বাংলাদেশে রাজনৈতিক অর্থনীতি ও রাজনীতি বনাম পরিবারতন্ত্র
বাংলাদেশের খ্যাতিমান মার্কসবাদী সমালোচক ও সমাজতাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর বলেছিলেন-‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রাক-পুঁজিবাদী, আধা-সামন্তীয় ও লুটেরা পেটিবুর্জোয়া অধ্যুষি‘ (প্রথম আলো,২০১৮)। অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে আরেকটু ভিন্নমাত্রা যোগ করে বলেন: "এখানে সামন্তবশেষ বলতে আর কিছু নেই। আশির দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লুম্পেন পুঁজিবাদী গোষ্ঠী ও কতিপয় কোম্পানির হাতে বন্দি"। (সাক্ষাৎকার ,২০২১)। আর এই বন্দী ও বন্ধকের পাহারাদার পুঁজির লগ্নি কারবারি; সাথে দেশীয় শাসকশ্রণি। ফলে দেখা যায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কি মিশ্র, কি সমাজতান্ত্রিক, কি দেশীয় কাঠামো এর কোনোটাই প্রকৃতপক্ষে এখানে পরিলক্ষিত না, অবশিষ্ট কোনোটাই নেই।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে আর নিজেদের ভারসাম্য বজায় রাখতে শাসকগোষ্ঠীকে সবসময় প্রতিবেশী সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বলয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোকে পূজিত করে চলতে হয়েছে বা হচ্ছে। আর এতে করে যে নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড়িয়েছে তা হলো পলিটিক্যাল ইকোনমি তথা রাজনৈতিক অর্থনীতি-রাজনীতি। ধনতন্ত্রের সম্প্রসারিত নতুন স্তর মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও নিউ লিবারেল অর্থনীতির কৃষ্ণ গহ্বরে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এর ভুক্তভোগী সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ সীমান্তের কাঁটাতার শক্ত কর কিন্তু বাজার খোল,দ্বার খোল,প্রবেশটা মসৃণ করো,লুটপাট করো,তারপর আস্তে করে চলে যাও।
সমস্যায় পড়লে গণতন্ত্র রপ্তানি করো,জঙ্গিবাদ ভিতর থেকে আমদানি করো, জাতিগত দাঙ্গা বাড়াও। বেশি প্রয়োজনে শাসক পাল্টাও। নিজেদের আরো ভালো অনুগত লোক বসাও। উন্নয়নের নামে চু্ক্তিতে আবদ্ধ করো। উপদেশ বাণী শোনাও। নিজেদের বক্তব্য অনুগত শাসকদের মুখ দিয়ে নিসৃত করে জনগণকেও শোনাও- আপনার ভালো আছেন। আপনারা জানেন দেশের শিক্ষা, বাসস্থান, অবকাঠামো, চিকিৎসা প্রভৃতি উন্নয়ন হচ্ছে, আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। সকল অপশক্তি, জঙ্গিবাদ, উন্নয়ন বিরোধীদের বয়কট করুন হেনতেন অমুক তমুক।
অথচ কৃষি ও শিক্ষায় বরাদ্দ কমে, চিকিৎসায় বরাদ্দে ভাটা পড়ে দিনদিন। বেঁচে থাকার বাসস্থানের নিশ্চয়তা কমিয়ে ফেলা হয়। মৌলিক প্রয়োজনগুলোর চেয়ে অমৌলিক প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ে। সামরিক খাত, ভোগ্যপণ্য,অস্ত্র-প্রযুক্তি আমদানি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শক্ত অবকাঠামো তৈরিতে বাজেট বছরের পর বছর চক্রহারে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সবকিছু প্রাইভেট করে দাও। যে পারে সে সবকিছু কিনবে। যে না পারে, সে কিনবে না তাকে মরে যেতে হবে। তবে ট্যাক্স দিতে হবে। উন্নয়ন বন্ধ করা যাবেনা। মুখ বন্ধ করতে বল প্রয়োগ করো; নিজেদের পছন্দের গণমাধ্যম ছাড়া বিশ্লেষণী গণমাধ্যমের উপর খড়গকৃপা নামাও, নতুন ঘটনার রটনা বাড়াও,দৃষ্টি নিক্ষেপ করো অন্যদিকে। বুদ্ধিবাদীদের হেকেপে ডাকো, প্রজেক্ট দাও।
