শেখ হাসিনার ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব ও উন্নয়নধারা ভোটার আকৃষ্ট করতে পারে
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীকাল পেরিয়ে আমরা যখন দ্বিতীয় অর্ধশতাব্দীকালে প্রবেশ করেছি এবং বর্তমানে আমরা একটি জাতীয় নির্বাচনের মুখোমুখি, তখন সেই পুরোনো ধ্যান-ধারণা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবিবর্জিত রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করছি। রাজনৈতিক দলগুলোর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সামনে আমাদের জাতি সত্তার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ করে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়ার জন্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে নির্বাচনী ইশতেহার থাকার কথা, ছোট-বড় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে তার অনুপস্থিতি জাতিকে ভাবিয়ে তোলে। কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ কাজটি করতে অনেকটা এগিয়ে।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বে ও পরে এই বঙ্গীয় অঞ্চলের বহু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর জীবনেতিহাস নিয়ে নেতাকোষ রচনা করা যাবে। যাদের শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যক্তি পরিবার সেবা, ত্যাগ ও রাজনৈতিক সাহসী ভূমিকা ও অবদান আজও আমাদের নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য আদর্শনীয় ও অনুকরণীয় হতে পারে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেই দীর্ঘ ত্যাগ-তিতীক্ষা ও অবর্ণনীয় নিপীড়ন সহ্য করে দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশ গড়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশীয় বিশ্বাস ঘাতক ও বিদেশি শত্রুদের যোগসাজশে কি নির্মমভাবেই না জাতির এই বর পুত্রকে হত্যা করা হলো। একুশটি বছর তাঁকে স্মরণ করতে, স্বাধীনতার স্লোগান দিতে প্রায় নিষেধাজ্ঞাই জারি হয়েছিল এবং পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে বেগম খালেদা জিয়ার অপ্রকৃত জন্মদিবস পালন প্রচলনও করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ছিলাম একেবারেই কোলের শিশু। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সে এসে আমরা বুকে আশা বাঁধতে ছিলাম সময়, দেশ ও জাতির নিরেট বাস্তবতায় এই সংঘাত এবং খুনের রাজনীতি নিশ্চয়ই দুর্বল হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সংলাপ সৌহার্দ্য এবং দেশপ্রেম ও দেশ সেবার মহৎ উদ্দেশ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিন্তু হায়! দেশ জাতি ও বাঙালির চরম দুর্ভাগ্য ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের বিকেলে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সেই আওয়ামী লীগকে আবারো তার প্রধান নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির মূল শক্তি ও নেতৃত্বকে কি নির্মমতার সাথে নির্মূল করতে ষড়যন্ত্র করা হলো।
১৫ আগস্টের পর যেমন করে ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা হলো, খুনিদেরকে পুরস্কৃত করা হলো, দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করার সকল কৌশল অবলম্বন করে লক্ষ জীবনের বিনিময়ে সদ্যস্বাধীন হওয়া সোনার স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা একটি সম্ভাবনাময় দেশকে সুদূর প্রসারী অনিশ্চয়তার দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সরকারের সরাসরি মদদে ২১শে আগস্টের নির্মম ঘটনার পরও ঐ একই শক্তি ঘটনার আলামত রাখতে দেয়নি, সংসদে একটি শোক প্রস্তাব তুলতে দেয়নি, এমনকি ঘটনাস্থলে চব্বিশ জন আদম সন্তান নিহত হওয়ার পর শত আহত ও অর্ধমৃত মানুষগুলোকে রক্ত দিতে পর্যন্ত আমাদেরকে প্রচণ্ড বাঁধার সম্মুখীন করেছিল।
২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে যত আলোচনা ও সমালোচনা হয় এবং ভোট ব্যবস্থায় যে অসংগতি বিদ্যমান ছিল, তার দায়-দায়িত্ব ও অক্ষমতার দোষ আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনের কাঁধে তুলে দিয়ে বিরোধী পক্ষগুলো সাধুজন সাজতে চান, তাদের অতীত রাজনীতির চেহারা তারা আয়নায় দেখেন না। একাত্তর পঁচাত্তর ও দুহাজার চারের ঘাতক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী ও প্রভুগণের সমর্থনে নির্বাচনের পূর্বেই ক্ষমতায় যাওয়া তারা নিশ্চিত করতে চান, না হলে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন মৌসুমে নির্বাচন কমিশন, কেয়ারটেকার সরকার, সরকারের পদত্যাগ, প্রশাসন দলীয়করণ ইত্যাকার বিষয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেন।
দীর্ঘ একটা সময় ছিল, যখন আওয়ামী বিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ভারতের দালাল ইসলাম বিরোধী ও বাকশালী বলে গালমন্দ করতেন। আজ স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরের বাস্তবতায় বাংলাদেশের মানুষ সেই রাজনীতিও ভালোভাবে বুঝে ফেলেছেন। এখন বাংলাদেশের সকল ধারার রাজনীতিই ভারতপ্রীতিকে স্ব স্ব রাজনীতির জন্য নিয়ামক শক্তি মনে করেন। সম্প্রতি জনাব তারেক রহমান কোন প্রভুদের ইশারায় আবার নতুন করে ভারত বিরোধী জিগির তুলতে যাচ্ছেন তা হয়ত সময়ই বলে দেবে। আমরা মনে করি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি অতীতেও আমাদের বন্ধু ছিল এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সকল দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে একটি আদর্শ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চার বারের প্রধানমন্ত্রী একুশ বছরের বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব স্বাধীনতার পর দেশের সুনাম ও উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থেকে বেরিয়ে আসেননি, বরং রাজনীতিতে তারা অধিকতর বিদেশি নির্ভর হয়ে পড়েন। তাই সংবিধান রক্ষা ও জাতিকে অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ নির্বাচন এখন অনিবার্য।
আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা বুঝতে সক্ষম হবেন। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস ও নির্মূল করার মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন। মনে রাখতে হবে, প্রজন্মের কাছে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, সেবা ও ত্যাগের রাজনীতির দৃষ্টান্ত রেখে যেতে পারছি কি-না। এবারের নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু কন্যা অতীত ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের উন্নতির গতিধারা অব্যাহত রেখে একটি উন্নত রাষ্ট্রের যে স্বপ্নের কথা বলেছেন, আমরা তার প্রতি আস্থা রাখতে চাই। তার প্রজ্ঞা, মেধা, দেশপ্রেম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাহস ও অর্জনের স্বীকৃতি এবং ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য নতুন প্রজন্ম ও নতুন ভোটারদেরকে আশায় বুক বাঁধতে অনুপ্রাণিত করবে এবং দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নধারা ও শেখ হাসিনার ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব ভোটারদেরকে আকৃষ্ট করতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।