০৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪৮

সমাজে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই নারীরা

ইসরাত জাহান টুম্পা, আসফিমা বসুনিয়া মিমু ও জান্নাত রেজওয়ানা।   © টিডিসি ফটো

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘নারীর সম-অধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে এই দিবসটি। নারী দিবস মনে করিয়ে দেয় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে প্রতি বৎসর এই দিনটিকে  আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এভাবেই ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হওয়া শুরু হয়।

সময়ের পরিক্রমায় সমাজে এসেছে নানা ধরনের পরিবর্তন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে মহাকাশ জয়, অনেক সাফল্য আসছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের ভাবনা, প্রত্যাশা ইত্যাদি নিয়ে তুলে ধরেছেন তৌফিকুল ইসলাম আশিক

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আসফিমা বসুনিয়া মিমু বলেন, ‘বলা হয় নারীরা প্রেরণা দেয়, শক্তি দেয়। কিন্তু সমাজে নারীদের অবস্থান এখনও অনেক নিচে। নারীদের নিয়ে পুরুষদের চোখে এবং মনে তীব্র বৈষম্য রয়েছে যা দিন দিন যেন প্রকট হচ্ছে। ফলে একজন নারী হিসেবে সমাজে প্রচুর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। আশা করি, দ্রুতই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শিশুরা নিরাপদ থাকবে এবং সেই সাথে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে মায়েদের জন্যে ডে কেয়ার চালু করার দাবি জানাই। এতে অন্তত কর্মজীবী মায়েরা একটু নিশ্চিত হবে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান টুম্পার ভাষায়, ‘অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের গল্পগুলো সমাজে সবসময় প্রশংসিত ও গ্লোরিফাই করা হলেও, নারী যখন তার অধিকারের জন্য লড়াই করে তখন তাকে অবাধ্য আখ্যা দেয়া হয়। যে নারীটি কর্মক্ষেত্রে নিজগুণে এগিয়ে যায়, খুবই সহজভাবে তার সফলতায় চরিত্রকে টেনে আনা হয়। ক্যারিয়ারে ফোকাস করলে পরিবারে ছোট থেকে ছোট ঝামেলায় তার পেশাকেই টেনে আনা হয়। পৃথিবীর সকল কুসংস্কার একদিন আধুনিকতার মুখ দেখলেও নারী সর্বদা সমাজের পুতুল পাত্র। 

আরো পড়ুন: নারী দিবসে দিনব্যাপী কর্মসূচি ঢাবি ছাত্রলীগের

শক্তি যেমনটা রূপান্তরিত হয় মাত্র, কিন্তু ধ্বংস হয়  না। নারীদের প্রতি অত্যাচার গুলো ও রূপ পরিবর্তন করে মাত্র। আমি মুখ বন্ধ করে থাকা সেই সিংহভাগ নারীর কথাই বলছি যারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে সবটা সামলায়। দিনশেষে তাঁরা কাঁদে না, কাঁদার সময়টুকুও নেই। তখন তুলনা হবে অন্যদের সাথে। অন্যরাও তো কাজ করে মুখ বুজে, তোমার এত অভিযোগ কেন! এই অবস্থার পরিবর্তন রাতারাতিও হবে না। যতদিন না মানুষ হিসেবে নারীর মূল্যায়ন হবে। আমরা চাই মানুষ হিসেবে আমার যতটুকু প্রাপ্য সেটি পূরণ হোক, দাবি  তো দূরের কথা! চিন্তাধারার পরিবর্তন আসুক পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই যখন শিশুরা বুঝবে মেয়ে কোনো আলাদা শ্রেণি নয়, মানুষ! তখন থেকে হয়ত আর দাবি বা অধিকারের ভিড়ে নারীরা  নিজেকে হারিয়ে ফেলবে না। ততদিনের অপেক্ষা রইলাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী জান্নাত রেজওয়ানার মতে, ‘নারী পুরুষ উভয়ই সৃষ্টির সেরা জীব। নারী ও পুরুষের  পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য।  উভয়ের  সহযোগিতায়  সমাজ উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়। পৃথিবীর  জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়ায়, তাদের অংশগ্রহণ ব্যতীত ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব। তাই অতীতের তুলনায় নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজ এখন দায়বদ্ধ। বর্তমানে নারীদের পদচারণা শিক্ষা, সংস্কৃতি, কর্মক্ষেত্র, এবং সমাজের প্রতিটি প্রান্তে দৃশ্যমান। নারী সমাজ পিছিয়ে নেই কোন অংশেই। জ্ঞান চর্চা, ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল বিচিত্র্য কর্মে নারীরা পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে।’  

সকল বাধা বিপত্তিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলছে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে সকল ক্ষেত্রেই নারীরা সুযোগ করে নিচ্ছে, নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। জায়গা করে নিচ্ছে সমাজের বিভিন্ন পদে। স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে তারা। তবে দেখা যায় এখনো, সমাজের কিছু স্তরের মানুষের কটাক্ষের শিকার হতে হয় নারীদের। কর্মজীবী নারীদের জন্য সংসার জীবন প্রায়ই কঠিন হয়ে পরে। পরিবারের সদস্যদের সাহায্য তো দূরে থাক, আরো কথা শুনতে হয়। ফলে অনেক নারীই মা হওয়ার পর কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পরে। সমাজের সকল রাস্তা ঘাট নারীদের জন্য এখনো  নিরাপদ নয়।

আরো পড়ুন: সম্মাননা পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতা

আশা করা যায় সমাজ ভবিষ্যতে আরও নারী বান্ধব হবে। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। কর্মকর্তা নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সদয় হবে সমাজ এবং কর্মস্থানগুলো। তাদের অংশগ্রহণে সমাজের সহায়তা বৃদ্ধি পাবে।