আর এ সবকিছু ঘটছে মূলত রাজনৈতিক অর্থনীতির কল্যাণে। এ কল্যাণ নিশ্চিত করতে দেশীয় শাসকদের হতে হয় ফ্যাসিস্ট, চরমমাত্রায় একনায়কতন্ত্র,বিদেশি প্রভুদের প্রতি শতভাগ অনুগত গোবেচারা। রাষ্ট্রে জনগণের দাবি কি, মতামত কি, মানুষ কি চায়,কেন চায়, কীসের জন্য চায় তার কোনো তোয়াক্কা করে না। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে- যায় যদি যাক প্রাণ, দল আর দলপ্রধান হীরক রানি হলেন ভগবান - এই হলো মূল নীতি। এই রাজনৈতিক রীতিনীতি বিশ্বাসী ''বাংলাদেশের বিএনপি -জামাত, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এরা বিভিন্ন সাইনবোর্ড দৃশ্যমান হলেও এক ও অভিন্ন আদর্শে উজ্জীবিত।'' ( বাঙালি কাকে বলি, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি)।
রাজনৈতিক অর্থনীতি যদি লগ্নি পুঁজির আমদানির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পুঁজির বিকাশ করতো তাহলে তা হতো ভিন্ন বিষয়। এক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই পুঁজির বিরোধিতা করিনা। আমরাও চাই রাষ্ট্রীয় পুঁজির বিকাশ হোক, রাষ্ট্র শক্তিশালী হোক। কিন্তু বদৌলতে যা ঘটে তা শোষণ ও লুটপাট। আবার এই লুটপাট, পুঁজি পাচারের জন্য পাচারকারীদের নিরাপত্তা দিতে তাদের আছে দক্ষ সামরিক বাহিনী,পুলিশ, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র, আইনের নানান ধারা ও তারা, সাথে একশ্রেণির চটকদার সুশীল টাউট-বাটপার । যেমনটা বাঙালি সংস্কৃতি ( সংস্কৃতি, ভাষা পরিবর্তন,গ্রহণ বর্জন না থাকলে মৃত হয়ে যায়) রক্ষা করার নামে আছে সাংস্কৃতিক পাহারাদার।
এঁরা চালচলনে ভদ্র, কথা বার্তায় ছানা মিষ্টির রস ঝরে অথচ ষোলআনা মিচকে শয়তান। আবার আমলাতন্ত্র ও আমলা শ্রেণি নিজেদের সংগঠিত করতে, কর্তৃত্ব বজায় রাখতে "গণবিরোধী শাসনকেই টিকিয়ে রাখে। এরাও বুর্জোয়াদের মতো ব্যক্তিপুঁজির বিকাশ বোঝে, বৈষম্য জারি রেখে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আইন ও ক্ষমতা প্রয়োগকেই নিজেদের অস্তিত্বের শর্ত বলে ধরে নেই সংগত কারণেই। তাদেরও মন,দেহের টান দেশের প্রতি ততটা না, যতটা বিদেশের প্রতি" ( বাঙালির জাতীয়তাবাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি)
অথচ যে কৃষক,শ্রমিক ঋণের টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যা করে, পাহাড়-সমতল এর পৈতৃক ভিটা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষেরা উচ্ছেদ হয়, বাগদা ফার্মে আগুন লাগানো হয়, পর্যটন শিল্পের নামে পাহাড় টু পাহাড় জ্বালিয়ে ফেলা হয়, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টি করা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যের আকাশচুম্বী দাম বাড়ে, গবেষণায় বন্ধ করে শিক্ষা- চিকিৎসাকে মুনাফা নির্ভর প্যাকেজে রূপান্তরিত করা হয়, দেশের তেল-গ্যাস-বন্দর-খনিগুলো ডলার সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে সজ্ঞানে গোপনে চুক্তির আওতায় তুলে দেওয়া হয় তখন আমলাশ্রেণি, দেশ-সংস্কৃতি পাহারাদারদের আমরা বিচলিত হতে দেখি না। হালুয়া রুটির ভাগে, লোভে এরা তখন খুশিতে গদগদ করে। বুর্জোয়া শাসকের সুরেই এরা কথা বলে - মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা বদ্ধপরিকর। অথচ সীমান্তের ১০ ফুট ফাঁকা জায়গায় সীমান্তরক্ষী দিয়ে মাদক প্রবেশ বন্ধ করতে পারেনা, ১লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইলের ভেতরে মাদক নির্মূল করতে হাস্যকর অভিযান চালায়।
