মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা যেমন হতে পারে
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির দাবি দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে এই দাবিটি খুবই মানবিক ও যৌক্তিক।এনটিআরসি এ কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত এমপিভুক্ত শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন (সর্বোচ্চ ২ বছরের অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা যেতে পারে) শিক্ষকদের পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিবন্ধনের মেধাক্রম অনুসারে মাদ্রাসা থেকে স্কুল/কলেজ এবং কলেজ থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে । আর এটিকে ভালো হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রায় সকল বদলি প্রত্যাশী নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক।
বদলি ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। তবে সেটি একই প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায়/ ব্যাংকে/ এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু প্রত্যেকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে শূন্য পদ সাপেক্ষে সমপদ / সমস্কেলে শিক্ষকদের বদলি করা যেতে পারে।
যথাযথ নীতিমালা প্রবর্তন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ দিনেও হয়নি সে নীতিমালা প্রণয়ন ও কাঙ্খিত বদলির ব্যবস্থা। তাই শিক্ষকরা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জন্মের শুরু থেকে চতুর্থ গণবিজ্ঞতির পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন এবং যোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগ পেয়ে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও এমপিও স্থানান্তরের সুযোগ পেতেন। এমনকি এক অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ নিয়ে, এমপিও ট্রান্সফার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। শিক্ষকদের বদলি সুবিধা প্রদানের প্রয়োজনে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সে ব্যবস্থাটিকে আরো মডিফাই করা যেতে পারতো। কিন্তু চতুর্থ ও ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সেই সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা। কারণ এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রাপ্ত শিক্ষকরা কোন সুযোগ পাননি। তাই তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও কষ্টে দিন যাপন করছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের সরকারি চাকরির ন্যায় সর্বোচ্চ চাকরির বয়সসীমা দুই বছর করা করা যেতে পারে।।
বর্তমানে গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা আবেদন করতে পারেন না। তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার ন্যূনতম সুযোগটুকুও বর্তমানে নেই। এতে শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট আরো বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থেই দূর-দূরান্তে অবস্থিত সকল ধরনের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কারিগরিসহ সাধারণ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা) এর এমপিওভুক্ত ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্ত হবার সুযোগ দিয়ে তাদের মধ্যে দ্রুত বদলি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি।
সব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রেখে একটি বদলি নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যেই আমি কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করছি
১। এনটিআরসি এ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকদের ২০২১ এর ১২.২ নীতিমালা অনুসারে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে।
২) মাদ্রাসা থেকে স্কুল/কলেজ অথবা স্কুল/কলেজ থেকে মাদ্রাসায় সমপদে/ সমস্কেলে বদলির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে।
৩)) মাউশির এমপিও নীতিমালায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালা অর্থাৎ প্রতিটি অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালায় সমপদে/সমস্কেলে বদলির কথা বলা হয়েছে, তাই সমপদে বদলি নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
৪) এক অধিদপ্তর থেকে অন্য অধিদপ্তরে বদলি হওয়ার পর অটো ইন্ডেক্স ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫) স্কুল/কলেজ,মাদ্রাসা ও কারিগরি অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসার জেনারেল প্রভাষকদের কলেজে সহকারি অধ্যাপক, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষের বিধান থাকলে বদলিতেও এই বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।
৬) মাদ্রাসার জেনারেল শিক্ষকরা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমপদে/সমস্কেলে যেভাবে বদলি হবে মাউশিতেও ঠিক সেভাবেই সমপদ/সমস্কেলে বদলি হবে। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ভিন্ন অধিদপ্তরে ইনডেক্স ট্র্যান্সফারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৭) জেনারেল প্রতিষ্ঠান থেকে সমপদ/সমস্কেলে মাদ্রাসা কারিগরিতে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলি করা যেতে পারে।
৮) মাদ্রাসা ও কারিগরি থেকে জেনারেল প্রতিষ্ঠানে সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলি করা যেতে পারে।
৯) বর্তমান প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরির ন্যায় সর্বোচ্চ দুই বছর চাকরিতে বহাল রাখা যেতে পারে।
১০) বদলির ক্ষেত্রে প্রথমে উপজেলায়/তারপর জেলায় সর্বশেষ বিভাগে বদলি কার্যকর করা, এক্ষেত্রে মেধা বিবেচনা করা ও দূরের শিক্ষকদের অগ্রধিকার দেওয়া যেতে পারে।
১২) বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দক্রম অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয় একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বদলি করা যেতে পারে।
সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এনটিআরসিএ কর্তৃক বেসরকারি শিক্ষকদের-কাঙ্খিত বদলি দ্রুত কার্যকর করা আবশ্যক।
লেখক: মো. সরোয়ার, প্রভাষক (ইংরেজি)
সভপতি ইনডেক্সধারী বদলি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদ