বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল থাকা জরুরি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আর ছুটতে হবে না—এমন প্রত্যাশা নিয়েই ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের এ প্রত্যাশা অনেকটা পূরণও হয়েছিল। তবে নানা অজুহাতে এ পদ্ধতির পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালগুলো। এতে আবারও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও আর্থিক ব্যয় বাড়বে।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন না করে সমস্যাগুলোর যৌক্তিক সমাধান করুক। গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে গরীব পরিবারের সন্তানরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। সামান্য কিছু ফি পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এ পদ্ধতি বাতিল হলে অর্থের অভাবে অনেকেরই ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ হবে না। এ অবস্থায় বৈষম্যের সৃষ্টি হতে পারে।
ভর্তির ভোগান্তি কমাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত বা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থার দাবি করে আসছেন। এ দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তবে নানা বাধার মুখে মুখ থুবড়ে পড়ে এ উদ্যোগ। এখন ভাঙতে চলেছে তিনটি গুচ্ছ।
অভিযোগ আছে, এর পেছনের কারণ হল বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের অর্থ আয়। ভর্তি বাণিজ্য ও কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্য অনেকেই সমন্বিত পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে। সেটা অনেকেই চান না বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা চালুর কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একবার আবেদন করে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছেন। এর ফলে তাকে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতেও হচ্ছে না। অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলেছে।
আমার মতে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি- এভাবে আলাদাভাবে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমে আসবে।
অনেক আগে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েটে (সে সময় যথাক্রমে বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে এগুলো পরিচিত ছিল) একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়।
আমরা মনে করি, ইউজিসি পাঁচটি বা ছয়টি গুচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। আশা করব, দেশের সব ধরনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পদক্ষেপ মেনে নেবে।
আমরা প্রত্যাশা করছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নেবে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৃহত্তর স্বার্থে তা মেনে নেবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বার্থে সমন্বিতই হোক বা গুচ্ছভিত্তিক, এ ধরনের ভর্তি পদ্ধতি চালু থাকাটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জরুরি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এটি অনুধাবন করবেন।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, আসপেক্ট সিরিজ; লেখক কেমিস্ট্রি প্লাস।
ইমেইল: mhalichemist@gmail.com