সংবিধান ও আইনের দোহাই দিয়ে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় নস্যাৎ করা হয়েছে
গণঅভ্যুত্থান এবং গাঠনিক ক্ষমতার (Constituent Power) সম্পর্ক না বোঝা এবং আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় গাঠনিক ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকট অজ্ঞতা এবং আলচনা-পর্যালোচনার অনুপস্থিতি বিশাল ক্ষতি করেছে। এতো বিশাল আত্মত্যাগের পরেও সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে যাওয়ার পেছনে এই অজ্ঞতা প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণ আন্দোলন গণশক্তির রূপ নেয়। বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রক্ষমতার বিপরীতে একেই জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা (Constituent Power) বলা হয় অর্থাৎ জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে নিজেদের নতুন করে 'গঠন' করবার ক্ষমতা। এই গাঠনিক ক্ষমতার বিপরীতেই সাংবিধানিক প্রতি বিপ্লব সংঘটিত হয়। অর্থাৎ সংবিধান ও আইনের দোহাই দিয়ে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। যা আমি বারবার বলেছি। ইতিহাসে একটি জনগোষ্ঠী এই ধরনের সুযোগ কালেভদ্রে পায়।
গণঅভ্যুত্থানকে শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ নতুন করে গঠন করবার পরিবর্তে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনস্থ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি অবৈধ সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার বানানো হয়েছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
গণঅভ্যুত্থান ঘটবার আগে অনেকেই বলতো গণঅভ্যুত্থান একটি দুঃস্বপ্ন। আমার 'গণঅভ্যুত্থান ও গঠন বইটি বেরোয় ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালে তার ফল আমরা দেখেছি।
এখন বারবার গাঠনিক ক্ষমতা এবং জনগণের অভিপ্রায়কে সামষ্টিক ও মূর্ত রূপ দেবার জন্য তৃণমূল স্তর থেকে গাঠনিক প্রক্রিয়ার (Constitutiive Process) কথা বলছি। দয়া করে ওপর থেকে বাহাত্তরের সংবিধানের মতো উপনিবেশিক কায়দায় গণবিচ্ছিন্ন এলিট শ্রেণির ধ্যান ধারনাকে 'সংবিধান' বলে চাপিয়ে দেবেন না। তাছাড়া রাষ্ট্র নিছকই আইনী ধারণা না। আগে রাষ্ট্র বুঝুন।
আসুন আমরা পরস্পরের সাথে বলি এবং জনগণকে সচেতন করে তুলি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার