গবেষণায় জোর দিয়েই বেশি সাফল্য পাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
সুনশান নীরব এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, যেখানে নেই কোনো মিছিল মিটিং। নেই হৈচৈ, উচ্চশব্দ। নেই ঝামেলা, অশান্তি। শিক্ষার্থীরা সকালে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই ব্যস্ত পায়ে হেঁটে প্রবেশ করছেন যে যার অ্যাকাডেমিক ভবনে। ক্যাম্পাসের কোনো ভবনের গায়ে নেই চিকামারা, নেই কোনো স্লোগান লেখা। একইসাথে ভর্তি, একই অ্যাকাডেমিক পঞ্জিকায় ক্লাস, পরীক্ষা, নির্দিষ্ট তারিখেই ফলাফল। এর পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়েই সকল ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) গবেষণা, সেশনাল ট্যুর বাধ্যতামূলক। গবেষণাগারে নিমগ্নচিত্তে কাজ করছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। নানামুখী শত শত গবেষণা। শিক্ষক ছাড়াও এখন শিক্ষার্থীদের গবেষণার ফলাফল স্থান পাচ্ছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। এরই পাশে নতুন নতুন উদ্ভাবনা।
অ্যাকাডেমিক এ চিত্র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ যেন পাশ্চাত্যের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। কীভাবে এ অর্জন সম্ভব হচ্ছে? কীভাবে এ পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনেক আগেই স্বীকৃতি পেয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররাজনীতি ও সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে প্রথমেই নাম আসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন গবেষণায় জোর দিয়েই আসছে নানা সাফল্য। আর বছরব্যাপী আইকিউএসি (ইনস্টিটিউটিশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সসেল) এর প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় নানা ক্ষেত্রে বাড়ছে দক্ষতা। যে কারণে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং ছাড়াও দেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অগ্রসর অবস্থানে নাম উঠে আসছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
মাত্র তিন বছর আগে করোনা মহামারির ভয়াল আগ্রাসনে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পঞ্জিকা বিপর্যস্ত, সেশন পিছিয়ে পড়ে হতাশা বাড়ে শিক্ষার্থীদের, স্থবির হয়ে পড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উৎকর্ষের অভিলক্ষে নতুন অভিযাত্রা শুরু করতে পেরেছে। এখন করোনার কোনো ক্ষত নেই, প্রভাব নেই শিক্ষা, গবেষণা বা উন্নয়নে। সার্বিকভাবে ফিরে পেয়েছে পূর্ণ গতি। এ অবস্থার পেছনে কি চালিকাশক্তি, কী-ই বা নেপথ্য কথা। এক কথাই সবাই বলছেন উপাচার্যের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্ব, সততা, স্বচ্ছতা, আর সবাইকে নিয়ে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, আর সময়মতো সবকিছু করা। নিজে সময়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণাপ্রিয় উপাচার্য মাত্র তিন বছরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকে সামনে আনতে সক্ষম হয়েছেন। রিসার্চ ফোকাসড বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছেন।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বছরব্যাপী থাকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা। আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। এমনকি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিকসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল বিভাগের ছায়ানথি নিজে সংরক্ষণ করেন। তাঁর চোখের সামনে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হাল চিত্র। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ২৫ মে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময় সভায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অর্জন ও অগ্রগতি এবং প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। যা ইতোমধ্যে তিনি শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপাচার্যের প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ছিল- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টিতে ৩৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করা, নবীন শিক্ষক-গবেষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সাথে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিনের কারিকুলাম নিয়মিত যুগোপযোগী করা, আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: উপকূলীয় অঞ্চলের উপর গবেষণা এবং বিশেষ করে খুলনা উপকূলীয় এলাকায় নানামুখী সমস্যার উপর গবেষণা জোরদার, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার খুলনা উপক‚লীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের সাথে অভিযোজন সম্পর্কিত গবেষণা, সুন্দরবন সম্পর্কিত বহুমুখী গবেষণা জোরদার এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দরবন গবেষণার আন্তর্জাতিক অধিক্ষেত্র তৈরি করা। এ লক্ষ্যে অবকাঠামো ও গবেষণাগার তৈরি। এ ছাড়াও পরিকল্পনায় ছিল- নবীন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি, উন্নত গবেষণায় শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে গবেষণা বরাদ্দ ও বৃত্তির আওতা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের সহ- শিক্ষাকার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগার স্থাপন, মাঠ গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে নতুন প্রকল্পে নতুন হল নির্মাণ এবং শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রমের উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইদের মতামত গ্রহণ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন।
