এক টুকরো স্মৃতি
প্রবাহমান জীবন যাত্রায় বর্তমান বিদায় নেয় প্রতিনিয়ত। সময় স্রোতের এই খেলায় বেঁচে থাকে শুধু এক টুকরো স্মৃতি। ক্যাম্পাস জীবনের সোনালী অধ্যায়ে রচিত চার শিক্ষার্থীর সেই স্মৃতিগাঁথা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের তানভীর আহম্মেদ।
ভালো থাকুক আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
আমি অনুপম রায়। গণ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। আমার কাছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় মানেই একটি আবেগ, ভালোবাসার নাম। জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময় পাড়ি দিয়েছি আমি আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে। এই ক্যাম্পাস মানেই আমার কাছে নিজের পরিবারের মত আরেকটি পরিবার।ক্যাম্পাসের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলো আমার নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কতশত স্মৃতি রয়েছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসকে ঘিরে তা হয়তো বলে বোঝানো সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হবার পর থেকেই আমি প্রতিটি মুহুর্তে মিস করি ক্যাম্পাসের সেইসব ফেলে আসা সোনালী দিনগুলোকে। মিস করি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের, সেইসাথে মিস করি বন্ধু, বড় ভাই-বোন, ছোটো ভাই-বোনদের সাথে কাটানো সেইসব মুহুর্ত গুলোকে। আজকে আমাকে আমি হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে সবচাইতে যার বেশি অবদান সে হলো আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের শিক্ষকেরা। ভালো থাকুক আমার প্রিয় ক্যাম্পাস। ভালো থাকুক আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় মানুষগুলো।
অনুপম রায়
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৫-১৬
ব্যাচঃ ১৩ তম
বিভাগঃ আইন
প্রিয় ক্যাম্পাসের কিছু ছোট ভাই-বোন গুলোকে মনে পড়ে বারবার
আমি খাদিজা আক্তার সেতু। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গণ বিশ্ববিদ্যালয় এক মায়া জড়িত ভালোবাসার নাম। প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম, সেদিন এক অদৃশ্য ভয় কাজ করেছিলো ভিতরে। সময়ের ব্যবধানে ক্যাম্পাসকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছি। খুব মনে পড়ে সব কিছু। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে আসতো। বাদাম তলার মৃদু বাতাস সাথে প্লেট ভর্তি ফুচকা আর ঝাল মুড়ি, ছাত্র সংসদের সাদা গ্লাসের জানালা যেখানে দাঁড়ালে পুরো ক্যাম্পাসকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস, বন্ধুদের জন্মদিন উদযাপন, খেলার সময়ে খেলোয়াড়দের জয়ে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে হৈ হুল্লোর, ইব্রাহিম মামার মালাই চা, কতই না মজার ছিল সেই ফেলে আশা দিন গুলো। সত্যি বলতে অনেক বেশি মিস করি প্রিয় ক্যাম্পাসকে, প্রিয় ক্যাম্পাসের কিছু ছোট ভাই-বোন গুলোকে মনে পড়ে বারবার। আজ অতীতে দাঁড়িয়ে শুধু স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই। সুস্থ এক পরিবেশে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে সবাই ভালো থাকুক। প্রাণে প্রাণে মেতে থাকুক প্রতিটি নতুন প্রাণ এটাই প্রত্যাশা।
খাদিজা আক্তার সেতু
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৫-১৬
ব্যাচঃ২৯
বিভাগঃ ফার্মেসি
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
আমি নাঈম মাহমুদ। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। আমার কাছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় মানে জীবনের দ্বিতীয় ঠিকানা। আমার ক্যাম্পাস। কেমন আছো তুমি? অনেক দিন হলো ওই বাদাম তলায় গানের আড্ডা হয় না। খালার পিঠার দোকানের আড্ডা, সকালে ক্লাসের জন্য তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে ওঠা, সময় স্বল্পতায় সকালে না খেয়ে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া, টানা দুই ক্লাস পর সকাল-দুপুরের নাস্তা এক সঙ্গে করা। এসবই যেন এখন শুধুই স্মৃতি। ছোট ছোট কিছু টুকরা গল্পে বাঁধা, এলোমেলো কিছু স্মৃতিতে সাজানো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো। আর এই স্মৃতির পুরোটা জুড়ে আছে প্রিয় বন্ধুরা। নিজ বাড়ি থেকে দূর-দূরান্ত পাড়ি দিয়ে এক জায়গায় একত্রিত হওয়া প্রতিটি প্রাণের একমাত্র স্পন্দন এই ক্যাম্পাসই। এখানে একেকজন দেশের একেক প্রান্ত থেকে উঠে আসে। তাই সার্কেলের মধ্যেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। তবে এত বৈচিত্র্য থাকার পরও বন্ধুদের মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসার কমতি থাকে না। আমার ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়তেই স্মৃতি বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সেই চমৎকার স্মৃতিজাগানিয়া গানটি—
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্না-হাসির বাঁধন তারা সইল না
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি"
ভালো থাকো প্রিয় বন্ধুরা এবং ভালো থাকো প্রিয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
নাঈম মাহমুদ
শিক্ষাবর্ষ : ২০১৭-২০১৮
ব্যাচ : ৪র্থ
বিভাগ : ইইই
হুটহাট ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সবাই মিলে চলে যেতাম ঘুরতে
আমি জান্নাতুল ফেরদৌসি সোমা, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অনেকের মতো আমার কাছেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন স্বপ্নের জায়গা ছিল। ভর্তির দিনেই প্রথম পা রাখা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম দেখাতেই আমি এর প্রেমে পড়ে যাই। যখন ক্লাস শুরু হয় তখন নিজের চোখের সামনে বাস্তবতা ও কল্পনার এক নতুন দরজা উন্মোচিত হয়। জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা, শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পরিপূর্ণতা তৈরী করে ভিন্ন এক অনুভূতি। ক্যাম্পাস, লাইব্রেরী, বাদামতলা, ভার্সিটির সুবিশাল মাঠ ও বন্ধুদের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ৬টি বছর। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি বিজড়িত সেই দিনগুলোর কথা লিখে শেষ করা যাবে না। বাদামতলার আড্ডা, মাঠের মধ্যে খেলাধুলা ছিল আমাদের নিত্যদিনের কাজ। সঙ্গে পড়াশোনা গান-বাজনা, দুষ্টামি কি ছিল না। ঢাকার অদূরে এক টুকরো সবুজ ক্যাম্পাসের আলো বাতাস, সিনিয়র- জুনিয়র, কংক্রিটের ভবনের প্রতিটি ইট পাথর কিংবা ঘাস লতাপাতার সাথে যেন গড়ে উঠেছিল সখ্যতা। জীবনের রোমাঞ্চকর ক্ষণিক সময় টুকুকে দীর্ঘায়িত করতে মাঝে মাঝে হুটহাট ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সবাই মিলে চলে যেতাম ঘুরতে। স্মৃতিসৌধ, জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস, মানিকগঞ্জের রাজবাড়িসহ আশেপাশের কিছুই বাদ যায়নি এই তালিকা থেকে। আজ সব যেন স্মৃতি সমস্ত স্মৃতি যেন উঁকি দেয় ক্যাম্পাস জীবনে।
জান্নাতুল ফেরদৌসি সোমা
ব্যাচঃ ১৬ তম ব্যাচ
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৪-২০১৫
বিভাগঃ মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং