বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি ফিরতে পারে যেভাবে
সম্প্রতি ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বারবার কেন সংবাদের শিরোনাম’ এই প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কলাম প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতান মাহমুদ রানা। সেখানে তিনি তুলে ধরেন কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিদ্যমান। এমনকি হলে একটি সিটের জন্য হল প্রভোস্ট কর্তৃক অনুমতির পাশাপাশি প্রয়োজন ছাত্রলীগের সম্মতি। এছাড়াও প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যায় দেশে ছাত্র রাজনীতির কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। বিভিন্ন দলের মধ্য সংঘর্ষ, অন্যায়, অবিচার, এমনকি হত্যাকাণ্ড যেন নিত্য দিনের বিষয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের হেডলাইন হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্নবিদ্ধ ছাত্রত্ব নিয়ে। রাজনৈতিক সচেতনতা ও যোগ্য নেতৃত্বের তাগিদে ছাত্র রাজনীতির আবশ্যকতা রয়েছে। তবে ছাত্র রাজনীতির জন্য সেরকম পরিবেশ তৈরি করা আবশ্যক যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যান্য অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যোগ্য ও ন্যায় নেতৃত্ব দ্বারা দেশ পরিচালনায় জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও আইনের মধ্যে থেকে রাজনীতি চর্চা প্রয়োজন। সেই সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি বাস্তবায়নের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে।
শর্তগুলো- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কড়া নিয়ন্ত্রণে থেকেই যাবতীয় রাজনৈতিক চর্চা সম্পন্ন করতে হবে। যেমনটা হয় বিভিন্ন ক্লাব বা সংগঠনে (যেমন: মডেল ইউনাইটেড নেশনস)। নেতৃত্বের গুণাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নির্ধারক যেমন আদর্শিক ও মেন্টাল স্ট্যাটাস টেস্ট, পাবলিক স্পিকিং, কমিউনিকেশন স্কিল ও অন্যান্য কিছু মৌলিক গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে রাজনীতি চর্চার সদস্য বাছাইকরণ। কারোর তীব্র ইচ্ছা থাকলে তাকে সেই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
পারলে রাজনীতি বিষয়ক কোর্স চালু করা উত্তম। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী কোনো দলের রাজনীতি নিয়ে চর্চা না করে আদর্শগত রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে (যেমন: ন্যায়বাদী দল, সাম্যবাদী দল, প্রগতিশীল দল, রক্ষণশীল দল ইত্যাদি) যাতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়। পরবর্তীতে সদস্যরা তাদের পছন্দ ও বিবেক অনুযায়ী রাজনৈতিক দলে প্রবেশ বা নতুন রাজনৈতিক দল রচনা করতে পারে।
এছাড়াও নিয়মিত বিতর্ক, আলোচনাসভা ও উপযুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে সরকার গঠন করার সুযোগ দিতে হবে যেখানে তারা প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে মডেল ইউনাইটেড নেশনস-এর মত ক্ষমতা চর্চা করে। সফল সরকার বা সফল বিরোধী দলের সদস্যদের সার্টিফিকেট বা অন্য মাধ্যমে স্বীকৃতি দিতে হবে যাতে তারা পরবর্তীতে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজে লাগাতে পারে। সর্বোপরি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি নীতির উপর ভিত্তি করে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি চর্চার যদি এতটাই প্রয়োজন হয় তবে সেটা কোনো নির্দিষ্ট দলীয় স্বার্থে অন্য সবকিছু দমিয়ে না হোক। সেটা এসব নীতি ও শর্তের আরো সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে সুস্থ ধারায় সম্পাদিত হোক। যদি তবুও সেটা বাস্তবায়িত না হয় তাহলে বুঝতে হবে এখানে রাজনৈতিক সচেতনতা, রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার, দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের সঠিক বাস্তবায়ন ইত্যাদি নিয়ে কারোর মাথা ব্যথা নেই।
মাথা ব্যথা শুধু দলীয় স্বার্থ নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সেখানে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা খুবই সম্ভব যদি প্রশাসন চায়। না হলে সেটা শুধু নামমাত্র স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও দেশ নামমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।