উল্লিখিত পরিকল্পনাগুলো স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভাজন করে ইতোমধ্যে শতভাগ পূরণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের কারণে উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। যার মধ্যে ছিল- অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রমের সুবিধার্থে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি, গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, মাস্টার্স, ব্যাকলগ পরীক্ষা ও থিসিস ডিফেন্স যা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ঘোষণার ফলে বন্ধ রাখা হয় তা পুনরায় চালু করার নির্দেশনা প্রদান, কোভিড পরবর্তী আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলের অবস্থানের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান।
একই লক্ষ্যে অ্যাকাডেমিক ভবনসমূহেও সংস্কার এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ ও কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং (ডি-নথি) ব্যবস্থা চালুর প্রাথমিক পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন। নির্মাণাধীন ভৌত অবকাঠামোর কাজ ত্বরান্বিত করা।
এ উদ্যোগগুলো পরবর্তীতে ফলপ্রসূ হয় এবং আন্তর্জাতিক র্যাংকিং, কিউএস র্যাংকিং, টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিং এ স্থান করে নেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতায় গত বছর ইউজিসির এপিএ মূল্যায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৫.৪৭ পেয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। এর বাইরেও স্টার্ট-আপ সংস্কৃতির বিকাশ ও তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সরকারের আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার তৈরিতে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। এছাড়া আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স কম্পিউটিং ল্যাব এবং থ্রিডি অ্যানিমেশন ল্যাব করার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রতি বছর চাকরি মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১২ শতাংশ পূরণে সক্ষম হচ্ছে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন-ক্লিন ক্যাম্পাসে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন মেইন গেট ‘বিজয় তোরণ’ নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে। রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ক্যাম্পাসে শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী চিকিৎসা কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিবহন পুলে যুক্ত করা হয়েছে নতুন নতুন যানবাহন।
গত তিন বছরে দেশবিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে ৩৯টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। রিসার্চ স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান, অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান, সার্ভিস রুল প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের গবেষণা বরাদ্দ ১ কোটি ৩৫ লাখ থেকে বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। গত এক বছরে ১২৬৬টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিজস্ব গবেষণা তহবিল ‘রিসার্চ ইনডোমেন্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে। গবেষণা কাজ ত্বরান্বিত করতে রিসার্চ সেলকে রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। ডি-নথির মাধ্যমে ৯০ শতাংশ ফাইলের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত ১২:১ যা বিশ্বমানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইকিউএসির মাধ্যমে গত তিন বছরে ৮৫টি প্রশিক্ষণ/কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের সময়ে মোট ১২টি আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলন হয়েছে, যার মধ্যে গত ছয় মাসে হয়েছে ৫টি।
কর্তৃপক্ষ বলছেন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্রেডিটেশন অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত কেন্দ্রীয় গবেষণাগার করা হয়েছে। যার আইএসও সার্টিফিকেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে অটোমেশন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন ক্যাম্পাসে রূপান্তর করতে গত এক বছরে ২ হাজার ৫ শত বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলকে ‘গল্লামারী বধ্যভ‚মি স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি সংস্কারের পর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরিতে ‘স্মার্টবাংলাদেশ বিনির্মাণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মমেয়াদের ৪ বছরের প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলাম। যা ইতোমধ্যে পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি বর্তমান সরকার, শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় আমরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে। শিক্ষা ও গবেষণার পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ তৈরি করতে যা যা দরকার, তা-ই করছি। এখন আমরা টিচিং ইউনিভার্সিটির ধারা থেকে বের হয়ে এসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। এখানে জোর দিয়েই আমরা সাফল্য পাচ্ছি। আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দক্ষ নেতৃত্বের ওপর। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় সেখানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যেখানে শতশত শিক্ষার্থী আর শিক্ষক কর্মকতা কর্মচারী সেখানে প্রায়শই দেখা যায় নানা ঝামেলা অশান্তি। প্রায়শই সামাজিক ও গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম দেখা যায়। জনমনে নানা প্রশ্ন জাগে, মানুষ আশাহত হয়। সেই ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেই কোনো নেতিবাচক সংবাদ। বরং প্রকাশিত হয় সাফল্য আর আশা জাগানো নানা বার্তা। সার কথা গবেষণা ও উদ্ভাবনায় জোর দিয়েই এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতিকে দিতে চায় অনেক কিছু। সে স্বপ্ন নিয়েই উৎকর্ষের অভিলক্ষে লার্ণ,লিড এন্ড লিভ এ স্লোগান ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক: পরিচালক (অব:), জ. প্র. বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।