তরুণদের ভাবনায় ‘বাবা দিবস’
বাবা একটি শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সুরক্ষা, নির্ভরতা, আত্মত্যাগ আর এক নিঃশব্দ ভালোবাসা। তিনি হয়তো মায়ের মতো সহজে আবেগ দেখাতে পারেন না, কিন্তু তাঁর নীরব উপস্থিতিই সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে ওঠে। বাবার ভালোবাসা থাকে কাজের মাঝে, দায়িত্বের ভাঁজে, প্রতিদিনকার নিরব সংগ্রামে। আজ বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের নানা মন্তব্য এবং ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ডিআইইউ প্রতিনিধি - নুর ইসলাম ।
বাবা হলেন নিঃশব্দ আত্মত্যাগের প্রতীক
“একজন বাবা একশো শিক্ষক অপেক্ষা অধিক।” - জর্জ হারবার্টের এই কথাটি যেন বাবা নামক ছায়াটির গভীরতা বুঝিয়ে দেয়। শৈশবের প্রতিটি পদক্ষেপে যিনি ছায়ার মতো আড়ালে থেকে পথ দেখান, নীরবে সহায়তা করেন, তিনিই বাবা। শিশু মনোবিজ্ঞানে জানা যায়, “শৈশবে সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো বাবার সুরক্ষা।” এই সুরক্ষার বোধটা কখনো আঁচলে বাঁধা যায় না, কখনো শব্দে ধরা পড়ে না, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে রয়ে যায়।
বারাক ওবামা একবার বলেছিলেন, “আমার বাবা আমাকে সবচেয়ে বড় উপহারটি দিয়েছেন - তিনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন।” বাবার এই নিঃশব্দ আস্থা, কঠোরতার আড়ালে ভালোবাসা, কখনো চাওয়া হয় না কিন্তু সব সময় থেকে যায়। হৃদয়ের সরল ভাষায়, “বাবা মানে দিনের শেষে নিশ্চিন্তে ঘরে ফেরা,চুপ করে পাশে বসে থাকা এক বিশাল আশ্রয়।”
আজ যখন আমরা বাবা দিবস পালন করি, তখন শুধু একজন মানুষকে নয়, বরং একটি অনুভূতি, একটি জীবনের কাঠামো, একটি আত্মত্যাগের নামকে স্মরণ করি যার ছায়া থাকলেই জীবন শান্ত, আর না থাকলে পৃথিবীটা একটু বেশি একা হয়ে যায়। প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবার ভূমিকা যেন অদৃশ্য এক নিরাপত্তাবলয়। তিনি হয়তো মায়ের মতো আবেগে ভাসেন না, কিন্তু তার নীরব উপস্থিতি, তার কঠিন মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোমলতা, সন্তানদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে অবিচল সঙ্গী হয়ে থাকে। বাবা কখনো সকালে ঘুম ভাঙার আগে বেরিয়ে যান, রাত গভীর হলে ফিরে আসেন কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য তার পরিশ্রমের হিসাব কেউ রাখতে পারে না।আমাদের সমাজে বাবার আবেগ প্রকাশের সুযোগ অনেক সময়ই সীমিত থাকে। অনেক বাবা হয়তো কখনো বলেন না, “ভালোবাসি”, কিন্তু সন্তানের পড়ার খরচ জোগাতে, সন্তানের স্বপ্ন পূরণে নিজের প্রয়োজনগুলো চেপে যান। সন্তানের মুখের হাসির পেছনে থাকেন তিনি নিজেই অদৃশ্য একজন রূপকার হয়ে।
বাবা শুধুই অর্থনৈতিক বা সামাজিক নিরাপত্তার প্রতীক নন, তিনি নৈতিকতার ভিতও গড়ে দেন। ছোট্ট একটি গল্প, একটি সৎ সিদ্ধান্ত, বা কোনো ভুলের জন্য কঠিন এক শাসন - এইসবই বাবার পক্ষ থেকে সন্তানের জীবনে জীবন্ত পাঠ হয়ে ওঠে। একজন ভালো বাবা তার সন্তানের চরিত্র গঠনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক, দিকনির্দেশক ও অনুপ্রেরণা। বাবারা নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করে সন্তানের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন। প্রতিকূলতা, ক্লান্তি কিংবা ব্যর্থতার ভার নিজের কাঁধে নিয়ে দিনের পর দিন নীরবে সংগ্রাম করে যান - শুধু যেন সন্তান ভালো থাকে, নিরাপদে বেড়ে ওঠে। অথচ এই ভালোবাসা কখনো উচ্চারিত হয় না, প্রকাশ পায় না শব্দে জেগে থাকে শুধুই কাজে, দায়িত্বে আর ত্যাগে। আজ বাবা দিবসে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি পৃথিবীর সকল বাবাকে ।
মো: রবিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাবা - নীরব ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বটবৃক্ষ
বাবা ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। ছোটবেলায় অনেক অভিযোগ ছিল, “বাবা আমাদের সময় দেন না, শুধু মসজিদের ইমামতি আর মাঠের কাজ নিয়েই ব্যস্ত।” তখন বুঝিনি, ভালোবাসার একটা রূপ হলো দায়িত্বে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। বাবা হয়তো পাশে বসে গল্প বলেননি, কিন্তু চুপচাপ ঘামে ভিজিয়ে গেছেন আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে। তার ১৫০০ টাকার চাকরি আর মাঠের কঠিন পরিশ্রমে লুকানো ছিল আমাদের জন্য পাহাড়সম ভালোবাসা। আজ যখন একটু বড় হয়েছি, তখন বুঝি, বাবা মানেই নির্ভরতা, একটা ছায়া, যে নিজের কষ্ট গোপন করে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে জানে। বাবা জীবনের সেই বটবৃক্ষ, যিনি ঝড়-ঝাপটায় নিজে কষ্ট পেয়ে আমাদের আগলে রাখেন। বাবা দিবসে বাবাকে শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন শ্রদ্ধা জানানোই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
তাহমিদ তারিক, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
এক নিঃশব্দ ছায়ার প্রতি ভালোবাসা
বাবা দিবস মানে শুধু একটা নির্দিষ্ট দিন নয়—এটা এক গভীর কৃতজ্ঞতার উপলক্ষ। বাবা, আমার জীবনের সবচেয়ে শক্ত ভরসার নাম। যিনি নিজের সব চাওয়া-পাওয়া চুপিচুপি থামিয়ে দেন, আমাদের মুখের হাসির জন্য দিনের পর দিন ছুটে চলেন। তাঁর ভালোবাসা কখনো গর্জে ওঠে না, শুধু নীরবে রক্ষা করে। ছোটবেলায় মুঠো ধরে হাঁটা শেখানো সেই মানুষটাই আজো দূর থেকে আমার পথ দেখিয়ে দেন—শব্দ ছাড়া, শব্দের চেয়েও গভীর এক ভাষায়। অনেক সময় মনে হয়, সাহস করেও কখনো বলা হয়নি, “বাবা, তোমার জন্যই আজ আমি স্বপ্ন দেখতে শিখেছি।” তুমি না থাকলে হয়তো আমি আজ কিছুই হতে পারতাম না। তাই আজ বাবা দিবসে শুধু বলি—ধন্যবাদ বাবা, সব কিছুর জন্য। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে নির্ভরতার নাম। ভালোবাসি তোমাকে, চিরকাল নিঃশর্তভাবে।
ইমরোজ জামান ইমন, শিক্ষার্থী, তিতুমীর কলেজ।
আড়ালে থাকা ভালোবাসার গল্প
আজ বাবা দিবস। সারা বিশ্বে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারটি বাবাদের সম্মান আর ভালোবাসা জানানোর জন্য বিশেষভাবে পালিত হয়। এই দিনে বিশেষ করে আমার বাবার কথা বলা দরকার, যিনি আমার চোখে নায়ক। তিনি একজন ছোট ব্যবসায়ী। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই আর অর্থকষ্টের মাঝেও তিনি থেমে থাকেননি। নিজের নতুন জামা না কিনে বছরের পর বছর আমাদের নতুন জামা কিনে দিয়েছেন। আমরা যাতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ি, সে জন্য দিনরাত কষ্ট করেছেন, ঋণ করেছেন, কিন্তু আমাদের চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি। এ বাবার গল্প শুধু আমার বাবার নয়, হাজারো বাবার গল্প। বাবারা আমাদের জীবনে নীরব নায়ক। তাঁরা সবসময় আড়ালে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের ভালোবাসা শব্দে প্রকাশ হয় না, দেখা যায় না; অনুভব করতে হয় হৃদয়ে। সন্তানরা অনেক সময় বুঝতে পারে না এই নিঃশব্দ ত্যাগের গভীরতা। কিন্তু বাবা দিবস যেন সেই উপলক্ষ, যখন সন্তানেরা অন্তরের গভীর থেকে বলতে পারে— “বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায় বাবা।” এই বাবা দিবসে আসুন, আমরা আমাদের বাবাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং প্রতিদিন তাঁদের ভালোবাসি, সম্মান করি।
কাওসার আহমেদ, শিক্ষার্থী,ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।