অবরোধে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কি প্রমাণ করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক?
দেশে যখন রাজনৈতিক অবরোধ, বাসে আগুন এসব চলছে তখন এই অবরোধের মধ্যেই কয়েক লাখ ছেলে মেয়েকে সারাদেশে থেকে ঢাকায় এনে চাকুরির পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। আচ্ছা চাকরি প্রার্থীদের এই ঝুঁকিতে ফেলার মানে কী? আর ১০ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত অবরোধ চললে সকাল ১০ টার আগে পৌঁছে কীভাবে পরীক্ষায় বসবে প্রায় পৌনে দুই লাখ ছেলে-মেয়ে? কীভাবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারা আসবে? এই পরীক্ষা স্থগিত করা উচিত এখুনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটিকে বলবো, আচ্ছা আপনার ছেলেমেয়েকে এই অবরোধে ছাড়তেন? তাহলে কী মনে করে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত নোটিশ ও সিটপ্লান প্রকাশ করলেন? একবার ভেবেছেন পৌনে দুই লাখ ছেলে-মেয়ে কীভাবে আসবে?
জাতিসংঘের একটা সংস্থার আন্তর্জাতিক একটা বৈঠকে আমি এখন দেশের বাইররে। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় আমি শত শত ছেলে-মেয়ের মেসেজ পেয়েছি। সবাই উদ্বিগ্ন। তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন এ নিয়ে লিখতে। আফসোস লাগে সবকিছু নিয়ে আমাদের লিখতে হয়। প্রতিবাদ করতে হয়। আচ্ছা আমাদের কর্তৃপক্ষগুলো কী সংকটগুলো ধরতে পারেন না নাকি বুঝতে চান না?
আপনারা হয়তো বলতে পারেন, অবরোধ তো সকাল ৬ টায় শেষ আর পরীক্ষা তো দশটায়। কিন্তু সমস্যা হলো শুক্রবার সকালের পরীক্ষা দিতে হলে তো আগের দিন বৃহস্পতিবার দিনে কিংবা রাতে তাদের রওয়ানা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার তো অবরোধ। তাহলে তারা আসবে কী করে? বাস পাবে কোথায়? মেয়েদের কথা চিন্তা করেন। যাদের বাচ্চা আছে তাদের কথা চিন্তা করেন।
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি যদি মনে করে রাজনৈতিক এই অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে তারা প্রমাণ করতে চায় সব স্বাভাবিক তাহলে বলবো আপনারা জোর করে পরীক্ষা নিতে চাইলে কয়েক লাখ ছেলে-মেয়ে হয়তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসবে, অনেকে হয়তো আসবে না, কিন্তু যারা আসবে তাদের কারো যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে এর দায় কে নেবে? আর এই দুর্ভোগ উদ্বেগের মধ্যে এসে তারা পরীক্ষা দেবে কী করে? আচ্ছা কোন অভিভাবক কী তাদের সন্তানদের এমন ঝুঁকিতে ফেলবেন? কাজেই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, প্লিজ এই পরীক্ষাটা স্থগিত করেন।
আরেকটা পরামর্শ। দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতা খুব দ্রুত কেটে যাবে বলে আমার মনে হয় না। কাজেই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখা উচিত। দেখেন এই দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একেকটা নিয়োগে ৩-৪ বছর লাগায়। ফল প্রকাশের পর নিয়োগে আরো এক বছর লেগে যায়। রুপালি ব্যাংকসহ বহু নিয়োগ ঝুলে আছে। কাজেই কয়েক মাস পরে পরীক্ষা নিলে এমন কোন সমস্যা হবে না।
তারপরও যদি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি মনে করে নির্বাচনের আগে পরীক্ষা না নিলে তাদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে যাবে তাহলে তারা নির্বাচনের আগে যে কোন শনিবার এই পরীক্ষা নিতে পারে। তাহলে হয়তো ছেলেমেয়েরা শুক্রবার রওয়ানা দিয়ে শনিবার এসে পরীক্ষাটা দিতে পারে।
আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি বিষয়গুলো মানবিকভাবে বিবেচনা করে শুক্রবারের পরীক্ষা স্থগিত করবে। একইভাবে এই অবরোধে মধ্যে বিসিএসসহ সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি আমাদের সব কর্তৃপক্ষের বোধ জাগবে।
লেখক: কলামিস্ট