আশির দশকের পূর্বে বাংলাদেশে এমনকি সাবেক পাকিস্তান আমলেও এখানে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথাচাড়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এই শব্দের আমদানি হয়েছে নব্বই দশকের শেষ দিকে। আর তা ছিল মূলত ডলার সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও তার সাঙ্গ পাঙ্গনদের লালিত পালিত বিশেষ জাতীয় দেশীয় অস্ত্র । বিশেষত মুসলিম দেশগুলো ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণে আমেরিকা এই গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী প্রস্কি যুদ্ধ হিসেবে। পরবর্তীতে আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বিস্তার হয়েছে বিস্তৃত আকারে। বাংলাদেশের ভূমি- আবহাওয়া - হাজার বছরের সংস্কৃতি- সামাজিক মূল্যবোধ- নৃতাত্ত্বিক সংমিশ্রণে বাঙালির মনস্তাত্ত্বিক গঠন এসব জঙ্গি,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উগ্রবাদীতা বিরোধী।
এখানে বিদ্রোহী মনোভাব আছে সত্য কিন্তু নিজ গোত্রের মানুষকে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে গণহারে বছরের পর বছর হত্যার মনস্তাত্ত্বিক গঠন নেই। মানুষের মধ্যে সমন্বয়ন্বাদী চিন্তা এখানের মূল ব্যঞ্জনা। আরবের রুক্ষ মরুভূমি - জলবায়ু মানুষকে যেভাবে তিরিক্ষি স্বভাবের করে তুলে বাংলার জলবায়ু সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। মূলত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট সরকার গঠনের পর থেকেই এই জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির মতো একে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিরোধীমত দমনে জঙ্গি শব্দের ব্যবহার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্ড।
উল্লেখ্য বিএনপি-জামাত জোট সরকার (২০০১-২০০৬) রাষ্ট্রীয় মদদে রাজশাহী বাগমারায় বাংলা ভাইকে কেন্দ্র করে জেএমবি,মুফতি হান্নান দিয়ে হরকাতুল জিহাদ গোষ্ঠী তৈরি করে। এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দল নির্মূল এবং কমিউনিস্ট নিধন করা। কাউন্টার-ইনকাউন্টার দিয়ে কমিউনিস্ট হত্যার মিশন তাদের সফলও হয়েছিল বটে কিন্তু বাঁধ সাধে পরবর্তীতে। অবশ্য এর পেছনেও ছিল মার্কিন মদদপুষ্ট বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পলিটিক্যাল ইকোনমি ও রাজনীতি। কারণ জন্মগত আদর্শিকভাবে বিএনপি জন্ম ক্যান্টনমেন্টে,জামাতের জন্ম সাম্প্রদায়িক গোঁড়া পালে। আর উভয়ের সাথেই যোগাসাযুজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট বিরোধী ব্লকে। আর আওয়ামী লীগ ভারতঘেঁষা তাঁবেদার। বদরুদ্দিন ওমর বলেছিলেন- "বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নাই; আছে পরিকল্পিত রাজনৈতিক সহিংসতা। প্রতিটি হামলার পেছনেই থাকে রাজনীতি অথবা লুটপাট ( সাম্প্রদায়িকতার সংকট) "।
উনি হিন্দুদের আসপেক্টে কথাটা বলেছেন। আর ঐতিহাসিকভাবে সত্য এই - পুঁজিবাদ সবসময় সামন্তবাদ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী , জাতিগত নৈরাজ্যকে সবসময় সমর্থন দেয় নিজেদের স্বার্থে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, নাইজেরিয়া, সুদান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মরক্কো,মিশর, লিবিয়া, ইরাক, জর্ডান, আলজেরিয়া, মৌরতানিয়া, বলিভিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া প্রভৃতি জনগণের দুর্দশা ও বঞ্চনার আজও কোনো শেষ নেই, সরকার পাল্টায় অথচ কোনো স্থায়ী মুক্তি নেই। যখন যে শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছে পরিবর্তনের মাধ্যমে কেউ ব্যবস্থা পাল্টাতে ভূমিকা নেয়নি৷ বরং ক্ষমতায় থাকতে বৈদেশিক নীতিকে আরে দৃঢ় সমর্থন ও সহযোগিতা করে চলেছে। শাসকের রং পাল্টালেও ব্যক্তি ও আদর্শ নিঃসন্দেহে অপরিবর্তিত থেকেছে।
ক্ষমতাহীন দল থেকে বিতাড়িত হয়ে ক্ষমতাবান শাসকদলে ঠাঁই নিয়েছে। এদের মূল সিদ্ধান্ত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র , অর্থ সংস্থা, বিদেশি প্রতিষ্ঠান, সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্রগুলো দিয়ে থাকে। যার উপরে দেশীয় জাতীয়তাবাদী বুর্জেয়াদের ( বিএনপি, জামাত, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য) বিন্দুমাত্র কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এরা রাজনৈতিক বিক্ষোভ, গণ- প্রতিবাদের সম্মুখীন হলে জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না; যতটুকু যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা থাকে বিদেশিদের সাথে। দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্ব থাকছে ওরাই। প্রেসক্রিপশন থেকে ঋণ সবই দিচ্ছে। থাকছে মারাত্মক সব বিধিনিষেধ, বিধানমালা। "সার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকছে না। এ এক মহাবিপর্যয়। প্রাকৃতিক তো অবশ্যই নয়, তা মানবসৃষ্ট। এ অবস্থাকে বলা চলে রাজনৈতিক স্বেচ্ছামৃত্যু( অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত)"। বিদেশি পণ্য আসছে দেদারসে। বাড়ছে ভিনদেশি ভোগপণ্যের চাহিদা। মার খাচ্ছে দেশীয় পণ্য,শিল্প।
শুধু যে পণ্য আসছে তা নয়; চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও। মগজ দখল করার মধ্য দিয়ে বাজারও হচ্ছে দখল। এ যেন নতুন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আয়োজন। অনুগত শাসককে ক্ষমতায় বসাতে না পারলে অবরোধ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে করে ফেলছে অকার্যকর। তাঁরাই আবার নানাবিধ সংস্থার মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত করে রেখেছে। টাকার দাম যত কমছে,ঠিক ততই বাড়ছে জনগণের ঋণের বোঝা। চাপে পড়ে জনগণের জীবনযাত্রা দুর্দশাগ্রস্ত । দিকভ্রান্ত হয়ে নিম্নমধ্যবিত্তকে পরিণত হতে হয় শ্রমিকে। গ্রাম ফাঁকা হয়, চাপ বাড়ে শহরের উপর। জনগণ ভাবে এই মোর কপালের লিখন,ভাগ্যের নির্মম পরিহাস.......৷
