২৮ মে ২০২৩, ১৪:৩৬

যে জিনিসটা আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পারি না...

ভাইরাল ভিডিওর মাদ্রাসা ছাত্র  © সংগৃহীত

মাদ্রাসার ওই ‘জাতীয় মাছ পাঙ্গাশ’ উত্তর দেওয়া কিউট পিচ্চির ভিডিওটা খুব মজার, সন্দেহ নাই। বাট আমার খুব ইচ্ছা করতেছিলো, ওই ভিডিওটা আমি ইউনিভার্সিটি আর কলেজের কিছু টিচারকে পাঠিয়ে বলি—দেখেন, একটা মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছে শেখেন, শিক্ষকতা জিনিসটা কেমন, শিক্ষক কেমনে হতে হয়।

এখানে মজার চেয়েও বড় একটা বিষয় আছে, যেটা মিস করে যাওয়া উচিত না। পিচ্চিটা তিনটা প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছে। জাতীয় ফলের নাম বলেছে আঙ্গুর ফল। জাতীয় মাছের নাম বলেছে পাঙ্গাস। আর জাতীয় ফুলের নাম বলেছে গাঙ্গের ফুল।

মজার ব্যাপার হলো, ছেলেটার উল্টাপাল্টা উত্তর শুনে ওই টিচারটা একবারের জন্যও বকে নাই। একবারের জন্যও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নাই। একবারের জন্যও বাচ্চাটারে অন্য সবার সামনে ছোট করে নাই। জাস্ট ঠিক উত্তরটা বলে দিয়েছে, দিয়ে আবার প্রশ্ন করেছে।

ভুল উত্তর শুনে একবারের জন্যও শিক্ষকটা বলে নাই, তুই তো কিছুই পারিস নাই। তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ফলে, ওই পিচ্চিটা এতো এতো ভুল করার পরেও তার হাসি এতোটুকু কমে নাই। কনফিডেন্স এতোটুকু কমে নাই। সে পারুক বা না পারুক, হাসতে হাসতে কথা বলতে পেরেছে শিক্ষকের সাথে।

আরও পড়ুন: এ যুগে ৪ জনের লিবারেল প্রেমের চেয়ে নাইন্টিজের পজেসিভ প্রেমই আমার প্রিয়

যে জিনিসটা আমরা, ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা পারি না। হাসতে হাসতে ভাইবা দেওয়া এখানে লিটারালি একটা ক্রাইম, ভুল উত্তর তো দূরের কথা, এমনকি ঠিক উত্তর দিলেও অনেক সময় আমাদের শিক্ষকরা উত্তর নেন না, আরো উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে সবার সামনে স্টুডেন্টদের লো ফিল করানোর চেষ্টা বাংলাদেশের কম বেশি সব ইউনিভার্সিটিতেই আছে। বিশ্বাস না হয়! জিজ্ঞেস করে দেইখেন।

ইউনিভার্সিটিতে আপনার সবকিছুর অধিকার আছে, খালি ভুল করার অধিকারটা নাই। এখানে পান থেকে চুন খসলে আপনাকে বকাবকি করা হবে, আপনাকে অপমান করা হবে, এমনকি আপনাকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হবে।

এবার বুঝতেছেন, ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কনফিডেন্স কেন এতো লো থাকে? কেন একটু কিছু হলেই এরা ঝুলে পড়ে? এইটা একদিনে হয় না। বরং দিনে দিনে আয়োজন করে, সবাই মিলে এখানে শিক্ষার্থীদের কনফিডেন্স ধ্বংস করে দেয়, মাথায় ঢুকাইয়া দেয়, তুমি আসলে কিচ্ছু পারো না।

ভিডিওর ওই মাদ্রাসার শিক্ষক যে শুরুতে বললেন, কেমন আছেন? সকালে খাইছেননি? বিশ্বাস করেন, আমাকে আজ পর্যন্ত আমার কোন টিচার ভাইবাতে জিজ্ঞাসা করে নাই, আমি কেমন আছি, সকালে খাইছি কি না? বাসার সবাই ভালো আছে কি না?

এই যে ভিডিও, এইটা দেখে আপনাদের মজা লাগছে। আর আমার লাগছে কষ্ট। এই বাচ্চা ছেলেটা যে ভুল উত্তর দিয়েও হাসতে পারতেছে ওই হাসিটা আমি বা আমরা এমনকি ঠিক উত্তর দিয়েও কোনদিন হাসতে পারি না, জানেন? বিরাট বিরাট ডিগ্রি, বিরাট বিরাট গবেষক, বিরাট বিরাট টিচার, অথচ এরা আপনাকে কোনদিন জিগাইতে জানে না, আপনি সকালে খেয়ে ভাইবা দিতে আসছেন কি না?

আমি ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই, অভিবাদন জানাই। স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলাদেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ভুল উত্তর দিয়েও শিক্ষকদের সামনে এমন করে হাসার কম্ফোর্ট আর সাহসটুকু পাবে।

আর স্টুডেন্টদেরকে ভয় আর ইনসাল্ট না করেও যে শেখানো যায়, পড়ানো যায়, পিচ্চি একটা বাচ্চাকেও যে আপনি করে ডাকা যায়, প্রশ্ন করার আগে সে সকালে খাইছে কি না, ভালো আছে কি না, এই প্রশ্নগুলো যে করা যায়, এই ব্যাপারগুলো একজন সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষক জানেন। অথচ আমাদের বিদেশি ডিগ্রিধারী হাই প্রোফাইল শিক্ষকরা জানেন না, এই দুঃখটা আমরা কোথায় রাখি?

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট