ জীবনে প্রতিফলন করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। যেই শিক্ষার মাধ্যমে হানাহানি রাহাজানি মুক্ত একটি সাম্য, মৈত্রীর ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

লেখক: আতিক হাসান
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ।


সর্বশেষ সংবাদ