শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন জরুরি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন জরুরি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন জরুরি  © সংগৃহীত

দীর্ঘ এক মাস আন্দোলনের পর পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের। দলীয়করণের ফলে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাঙ্গনে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর এ চিত্র দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এসব কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে পদত্যাগ ও সংস্কারের দাবি। ঘটছে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাও। কেউ কেউ এ পরিস্থিতিকে ‘বিশৃঙ্খলা’ বলছেন। 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপ দৃশ্যমান হলেও শিক্ষা খাতে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল কলেজগুলোতেও বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্টের পর দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষও পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অনেক জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে অনেককে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১১ আগস্ট রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় ও সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানমকে জোর করে পদত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। 

এছাড়া গত ১৮ আগস্ট আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়ার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। 

এ সকল ঘটনাকে অনেকেই নৈরাজ্য আখ্যা দিলেও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে লেজুড়বৃত্তিক ক্ষমতায় নিয়োগ, যোগ্যদের অবমূল্যায়ন ও বিভিন্ন অসৎ উপায়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের চেয়ারে বসেছেন অনেকে। কিছু ঘটনা ব্যতিক্রম থাকলেও গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে এ সকল অনিয়ম ছিল লক্ষণীয়।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় দৃশ্যমান বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হলো মাধ্যমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সরকারি কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষায় অনিয়ম অবহেলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জে চাকরি করেছেন। সেখানে তাঁর শ্বশুরবাড়িও। এরপর সাবেক চিফ হুইপের সুপারিশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে বিবেচিত ঢাকা সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন পান। এর পর থেকে তিনি ছয় বছর ধরে ঢাকাসহ ১৭ জেলার সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহে চাকরি করা অবস্থায় সাময়িকভাবে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি।

সেখানে আরও বলা হয়, দীপু মনির সময় মূলত ইইডি নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রধান কার্যালয়ের ডেস্ক-১-এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম সরদার। বদলি-পদোন্নতিসহ সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদপুরে বাড়ি হওয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দীপু মনির বাসভবন মেরামতে খরচেরও অভিযোগও রয়েছে।

এসব জায়গায় একটা বিষয় লক্ষণীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ যে স্বৈরশাসনের তল্পিবাহকের ভূমিকায় ছিলেন না তা নয়। এছাড়াও নিয়োগে দুর্নীতি, যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ ও দলীয় পরিচয়ের জন্য জোর করে দায়িত্বে থাকা পূর্বের কোনো,শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করা ও বাধ্যতামূলক অবসরের মত অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগ কোনোটিই কম গুরুতর হয়। একটি রাষ্ট্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে বঞ্চিত ও নিপীড়িতদের বিচার পাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।

এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কমিশন গঠন করে অযোগ্যদের বাধ্যতামূলক অবসর, অপরাধীদের পদাবনতি সহ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও যোগ্যদের মূল্যায়ন পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকারদের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