শিক্ষকরা হবেন পথপ্রদর্শক, বন্ধু ও অনুপ্রেরণার উৎস
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষক শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান বিতরণকারী নন; তিনি একজন পথপ্রদর্শক, পরামর্শদাতা এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের গাইড। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে কেমন আচরণ ও দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করে? তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া মতামত তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক।
শিক্ষক হবেন ইতিবাচক রোল মডেল’
একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষাদান। তাই শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষাদানে আন্তরিক হতে হবে। এছাড়া শিক্ষক হবেন জ্ঞানী, ধৈর্যশীল, শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নশীল ও সহানুভূতিশীল, নিয়মানুবর্তী, সময়ানুবর্তী এবং মোটিভেশনাল। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনের ভাষা উপলব্ধি করা। ‘শিক্ষার্থীরা কিসের অভাবে পিপাসার্ত আর আমি সেই পিপাসা নিবারণে কতটুকু সচেষ্ট’ এই বিষয়টি শিক্ষকের মনে জাগরুক থাকা দরকার। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পতিত হন। এসব সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হবে একজন শিক্ষকের মধ্যে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি শিক্ষকদের কাছ থেকে নৈতিকতাও শিখে। তাই নৈতিক গুণে গুণান্বিত হয়ে একজন ইতিবাচক রোল মডেল হিসেবে শিক্ষককে আবির্ভূত হতে হবে।
নাঈম আহমদ শুভ
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক হবেন পরামর্শদাতা ও অনুপ্রেরণার উৎস
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এমন শিক্ষক চাই, যিনি ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে বন্ধুসুলভ ও আন্তরিকতার মাধুর্যে গড়ে তুলবেন। যিনি শিক্ষার্থীদের কাছে কেবল একজন শিক্ষক নন, বরং পরামর্শদাতা ও অনুপ্রেরণার উৎস হবেন। তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে এবং মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে, এবং তারা নির্ভয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
শিক্ষককে অবশ্যই গবেষণার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। গবেষণায় সম্পৃক্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সামনে নতুন জ্ঞান, চিন্তাভাবনা ও উদ্ভাবনের দিগন্ত উন্মোচন করতে পারেন। এ ধরনের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন এবং বাস্তব জীবনে নতুন সমস্যার সমাধান খুঁজতে অনুপ্রাণিত করেন।
এছাড়া, একজন আদর্শ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও একাডেমিক অসুবিধাগুলো বুঝতে সক্ষম হবেন। শিক্ষার্থীদের যদি পড়াশোনার চাপে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে বা কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে, শিক্ষক সেগুলো সমাধানে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মান পাবেন এবং তার চরিত্র হবে অনুকরণীয়। শিক্ষার্থীরা তাকে সমাজের আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে দেখবে এবং তার কাছ থেকে জীবনের মূল্যবোধ শিখবে।
মো আমান উল্লাহ
শিক্ষার্থী,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের পথপ্রদর্শক ও বন্ধুর মতো
"সাধারণ শিক্ষক বলেন, ভাল শিক্ষক বুঝিয়ে দেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক করে দেখান। মহান শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন।"– উইলয়াম আর্থার ওয়ার্ড
শিক্ষক, একটি জাতির কারিগর ও স্বপ্নদৃষ্টা। শিক্ষক সেই পরশপাথর যার ছোয়ায় শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞানের আলোর প্রকাশ ঘটে। একজন আদর্শ শিক্ষক শুধু শেখান না বরং শিক্ষার্থীদের মাঝে শেখার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের পথ দেখান, তাদের অনুপ্রাণিত করেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আমাদের শিক্ষকরাও যেন শিক্ষার্থীদের রঙিন স্বপ্ন দেখতে উদ্ধুদ্ধ করেন, অভিভাবকের মত তাদের আশার আলো দেখাবেন। একজন আদর্শ বন্ধুর মত শিক্ষার্থীদের অন্তরের কথা বুঝবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক শুধু ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রসারিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
কৃষ্ণেন্দু সাহা
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক হবেন অভিভাবকের মতো দায়িত্বশীল
আমার কাছে একজন আদর্শ শিক্ষক হলো সে যে বাবার পরে দায়িত্বগুলা ঠিকভাবে পালন করে। আমি যখন নিজের পরিবার ছেড়ে, বাবা-মা কে ছেড়ে, অনেক দূরে একটা অচেনা শহরে জ্ঞান অর্জনের জন্য আসি তখন আমার এই শিক্ষকের উচিত বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা-মা এর সন্তানের প্রতি যে দায়িত্বগুলা থাকে সেগুলা ও সঠিকভাবে পালন করা। কেননা এখানে তারাই আমার এক মাত্র অভিভাবক। তাই শিক্ষকের কাজ শুধু আমাদের একাডেমিক জ্ঞান দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা না আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা করা এবং আমাদের জীবনকে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা।
আমরা যত বড়ই হই না কেন, আমাদের কখনোই আমাদের শিক্ষকদের অবদান ভুলে যাওয়া উচিত নয়। শিক্ষকরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছায়ার মতো আমাদের পাশে থাকেন, ঠিক যেন একটি গাছের ছায়ার মতো, যা আমাদের জীবনকে প্রশান্তি দেয়। শিক্ষকরা সমাজের মেরুদণ্ড। তাদের ছাড়া একটি সুন্দর সমাজ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কল্পনা করা যায় না। তাই আমাদের উচিত সবসময় তাদের সম্মান করা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
আলিম খান ফারহান
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়