বিএনপি-জামাত জোট,আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি উভয় দলগুলোই বিভিন্ন সময়ে এই যোগাযোগ সামঞ্জস্যতা জন্যই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল। সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি কিছুদিন আগে বলেছিল- ৮ম সংসদ নির্বাচনে আমরা ভারতে গ্যাস দিতে আপত্তি করেছিলাম বিধায় তখন সরকার গঠন করতে পারিনি ( প্রথম আলো, ২০২৩)। পরে
আওয়ামীলীগ যখন নবম জাতীয় সংসদ গঠনের পর থেকে তীব্র ভারতঘেঁষা নীতিতে অগ্রসর হয়ে মার্কিন বিরোধিতা রেখে চীনা সামঞ্জস্য ভারসাম্যে বিভিন্ন সমঝোতা, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বন্দর নির্মাণ, রামপাল,মাতারবাড়ি,পদ্মা,মেট্রোরেল প্রভৃতিতে অর্থ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার আড়ালে সম্প্রসারণবাদীরা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে দৃশ্য-অদৃশ্য হস্তক্ষেপ করে ভোট লুটপাট করে কর্তৃত্ব বজায় রাখছে; দেশে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে সিলেকশন,দমন-পীড়ন,মামলা দায়ের করাসহ জনমতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় আসীন; তখন বিএনপি
তার নিজেদের পূর্বের ভুল সরাসরি উগড়ে দিয়েছে জনগণের সামনে। বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে বলছে-তারা ভারত বিরোধিতা থেকে বের হয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিতে চাই,চীনের সাথে জোরদার করতে চাই পুরোনো সম্পর্ক ( প্রথম আলো,২০২৪)। প্রধান দুই দলের এসব বক্তব্য স্পষ্ট করে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের ড্রাইভ এদেশের কোনো শাসকগোষ্ঠীর হাতে নেই। এরা শুধু দৃশ্যমান ননীর পুতুল। বৈশ্বিক পলিটিক্যাল ইকোনমি ও রাজনীতির মুখপাত্র ছাড়া আর কিছু না। বিনিময়ে বাংলাদেশকে দুধেলা গাভীর মতো বেচা কেনা করে দলের একটা অংশ বিদেশে বেগম পল্লি বানায়। পক্ষান্তরে দীর্ঘ ৫৩ বছরেও দেশে জনগণের দুর্দশার কোনো কমতি হয়নি। দুর্নীতি ঠেকানো যায়নি, বৈষম্য কমেনি বরং মাত্রায় বেড়েছে সবকিছুতে। বছরের পর বছর জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। অধিকার বঞ্চিত হয়ে পুঁজি উৎপাদনের মেশিন, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণ। আর এতে মজা মারছে আওয়ামী, বিএনপি, জামাত,জাতীয় পার্টি পরিবারতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত স্বজাতিপ্রীতি গজা ভাই, আমরা
বাংলাদেশে ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-জনতার আন্দোলন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন লুটপাট করা হয়েছে। যে গিয়েছে লঙ্কায় সে হয়েছে রাবণ। আন্দোলন ভাগিয়ে নিয়েছে ধান্দাবাজরা। বসেছে পিণ্ডি,দিল্লি, মস্কোর অনুগত দেশীয় লোকেরা। পাচার হয়েছে পুঁজি, মানুষ হয়েছে শ্রম বিক্রির মেশিন। শাসক পাল্টিয়েছে,লোক পল্টি খেয়েছে। সিস্টেম বদল হয়নি। বিকাশ হয়নি উৎপাদনের। মুক্তি ঘটেনি এই জনপদের সর্ব মানুষের।
২০২৪- এবার তাহলে অন্য কেউ যেন আন্দোলন ভাগিয়ে নিয়ে না যায়। ২০২৪ এসে মানুষ এখন নতুনত্ব চাই সাম্যের, বৈষম্যহীন, জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে।
লেখক: প্রভাষক ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)।