নোয়াখালী বিভাগ আর সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয় একই!

মারুফা প্রীতি
মারুফা প্রীতি  © টিডিসি ফটো

নোয়াখালী জেলাকে বিভাগ আর সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার স্বপ্ন দেখা একই। এ দুইটার মাঝে কোন ভিন্নতা নেই। যেটা নিয়ে ভুক্তভোগীদের থেকেও উৎসুক জনতার আগ্রহটা বরাবরই একটু বেশি। যেমনিভাবে, নোয়াখালীবাসীদের থেকেও অন্য জেলার মানুষের আগ্রহটা বেশি নোয়াখালীকে বিভাগ হিসেবে দেখার জন্যে।

অনেক সময় মানুষকে ব্যাঙ্গ করতে দেখা যায়।  গরীব বলে কক্সবাজার যাই, বড়লোক হলে তো নোয়াখালী যেতাম। নোয়াখালী দেশ চাই, নোয়াখালী প্ল্যানেট চাই, নোয়াখালীর ভাষা অস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এসব ছাড়াও নোয়াখালী জেলার আলোচিত ইস্যু নিয়েও বেশীরভাগ সময় মানুষকে ট্রল করতে দেখা যায়।

অথচ খবর নিয়ে দেখবেন, নোয়াখালীবাসী এসব বিষয় নিয়ে একটুও মাথা ঘামায় না। যেমন ধরেন, সব মাছ কিন্তু কমবেশি বিষ্ঠা খেয়ে বেঁচে থাকে। এক্ষেত্রে, নামটা শুধুমাত্র পড়বে  পাঙাশ মাছের উপর। এছাড়া ধরেন, নোয়াখালীর মানুষ তাদের আঞ্চলিক ভাষায়  পানিকে ‘হানি’ শাককে ‘হাগ’ পানকে ‘হান’ বললেও কিছু উৎসুক জনতার এসবেও চুলকানি থাকে। তারা এসব আঞ্চলিক ভাষা নিতে পারেন না। কেনো, কোন মানুষের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষা থাকতে পারে না! 

সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীও আসলে চায় না প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত, সুশীল রাজনীতির কারিগর, মেধাবী বিচরণের চারণভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চায় পরিপূর্ণ ন্যাশনাল, না হয় পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া এখন যে একটা সময় এসেছে, এখানে সাতকলেজের শিক্ষার্থীরা নিজের পরিচয় ন্যাশনাল তো দিতে পারবেই না,  অন্যদিকে পাক-পবিত্র সাতকলেজের বোর্ড ঢাবির পরিচয় দিলেও সাতকলেজ ছোটলোক! তবে কিন্তু সাত কলেজের সবার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে, সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এখানে কেউ নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায় না, আর এদিকে পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় পাওয়ার যোগ্যতাও সাতকলেজের নেই। ওরা ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে চান্স পেয়েছে। এখন তো আবার নতুন বিভাজন আবিষ্কার করা হয়েছে। সাতকলেজে দুই ধরনের শিক্ষার্থী। ন্যাশনাল থেকে রূপান্তরিত এবং সাতকলেজে এডমিশন টেস্ট দিয়ে চান্স প্রাপ্ত। এটাই হয়তো ভিন্ন ফাঁক-ফোঁকর। সাত কলেজের শিক্ষার্থী আর নোয়াখালীর মানুষ যথা উপযুক্ত যোগ্যতার কারণে পরিপূর্ণতা চেয়ে আসছে। আর মাঝখান থেকে বাকি কিছু সুশীল সমাজ নিজেদের ক্ষমতা আর শিক্ষার অভিনব পদ্ধতি দিয়ে এ দুইটা ব্যাপারকে নিয়ে ইচ্ছে মতো ট্রলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি দুইটা ইন্সিডেন্টের সাথেই জড়িত। লক্ষ্মীপুর আর নোয়াখালী যে আলাদা এ দেশের সু-শিক্ষিত কিছু মানুষকে সেটা চেনানো বা জানানো সম্ভব না। তেমনি সাতকলেজ যে আলাদা কলেজ, সেটা সেইম কিছু মানুষ মানতেই চাইবে না। ‘লক্ষ্মীপুর যে নোয়াখালী নাহ, আর সাত কলেজ যে অধিভুক্তি চায়না’ এটা আমার সু-শিক্ষিত সমাজকে বোঝানো বড় দায়।

সুতরাং, দয়া করে লক্ষ্মীপুরকে নোয়াখালী আর সাতকলেজকে ঢাবি ভাববেন না, ভাবা বন্ধ করুন। আমাদেরও ইচ্ছে নেই লক্ষ্মীপুরকে নোয়াখালী, আর সাতকলেজকে ঢাবি ভাবার। আর আমারও ব্যক্তিগত কোন খায়েশ নেই ইডেনকে ঢাবি বলে চালিয়ে দেওয়ার। যেমনটা নেই, লক্ষ্মীপুরকে নোয়াখালী বলে চেনাবার।নিজ দায়িত্বে অন্তত ম্যাপ দেখে হলেও চিনে নিবেন। আমরা যা চাইনা দয়া করে আপনারা সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভালো। সবার আত্মসম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখুন, তা কখনো নিজ হাতে নষ্ট করবেন না।

নোয়াখালী শ্রদ্ধার জায়গা, ঢাবিও ব্যতিক্রম নয়। তাই বলে নিজের পিউর পরিচয় আমি লুকাতে যাবো না। আমি ইডেন, আমি লক্ষ্মীপুর। আমি চাই নোয়াখালী উন্নতি করুক, ঢাবিও এগিয়ে যাক। কিন্তু দয়া করে উৎসুক সুশীল সমাজ, আপনারা আমাদের পরিচয়ের ইজ্জতের গোড়ায় পানি ঢালবেন না। সমাজ এবং জীবন দুটোই সুস্থ রাখুন। নিজের মানসিকতার পরিচয় দিন। শিক্ষার্থীরা চায় পরিপূর্ণ ন্যাশনাল, না হলে পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। 

দেখেন, সাতকলেজ পরিপূর্ণ ন্যাশনাল ছিলো,  এখন অধিভুক্ত। কিন্তু সাতকলেজের শিক্ষার্থীরা চায় না অধিভুক্তি, তারা পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চায়। দিলে দিবেন না হলে প্লিজ জোর করে লক্ষ্মীপুরের আর নোয়াখালীর মতো সাতকলেজকে ঠেলে ঢাবির মধ্যে ঢুকিয়ে দিবেন না। দুটোরই নিজস্ব পরিচয় আছে। দয়া করে সবার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যটুকু বজায় রাখার সুযোগ তো করে দিবেন।

রিকশাওয়ালা মামাকে ইডেন বললে মামা আপনাকে ইডেনের সামনেই নামিয়ে দিবে, ঢাবির সামনে না। ঠিক সেভাবে বাসওয়ালা মামা আপনি লক্ষ্মীপুর বললে লক্ষ্মীপুর নামিয়ে দিবে, নোয়াখালী নাহ।

নোয়াখালী এবং ঢাবি দুটোই শ্রদ্ধার জায়গা।  তবুও নিজের আলাদা একটা পরিচয় তো আছে।

দেশ কিন্তু আমার না আমাদের, সম্মানের জায়গাটুকু রাখুন, নিজ হাতে নষ্ট করবেন না। এটা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জায়গা। এখানে আমরাই আমাদের উপস্থাপক। কেউ একটা ভুল করলো আপনি সেটা না করুন ভালো কথা কিন্তু মেনে নিবেন না। অন্তত পরের প্রজন্মকে ভুল শেখার/দেখার/বুঝার থেকে বিরত রাখুন। এই সময়টাতে না শুধরালে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলকে লালন করবে। তখন এই লজ্জা আমার আপনার সবার। 

 

লেখক: ইডেন মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী। 


সর্বশেষ সংবাদ