শেখ হাসিনার আদর্শিক কর্মীদের কেনা যায় না
ছাত্রলীগের দায়িত্ব নেয়ার মাস তিনেক পরের কথা। বিগত কমিটি বেশ কয়েকটি ইউনিটের সম্মেলন করলেও কমিটি করে নাই, যার মাঝে গাজীপুর মহানগর অন্যতম। এক সন্ধ্যায় আমি ও শোভন তাই গণভবনে নেত্রীর কাছে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ইউনিট হিসেবে সেখানে কমিটি করার ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশনা চাইলাম। তিনি গাজীপুর মহানগরের কমিটি করার ক্ষেত্রে আমজত উল্লাহ খান ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ দিলেন।
গণভবন থেকে বের হতেই তৎকালীন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর ভাইয়ের ফোন পেলাম, জানালেন তিনি দেখা করতে চান। বুঝলাম গনভবনে ভাইয়ের লোক আছে, যারা ইতিমধ্যে নেত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে তাকে অবহিত করেছে।
আমি নেত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট জানিয়ে তাকে কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে আজমত উল্লাহ ভাইয়ের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলাম। পরেরদিন সন্ধ্যায় একটি প্রোগ্রামে সংসদ ভবন এলাকায় ছিলাম। তিনি সেখানে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতাসহ কয়েকজনকে পাঠালেন, সাথে ড্রাইভারসহ অর্ধ কোটি মূল্যের একটি ব্রান্ড নিউ গাড়ী। একজন কানের কাছে এসে, গাড়ীর ভেতরে একটি বেশ বড় সাইজের ব্রিফকেসও আছে বলে জানালেন, আর ফোনে জাহাঙ্গীর ভাইকে ধরিয়ে দিলেন। ভাই ওপাশ থেকে বললেন, বড়ভাই হিসেবে এই সামান্য উপহার পাঠিয়েছেন, গ্রহণ করলে খুব খুশী হবেন।
আরও পড়ুন: ঢাবির গ্র্যাজুয়েট আজমত হারলেন স্বশিক্ষিত জায়েদার কাছে
আমার সাথে উপস্থিত প্রায় সবাই আমাকে এমন মূল্যবান উপহার গ্রহণ করার পরামর্শ দিলেও আমি তৎক্ষনাৎ অপারগতা প্রকাশ করে ভাইকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললাম, কমিটি বা পদ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কোন বিনিময়, লেনদেন করি না, আর নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি বললেন, কমিটির বিষয়ে তিনি আজমত ভাইয়ের সাথেই কথা বলে নেবেন, উপহার তিনি এমনিতেই ভালোবেসে দিয়েছেন। "আজমত ভাই সমন্বয় করতে বললে, আপনি এমনিতেই কমিটিতে ভাগ পাবেন। আমার ব্যবহারের জন্য গাড়ি আছে, ভবিষ্যতে কিছু প্রয়োজন হলে আমি চেয়ে নেবো" বলে পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে উপহার নিতে অপারগতা প্রকাশের পর ভাইয়ের কথামতো তার লোকজন অনেকটা মন খারাপ করেই গাড়ী ফেরত নিয়ে চলে গেলো।
উল্লেখ্য, আমার ব্যবহৃত গাড়ীটি ব্যাংক লোনে নেয়া, যার এক তৃতীয়াংশ কিস্তি এখনো বাকি। জীবনে চলার পথে অর্থ, বাড়ি-গাড়ী, পদ-ক্ষমতার প্রয়োজন আছে বৈকি! তবে এসবের জন্য সবাই নীতি-আদর্শ, কমিটমেন্ট বিকিয়ে দেয় না, দিতে পারে না! জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যেমন কেনা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রকৃত আদর্শিক কর্মীরাও স্রোতের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে নীতির সাথে আপোষ করে না। [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসু