০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫

যদি সব ইন্ডিয়ানদের প্ল্যানেই হয়, তাহলে জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লব বলেন কীভাবে?

  © ফাইল ছবি

আসিফ নজরুল সাহেবের প্লী শুনলাম। ১৯৭২ কিংবা ৭৫ এ যা হতো—চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। যাকে ইচ্ছা ইন্ডিয়ার দালাল বলবেন এবং তার পরে একটা মানুষকে যেভাবে পারেন অপদস্থ করবেন।

যেকোনো মানুষ এখন ডেমোক্রেসির কথা বললেই সে  ইন্ডিয়ার দালাল। পুরা বিএনপিই হল ইন্ডিয়ার দালাল। সরকারে যারা সাধারণ ঘরের ছেলে যেমন আসিফ নজরুল কিংবা শফিকুল ভাই—ইন্ডিয়ার দালাল। তোরা কেন উপদেষ্টা হবি? সরকারে যাবি? ৪ মাস যেতে দেন—আসিফ-নাহিদকে তার সহপাঠীরাই এই কথা জিজ্ঞেস করবে।

পুরা ডিস্কাশনই এখন ও কেন খাবে কেন্দ্রিক? দেয়ার ইজ নো অনার।

আসিফ নজরুল ৪ তারিখ রাতে আমাদের সাথে হাজার হাজার মানুষের সাথে জুম মিটিং করছিলেন। প্র্যাকটিক্যালি উনি জীবন ভিক্ষা করছিলেন। এখন শুনি উনি নাকি ঐ রাতেই ইন্ডিয়ানদের সাথে গোপনে প্ল্যান করছিলেন। আর যদি সব ইন্ডিয়ানদের প্ল্যানেই হয়—তাহলে জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লব বলেন কীভাবে?

আমি জানি শফিকুল ভাই পুরা জুলাই মাসে কী করেছেন। যখন বাংলাদেশ পুরা দুনিয়া থেকে কাটআউট ছিল—ওনার কাছে ইন্টারনেট ছিল। উনি ছিলেন আমাদের কন্ট্যাক্ট। বাকীদেরকেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। এরকম একজন ভদ্রলোক সাংবাদিক বাংলাদেশে বিরল।

আজকে তাকে গণশত্রু বলা হচ্ছে।

মির্জা আলমগীর যেদিন সকালে তার স্ত্রীকে সকাল ৭টায় ক্যান্সার অপারেশানের জন্য নিয়ে যাবেন—সেদিন রাত তিনটায় পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে ঢুকালো। জেল থেকে বেরিয়ে স্ত্রীকে কেমো দিতে সিঙ্গাপুর নিয়ে গেলেন—আর ফেইসবুকে গুজব ভাসছে ইন্ডিয়ানদের সাথে গোপন মিটিং এ গেছেন। বাঙালির একটা সহজাত নীচতা আছে। এর সাথে পেরে ওঠা মুশকিল। আপনাকে চুপ থাকতে হয়। কিন্তু চুপ থাকলে কোনো লাভ হয় না। ছেসড়ারা জিতবেই।

যেই লোক ১৫ বছরে হাসিনার নাম, ইন্ডিয়ার নাম মুখে আনতে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতো—নিজের বৌ-বাচ্চাকে আমেরিকান নাগরিক বানিয়ে সারাদিন আমেরিকাকে গালায়—এইসব নাদুস-নুদুস কাপুরুষ এখন সার্টিফাই করে আলমগীর সাহেব ইন্ডিয়ার দালাল।

এখনও ভিডিয়ো আছে আমার—ইলেকশনের আগের কথা। ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে—একটু দেখে বলেন তো আপনার আমাকে ইন্ডিয়াপন্থী মনে হয় কি না। এক সপ্তাহ যায় নি—ক্লিয়ারলি বলছি যে আমাদের সন্তানদের ইন্ডিয়ার ভয় থেকে বের হতে হবে—আল্লাহকে যথেষ্ট মনে করুন। টিভিতে বলেছি ইন্ডিয়ার সমালোচনা—বিস্তর লিখেছি।

