যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রের বর্ণনায় ‘হোস্টেলে র্যাগিং’
আমার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি পরিবার। আমি আসানসোলে বড় হয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই আমি ভর্তির সময় হোস্টেলে এ্যাপ্লাই করেছিলাম। জীবনে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার পর দুই-তিন রাত হোস্টেল আমার কাছে বিভিষিকার জন্ম দিয়েছে। আমি এখন অনেক কষ্ট করেই, ধার নিয়ে হলেও মেস খুঁজছি।
সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন আছে। কিন্তু যাদবপুর মেইন হোস্টেলের কিছু দাদাও যে এই একই কাজ করবে তা আমার কল্পনার অতীত। মাথায় একটি স্পেসিফিক ছাঁটের চুল কাটতে বলা, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হোস্টেলে ঢুকতেই হবে, সিনিয়রদের ক্রমাগত ফাইফরমাশ খাটা, সারারাত জাগিয়ে রেখে ইন্ট্রো নেওয়া (শুনতে পারছি যে এখনও আসল ইন্ট্রো নেওয়াই হয়নি)। এগুলো ওই তিনরাত আমার সাথে চলছে এবং আমি ভীত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে সব থেকে গনতান্ত্রিক লড়াকু একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে, এরাই পথ দেখায়।
আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের আরেক নাম ‘ইন্ট্রো’
কিন্তু সমাজের যে ক্ষমতা কাঠামো, সংখ্যাগুরু ধর্মের সংখ্যা লঘুদের উপর। পুরুষদের মহিলাদের উপর, আমাদের দেশের উঁচু জাতের নীচু জাতের প্রতি। ক্ষমতাবান সিনিয়রদের (ইউনিয়ন লীডারদের মদতপুষ্ট) জুনিয়রদের প্রতি।
এর ব্যতিক্রম আমার অভিজ্ঞতা হলো না। মেইন হোস্টেল নিয়ে আমি অনেক গল্প শুনেছি। বন্যার্তদের সাহায্যে গল্প, কোয়ারেন্টাইনের সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকা। যাদবপুর থানার নানা দাদাগিরির বিরুদ্ধে সারাদিন সারারাতের ঘেরাও। আমি বিশ্বাস করি মেইন হোস্টেলের বেশিরভাগ দাদাই এই লড়াকু ঐতিহ্য বহন করেন। কিন্তু কিছু জনের জন্য আমি আমার সহপাঠীকে হারালাম।
সচেতন সংবেদনশীল সহমর্মী দাদাদের কাছে আমার আহ্বান এই র্যাগিংয়ের মত নগ্ন ক্ষমতা প্রদর্শনকে বিচ্ছিন্ন করার সংগ্রামে পথ দেখাতে; যেভাবে অন্য সংকটে তারা দেখিয়েছি। ইউনিয়ন লিডারশীপ দু-চারটি ভোটের জন্য এই ক্ষমতাকেন্দ্রকে বাঁচিয়ে রাখার যে আপোষ, সেই পথ থেকে সরে আসতে।
আরও পড়ুন: স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
না হলে তৃনমূল বিজেপি-সিপিএমের সাথে আসলে কোনো তফাৎ হয় না। তারা ভোটব্যাংক বাঁচাতে হিন্দুত্ব সংখ্যাগুরুবাদকে ব-কলমে সমর্থন দিচ্ছে। আর এখানে দুটো ‘ভোট ঘুরে যাবে’ বলে প্রকাশ্যে ক্ষমতা-ধর্ষকামী (sadistic pleasure) মনোভাবকে লালন করা হচ্ছে।
আজ অবধী ইউনিয়ন থেকে কোনো প্রচার দেখলাম না, বরং এমন ঘটনা শুনেছি বড় মাঠে র্যাগ দেওয়ার পর ইউনিয়নের দাদারা খাপের মতো করে আপোষ করে নিতে বলেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়