তারেক রহমানের শিক্ষা সংস্কার ভাবনা
বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন এক অমূল্য রত্ন, যিনি দেশের ভবিষ্যতের পথে আলোকিত সিঁড়ি নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর ১৯ দফা রূপরেখার মাধ্যমে তিনি নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করতে চেয়েছিলেন, যা শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। অধ্যাপক মুস্তফা বিন কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিটি ও বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষার প্রসার, দেশের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, তার দূরদৃষ্টির প্রতিফলন। গণশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি শিক্ষাবঞ্চিতদের মাঝে আলোর রেখা ছড়িয়ে দেন। সেই সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদানও স্মরণীয়; তাঁর প্রচেষ্টায় শিক্ষাক্ষেত্র নকলমুক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করাসহ নানা দিকে উন্নতি আনা সম্ভব হয়েছে। এভাবে শহীদ জিয়ার দেখানো পথেই দেশের শিক্ষা ও সামাজিক সমৃদ্ধির ভিত্তি শক্তিশালী হয়ে ওঠার পথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তায়, যা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হবে। মানুষটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে না থেকেও নিরলস কাজ করেছেন শিক্ষাক্ষেত্রে।
তারেক রহমানের স্বপ্ন একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠন করা, যেখানে আগামী প্রজন্মের কেউ নিরক্ষর থাকবে না। তাঁর উদ্যোগে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি’ কর্মসূচি চালু করা হয়, যা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথ রোধ করে। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষা মানুষের জীবনের মূলমন্ত্র, আর তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, অর্থাভাবে কোনো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হবে না। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসচ্ছল মেধাবীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করে তিনি তাদের স্বপ্নের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার বক্তব্য, “তোমরা একা নও,” এই প্রতিশ্রুতিই যেন ছাত্রদের মধ্যে নতুন আশা ও সাহসের সঞ্চার করে।
আরও পড়ুন: কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপি: মির্জা ফখরুল
তারেক রহমানের মানবিকতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে গল্প সত্যিই অসাধারণ। তিনি শুধু মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি দিতেন না, বরং গোপনে বহু গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ভারও কাঁধে নিয়েছিলেন—এটি এমন একটি বিষয় যা অনেকের অজানা ছিল। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগগুলি ছিল প্রচারের ঊর্ধ্বে, কিন্তু এর মাধ্যমে অসংখ্য ছাত্রের জীবন বদলে গেছে। যখন তিনি কারাগারে বন্দী, তখনও তাঁর সাহায্যের হাত থেকে অনেকের পড়ালেখা থেমে যায়নি, যা তাঁর সাহসী ও নৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রমাণ করে।
একটা বই থেকে পড়া একটা ঘটনা বলা যায়, এক অসহায় ছাত্র এমরান, যে আর্থিক সংকটে পড়ে পড়ালেখা বন্ধ করতে বসেছিল, হঠাৎ জানতে পারে তারেক রহমানের সহায়তার কথা। আবেগের স্রোতে ভেসে গিয়ে এমরান বনানীর কার্যালয়ে হাজির হয়, নিজের কৃতজ্ঞতা জানাতে—এমরান জানতে পারে নেতার কারাগারে থাকার কথা, তবুও তাঁর মাঝে দেখা করার এক ব্যাকুলতা! দু'হাত তুলে তিনি দোয়া করেন, যেন তাঁর স্বপ্নের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এক নতুন আলোর সন্ধান পেলেন। এটা তো শুধু একটি উদাহরণ, এমন হাজারো সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান, শিক্ষার আলো ফুটিয়েছেন বহু অসহায় শিশু কিশোরের মুখে।
শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে মাস দশেক আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “প্রিয় দেশবাসী বর্তমানে দেশ কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে এর একটি মাত্র উদাহরণ দিলেই দেশের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠবে সমগ্র জাতি আমরা সকলেই দেখতে পারছি ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের অন্ধকারে রেখেই শিক্ষার্থীদের উপর তথাকথিত জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এরমধ্যে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরকে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ নেই কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাদের উপরে হামলা মামলা হয়েছে অনেক অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।” সরকারে না থেকেও সবসময় তিনি অক্লান্ত নয়নে তাকিয়ে ছিলেন দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের দিকে। নিশ্চয়ই স্বপ্নের দেশটার শিক্ষাক্ষেত্র তিলে তিলে ধ্বংস হতে দেখে তাঁর হৃদয়ও ব্যথিত হয়েছে।
এর আগে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করেছে। তারেক রহমান এই বিষয়েও যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এটা নিয়ে তিনি দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও শিক্ষকদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলেছেন। তিনি বহুবার বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্যে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তিনি বারবার একটি কথা বলেছেন, “কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না।”
এখন কথা হচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার তো প্রয়োজন, কিন্তু সংস্কার কীভাবে করব আমরা? সংস্কারের জন্য একটা রূপরেখা তো প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। সেখানে শিক্ষা নিয়ে একটা পয়েন্টে বিস্তারিত বলা আছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদা-ভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হইবে। একই মানের শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হইবে। যোগ্য, দক্ষ ও মানবিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদন খাতে গবেষণা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ক্রীড়া উন্নয়ন ও জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা হবে।”
আরও পড়ুন: সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা এখনও প্রধানমন্ত্রী: রুমিন ফারহানা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা রূপরেখায় শিক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগগুলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। এই পরিকল্পনা শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য দূর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, যা বর্তমান সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে সুরক্ষিত রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনার দিগন্তকে প্রসারিত করবে। ছাত্র সংসদের নির্বাচন ব্যবস্থা ছাত্রদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, যা তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দের অঙ্গীকার আমাদের তরুণ প্রজন্মকে একটি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেবে। ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের জাতীয় পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করবে, এবং যুবসমাজের সুস্থ ও সৃজনশীল বিকাশে সহায়তা করবে।
এই রূপরেখার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে ধর্মভিত্তিক পদ্ধতিকে কীভাবে সংযুক্ত করা যায় তা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীদের বাস্তবধর্মী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তোলার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তারেক রহমানের এই উদ্যোগগুলি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে, যা শুধু দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বরং একটি মানবিক ও নৈতিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি আমাদের সকলের জন্য এক নতুন আশা ও অনুপ্রেরণার উৎস, যা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে এক অগ্রদূত হতে পারে।