কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল
শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। দশ-পনের বছর আগেও প্রচুর পরিমান বিভিন্ন রঙ্গের শাপলা দেখা যেত। কিন্তু এখন আর আগের মত শাপলা ফুল দেখা যাচ্ছে না। গ্রামগঞ্জে কালের পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের নয়নাভিরাম জাতীয় ফুল শাপলা।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণরত ৫ প্রকার শাপলা দেখা যায়। শাপলা গুলো হচ্ছে সাদা, লাল, বেগুনী, হলুদ ও নীল রঙের। এদের মধ্যে সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। একারণে নদী-নালা, খাল-বিলে বিশেষ করে স্রোতবিহীন জলাশয়ে শাপলা ফুলে ছেয়ে থাকে।
সাধারণ মানুষ বিলের পানিতে অযত্নে লালিত শাপলার লতা সবজি হিসেবে খায় ও ফল ঢ্যাভ নামে পরিচিত এই খাদ্য সংগ্রহ করে পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। এখনকার সময়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যেত, এর চাহিদা রয়েছে বেশ। তবে অবহেলা ও অযত্নে আর কৃষি জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন হাওর-নদী-নালায় জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম প্রায়।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন আর সাদা, লাল ধরণের শাপলা দেখা যায় না। কিন্তু বেগুনি ও নীল শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে দিনদিন। যেখানে পানি জমে থাকে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফুল ফোটে। শাপলা ছোট বাচ্ছাদের খুবই প্রিয়। ছোটরা শাপলা ফুল তুলে শাপলা ফুলের মালা গলায় পড়তো। আবার ড্যাভ শিশুদের প্রিয় খাবার এবং গ্রামগঞ্জের লোকেরা ড্যাপ দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করতো। গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুবই প্রিয় শাপলা।
অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকতো। এছাড়াও শাপলার অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। শাপলা দিনের বেলা ফুটে থাকে এবং সরাসরি কান্ড ও মুলের সাথে যুক্ত থাকে। পাতার সাইজ ২০-২৩ সে.মি. এই ফুলে ৪ থেকে ৫টি বৃতি থাকে ও ১৩ থেকে ১৫টি পাপড়ি থাকে। বছরের সবসময় শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে বর্ষাকালে ও শরৎ মৌসুমে এই উদ্ভিদ জন্মের শেষ সময়।
এ বিষয়ে কথা বলেন সাতক্ষীরা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক এক দশক আগেও সাতক্ষীরার প্রতিটি মাঠ, বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল দেখা যেতো। তখন পুকুর খাল-বিল ও জলাশয়গুলো লাল, সাদা, গোলাপী, বেগুনী, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোটার কারণে চারিদিকে নয়ানাভিরাম দৃশ্যে পরিনত হতো। কিন্তু বর্তমানে সাদা প্রজাতির শাপলা ফুল গুলো বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না লাল, নীল বেগুনী ও গোলাপী শাপলা।
এসব শাপলা ফুল হারিয়ে যাওয়া পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি তে ঘর-বাড়ী তৈরি। আবার ফসলী জমিতে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের জাতীয় ফুল শাপলা হারাতে বসেছে। এক সময় বিলে-ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলা ফুলের বাহারী রূপে মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। এখন আর বাহারী রূপ গ্রামবাংলায় আর দেখা যাচ্ছে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে তা ঠিক নয়, তবে সাতক্ষীরায় হাওর ও জলাশয় কম থাকায় তেমন একটা চোখে পড়ে না। জলাশয় এলাকায় শাপলা প্রচুর পরিমাণ দেখা যায়। উদ্ভিদ গবেষণা পর্যায়ে দেখভাল করলে জাতীয় ফুল টিকিয়ে রাখা সম্ভব।