আমিও ইন্ডিয়ার দালাল।

ভাই আমি ক্ষমতা দিয়ে কী করবো? আমি তো কোনোদিনও আপনার কেকের ভাগ চাই নি। যা আমাকে আল্লাহ দিয়েছেন— এটাই আমার যোগ্যতা ও চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি।

হাজার হাজার মানুষ আমাকে চেনেন। বিএনপি আগেও ক্ষমতায় ছিল। পাব্লিকলি বলছি। একটা লোক দেখান আমি কিংবা শামা জীবনে কোনোদিন বলেছি আমাকে দুই টাকার ব্যবসা বা সুবিধা দেন। একটা লোক দেখান - আমি এই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিবো। এই সরকারেও আমি বহু মানুষকে চিনি। কোনোদিন কাউকে বলেছি কি না দেখান যে আমার নিজের জন্য এই সুবিধাটা করে দেন ভাই। আমার সিভিটা অমুককে পৌঁছে দেন।

আমি সারা জীবন যা বলেছি এখনও তাই বলছি। আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেন। বিএনপিকে ভোট দিয়েন না। শুধু নির্বাচন হতে হবে। জনগণ ঠিক করবে কে সরকারে যাবে। সংস্কারের পরেই নির্বাচন হবে। শুধু গণতন্ত্র থাকুক। ২০১৩ তে বলেছি—এখনও তাই বলছি।

কিন্তু যেহেতু আমি নির্বাচনের কথা বলি, গণতন্ত্রের কথা বলি—সেহেতু আমি ইন্ডিয়ার দালাল। প্রথম থেকে এই সরকারকে আনকন্ডিশনাল সাপোর্ট করছি—সকল পার্টির মধ্যে ঐক্যের কথা বলছি।

যারা এই ঐক্যের বিরুদ্ধে তাদের একটাই কথা—সেন্ট্রিস্টদেরকে, ঐক্যবাদীদেরকে এবং সর্বোপরি বিএনপিকে কেমনে ভিলিফাই করা যায়।

আমি বুঝি এই খেলাটা। খেলাটার কলকাঠি কীভাবে নাড়াচাড়া হয় - সেটাও জানি।  আমার কাছে খুব ভালো খবর আসে ভাই। কিন্তু এই খেলাটায় আমি পার্টিসিপেট করি না কারণ আপনি কত নীচ, কত কাদা ছোড়াছুড়ি করতে পারেন - তার প্রতিযোগিতা হল বাংলাদেশের বর্তমান ফেইসবুক এক্টিভিজম। যাদের আমি মাত্র তিন মাস আগে আমার ভাই বলে জ্ঞান করেছি - তাদের সাথে কাদা ছোড়াছুড়ির আমার কোনো দরকার নাই।

যারা ১৫ বছর জেল-জুলুম খাটল—তারা ইন্ডিয়ার দালাল, আওয়ামী লীগের বন্ধু। আর যারা ফেইসবুকে একটা লাইক দিতে গেলে ২৭ বার প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতো - তারা দেশপ্রেমিক।

দালালি করার তো একটাই কারণ যে আমাকে একটা সুবিধা দিন। কার কাছে এই সুবিধাটা কোনোদিন চেয়েছি - আমাকে দেখান। বাংলাদেশের এমন কোনো রাজনৈতিক ট্যাগ নাই - যেটা আমি খাই নাই। এগুলা আমার মনে তেমন লাগে না। আমি ঠিক—এটাও কোনোদিন দাবি করি না। বাট আমি দালাল? এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলেন? একটা ৭৬ বছরের ভদ্রলোককে নিয়ে যা শুরু হয়েছে—দেখে আমি বিস্মিত হই।

আশ্চর্য এই দেশ - আশ্চর্য এই দেশের মানুষ। ৪ মাস ঐক্য ধরে রাখার অনার নাই।

লেখক: উদ্যোক্তা গবেষক ও লেখক।