০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮

কানাডার চেয়ে উন্নত দেশের নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বই

নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বই  © সংগৃহীত

নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইটা নিজে পড়লাম। একইসঙ্গে এমন একজনকে দিয়ে পড়ালাম যিনি কানাডায় স্কুলে-কলেজে বিজ্ঞান পড়েছেন এবং বাংলাও লিখতে-পড়তে পারেন। ওনার মতে এনসিটিবির পদার্থবিজ্ঞানের বই কানাডায় তারা যে বই পড়েছেন, তার চেয়ে উন্নত মানের।

এই বই ১০-এ ৮ পাবে। ১০-এ ১০ দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ এর অলঙ্করণ বা ইলাস্ট্রেশনের মান আরও ভালো হওয়া উচিত। এই বইতো নবম-দশম শ্রেণির, উচ্চ মাধ্যমিকেও তো এরা পদার্থবিজ্ঞান পড়বে। এই বই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞান পড়ার ভিত্তি যথেষ্টের চাইতে বেশিই গড়ে দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

মাধ্যমিক পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানের সিলেবাসে কী কী থাকা উচিত, সেটা জানা কঠিন নয় মোটেই। অন্তর্জালে এমন সিলেবাসের খোঁজ করলেই পাবেন। সেই সিলেবাসের সঙ্গে তুলনা করে দেখলেই হয়, নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিদ্যার বইয়ের সিলেবাস পূর্ণাঙ্গ কি অসম্পূর্ণ।

যদি অসম্পূর্ণ হয়, তবে আগামী বছর ঘাটতিগুলো মিটিয়ে বইটিকে সম্পূর্ণতর করে তোলা যেতেই পারে। কিন্তু এসব না করে, ‘হায় হায়! সব শেষ করে দিল! আমাদের কী হবে গো!’ বলে মাতম করা মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ বলে আমি মনে করি।

শিক্ষকের প্রসঙ্গে আসি। আমার মত হচ্ছে, বাংলাদেশেও বহু ভালো শিক্ষক আছেন, যদিও মাঝারি শিক্ষক এবং খারাপ শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। এটাই শিক্ষকের বিশ্বজনীন চিত্র। বিদেশের সব শিক্ষক কি ভালো? তিন মহাদেশে ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া করে আমার মত হচ্ছে, ভালো শিক্ষক এক বিরল ব্যক্তি। আমি আমার সারা জীবনে খান পাঁচেক ভালো শিক্ষক পেয়েছি কিনা সন্দেহ।

আরও পড়ুন: সব বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষামন্ত্রী

শিশির ভট্টাচার্য্য

আর ভালো শিক্ষক হলেই তো হবে না, গুরুশিষ্যের সাজুয্য বা কমপ্যাটিবিলিটি থাকতে হবে। কৃষ্ণ শিক্ষা দেবেন, কিন্তু সেই গুরুবাক্য শোনার মতো, শুনে সেই গুরুবাক্যকে কর্মে পরিণত করার মতো একজন অজুর্নও অপরিহার্য। গুরুশিষ্য কমপ্যাটিবিলিটি আরেক বিরল ঘটনা।

যারা বলছেন, গণিত পড়ানো হচ্ছে না নবম-দশম শ্রেণিতে, তারা আরেক মিথ্যাচার করছেন। সাধারণ গণিত তো রয়েছেই, সাথে আছে উচ্চতর গণিত। আমরা যা গণিত পড়েছি, তার চেয়ে দশগুণ বেশি গণিত পড়তে হচ্ছে এখন নবম-দশম শ্রেণীতে।

আমি এটা ভেবে পুলকিত হচ্ছি যে আমি সত্তরের দশকে স্কুলের চৌকাঠ পার হয়ে গেছি। আমার যে মেধা ছিল, এই কারিকুলামে আমি স্কুল শেষ করতে পারতাম কিনা সন্দেহ।

এত এত পড়া, ওরে বাপরে। তবু গুজব ছড়ানো হচ্ছে, কিছুই পড়ানো হচ্ছে না, কিংবা ইংলিশ মিডিয়ামের চেয়ে কম পড়ানো হচ্ছে। আচ্ছা, ফালতু প্যাঁচাল পাড়ার আগে এরা কি বিজ্ঞান ও অংক বইগুলো খুলে দেখারও প্রয়োজন বোধ করেনি?

লেখক: অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।