২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৫

৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশেও কেন এত বিলম্ব?

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ  © ফাইল ফটো

১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে পাশকৃত হবু শিক্ষকদের অপেক্ষার পালা যেন শেষই হতে চায় না! এ যেন আঠারো মাসে বছর। সেই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল থেকে অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে এখনও প্রতিটি ধাপে অপেক্ষা আর অপেক্ষা!

১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৫ এবং ১৬ নভেম্বর। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সারাবিশ্বে মহামারী কোভিড-১৯ হানা দেয়। 

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সময় নেয় ১ বছরেরও বেশি। অথচ কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা নীতিমালায় উল্লেখ আছে যে, সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে। নিবন্ধন ইতিহাসে এত বেশি সময় কোনও ব্যাচের লাগেনি। এরপর, ভাইভা পরীক্ষা নিতে কর্তৃপক্ষের সময় লাগে প্রায় ৭ মাস। যেখানে অন্যান্য ব্যাচগুলোর ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ ভাইভা শেষ করতে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় নিয়েছিল। ১৬তমদের কষ্ট এখানেই শেষ নয়। মাত্র ৭ দিনের ভাইভা বাকি থাকতে কর্তৃপক্ষ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ১৬তমরা বঞ্চিত হয়। ১৬তমদের ভাইভা পরবর্তী চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর। যেখানে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ করা হয় ১৮ হাজার ৫৫০ জন প্রার্থীকে। তারপর গণবিজ্ঞপ্তির জন্য আবার অপেক্ষা! এ অপেক্ষার পালা যেন ১৬তমদের পিছু ছাড়ছেই না! এই অপেক্ষার প্রহরে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির পূরণ না হওয়া  প্রায় ১৫ হাজার পদ নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এখানেও হতাশার শেষ নেই। ওই ১৫ হাজার পদের অধিকাংশই কোটার এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের। ১৬তমদের মধ্যে খুব বেশি কেউ আবেদন করতে পারল না। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি তাদের গলার কাঁটা হয়ে উঠলো। কারণ, এই বিশেষের কারণে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি পিছিয়ে পড়লো। আবারও অপেক্ষা শুরু হলো ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির জন্য। ১৬তম মানেই কি অপেক্ষা! তাদের অপেক্ষার পালা কেন শেষ হয় না?

অবশেষে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই কাঙ্ক্ষিত ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলো। তারপর কর্তৃপক্ষ এক মাসের বেশি সময় ধরে আবেদন নিলো। যেখানে এত বেশি সময় না দিলেও পারতো। এই সময়ের মধ্যে ইনডেক্সধারি কিছু প্রার্থী ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ না পেয়ে রিট মামলা দায়ের করলো। এত কষ্ট আর অপেক্ষার পালা শেষে এই বেকারবান্ধব ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এর উপর শকুনের চোখ পড়ে গেল। ১৬তমদের কষ্ট আর হতাশা আরও বেড়ে গেল। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি বন্ধ করার জন্য এক দল দুষ্কৃতিকারীর সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির আবেদন নেয়া শেষ হলো ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি। এবার প্রাথমিক সুপারিশ এর ফলাফল প্রকাশের পালা। এখানে এসে অপেক্ষা না করা লাগলে ১৬তমদের মানায় না! এ যেন সৃষ্টিকর্তার লীলা! সুন্দর, স্বচ্ছ, নতুন এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেখানে ফলাফল প্রকাশে সর্বোচ্চ ১৫ দিন লাগার কথা সেখানে কর্তৃপক্ষ কেন এত বেশি সময় নিচ্ছেন! ১৬তমদের বুঝে আসে না। ১৬তমদের অপেক্ষার পালা পুনরায় শুরু হয়েছে। এই ফলাফল কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে সেটা তারা বুঝতে পারে না। 

১৬তমরা গোটা নিবন্ধন জগতের সবচেয়ে অবহেলিত, উপেক্ষিত, হতাশাগ্রস্ত জাতি। এদের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আজ অবধি দেখা যায়নি। লিখিত ফলাফলে বিলম্ব, ভাইভাতে বিলম্ব, বিশেষ দিয়ে বিলম্ব, ৪র্থ দিতে বিলম্ব, ৪র্থর ফলাফলে বিলম্ব! আর কত বিলম্ব ১৬তমদের সহ্য করতে হবে? কর্তৃপক্ষের কর্ণকুহরে কেন এই আর্তনাদ পৌঁছায় না! 

অবশেষে, কর্তৃপক্ষ ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফলাফল প্রকাশ করে অপেক্ষা নামক কষ্ট থেকে রেহাই দিবেন এই প্রত্যাশা করছি।

লেখক: মোঃ ইকবাল হাসান