বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে

ইমরান জমাদ্দার
ইমরান জমাদ্দার   © সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন আর কোটার মধ্যে নেই। একথা আশা করি আপনারা সবাই বুঝে গেছেন। কোটা আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তারা সবাই বিএনপি-জামাত-শিবির নয় এটা যেমন সত্য, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে তাদের সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ আছে সেটাও সত্য। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে গেছে। তারা শিক্ষার্থীদের দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন করানোর সর্বাত্মক অপচেষ্টা করছে।

যারা ভিন্ন মতাবলম্বী তারা সরকার পতন অতীতেও চেয়েছে, এখনো চাইছে। কিন্তু অতীতে কখনো তাদের সাথে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। তাই তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা সরাসরি সরকার পতনের আন্দোলনে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। 

এত মৃত্যু, এত ধ্বংস, এত নাশকতা!  সব দায় তাদের। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী কখনো একজন পুলিশের উপর হামলা করতে পারে না, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করতে পারে না। শিক্ষার্থীরা দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কঠোর অধ্যবসায় নিয়ে পড়াশোনা করে, জ্ঞানার্জন করে। জ্ঞানের আলো আলোকিত করে, অন্ধকার নয়। 

কারফিউ ঘোষণা হয়েছে ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও ২৩ জুলাই সরকার মেধায় ৯৩% কোটা সংরক্ষণ করে  প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ২৩ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ফলে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল থাকার সময় বাড়তে থাকে। কিন্তু ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করার পরের দিন ২ আগস্ট শুক্রবার কারফিউ শিথিলের মধ্যেই আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়। 

এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে পুনরায় এই আন্দোলন কারা করছে? খেয়াল করলে বুঝা যাবে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর তারা শুধু একটি প্রেস দিয়েই প্রতিবাদ জানায়। রাজপথে তারা সরাসরি কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। তারা নিজেদের ব্যানারে আন্দোলন না করলেও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রাস্তায় নামে। তারা আবারও শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিতে থাকে, নিজেরা রাস্তায় নেমে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ায়। এরপরে তারা দেশের অন্যান্য স্থানেও নাশকতার চেষ্টা করে, হামলা ভাঙচুর চালায়। খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য হত্যা করে। মূলত তারা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের প্রতিশোধ নেয়। সরকার পতনের উস্কানিসহ গণভবন দখল করার পরিকল্পনা করে।

বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় নেই প্রায় দুই দশক হতে চলেছে। তারা স্বাভাবিক ভাবেই স্বীয় স্বার্থে সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু যারা সাধারণ শিক্ষার্থী তারা এই অপচেষ্টায় কেন দাঁড়াবে। বিএনপি-জামাত তাদের নিয়ে ভাবে কখনো? তারা এইতো সেদিনও ক্ষমতায় ছিল, তখনও ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। তারাতো তখন এসব নিয়ে ভাবেনি? 

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করলেও চাকরি হতো না। তখন ছাত্রদল-শিবিরের অলিখিত কোটা ছিল। রিটেনে টিকলেও ঘুষ দিতে হতো, একথা প্রচলিত ছিল যে ঘুষ না দিলে কোন চাকরি হয় না। শেখ হাসিনা এই অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। একজন একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বিনা ঘুষে চাকরি হয়। যেকেউ একটু ভালোভাবে চেষ্টা করলে, কোন না কোন স্থানে চাকরি লাভ করতে পারে। গন মানুষের কথা শেখ হাসিনা ভাবেন, আওয়ামী লীগ ভাবে। তাহলে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে শিক্ষার্থীদের লাভ কি? বরং এতদিন পরে তারা ক্ষমতায় আসলে ক্ষুধার্ত হায়েনার মত সব চেটে পুটে খাবে

এদেশে আওয়ামী লীগ বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি। এদেশের কৃষক, শ্রমিক,মজুর, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগে আস্থা রেখে নৌকায় ভোট দেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ভরসা করে। শেখ হাসিনা ছাড়া তারা আর কারো উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না, কারণ শেখ হাসিনা ছাড়া তাদের কথা আর কেউ ভাবে না। 

আমরা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারি নি। আমাদের শেখ হাসিনা'কে রক্ষা করতে হবে। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁকে হারালে আমরা আমাদের শেষ আশাটুকুও হারাবো। এই বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনা'র বিকল্প নেই। তিনি তাঁর বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব তাঁর পাশে থাকা, বঙ্গবন্ধুর পবিত্র আমানত রক্ষা করা।

লেখক: ইমরান জমাদ্দার ,সহ-সভাপতি ,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।


সর্বশেষ সংবাদ