বাউবির স্থগিত হওয়া ‘আইন অনুষদ’ অবিলম্বে চালু চাই
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের একমাত্র দূরশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুযায়ী দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাকে দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম।
এর মূল ক্যাম্পাস ঢাকা শহরের অদূরে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন ক্যাম্পাস (আঞ্চলিক কেন্দ্র সমূহ) এবং আউটার ক্যাম্পাস (স্টাডি সেন্টারসমূহ) দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক পর্যায়সহ যেকোন বয়সের সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীর কাছে উচ্চশিক্ষা পৌঁছে দিতে বাউবি এক বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু সফলতার পাশাপাশি বাউবি কিছু ক্ষেত্রে এখনো সুনিপুণভাবে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে স্থগিত হওয়া 'আইন অনুষদ'।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০০৫ সালে বাউবিতে ‘স্কুল অব ল’ অনুমোদন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই 'স্কুল অব ল' স্থগিত করা হয়। ফলশ্রুতিতে ৪ বছর মেয়াদি আইন অনার্স প্রোগ্রাম সামাজিক বিজ্ঞান মানবিক ও ভাষা স্কুলের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে বাউবিতে ৪ বছর মেয়াদি আইন অনার্স ও এলএলএম প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।
তাছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞান মানবিক ও ভাষা স্কুলে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, ইসলামের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের ৪ বছর মেয়াদি অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। বর্তমানে একটা অনুষদের অধীনে ৭টি বিষয়ের অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাউবিতে আইন বিষয়ই একমাত্র যেখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য এ সেকশন (রবি-বুধ) এবং অনিয়মিত, যেকোন বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য বি সেকশন (শুক্র-শনি) ব্যাচ রয়েছে।
বর্তমানে বাউবিতে 'স্কুল অব ল' স্থগিত থাকায় আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। বিশেষ করে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয় সংকটে ভুগছে। এছাড়া সেশনজট, ৫% চক্রবৃদ্ধি সুদে মাত্রাতিরিক্ত সেমিস্টার ফি, ফলাফল প্রকাশে বিলম্বসহ আরও অনেকে সমস্যা রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
স্থগিত হওয়া 'আইন অনুষদ' অনতিবিলম্বে চালুর দাবিতে আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা গত জানুয়ারিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এমনকি গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে আন্দোলনও করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিলো, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থগিত হওয়া 'স্কুল অব ল' চালু করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোন সাড়া জাগানিয়া উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। স্থগিত হওয়া 'আইন অনুষদ' চালু আইন প্রোগ্রামের প্রতিটা শিক্ষার্থীর যৌক্তিক দাবি এবং ন্যায্য অধিকার।
এমতাবস্থায়, আমরা আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় উপাচার্য স্যার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় 'স্কুল অব ল' এর বিষয়টি তুলে ধরবেন এবং বোর্ড অব গভর্নরস এর সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিবেন এবং শীঘ্রই 'স্কুল অব ল' দ্রুত চালু হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ (২০-২১ সেশন), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।