রনিকে এত মানুষ ভালোবাসে, তা ছিল কল্পনার বাইরে
কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি এবং পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। যদিও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছুদিন লাগবে কিন্তু হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে পরিবারের কাছে রনিদের এই ফিরে যাওয়া, তাদের স্ত্রী সন্তানদের মুখে যেমন হাসি ফুটিয়েছে, ভারী একটা পাথর নেমে গেছে আমাদের অর্থাৎ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বুক থেকেও।
চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আনন্দঘন অনুষ্ঠান হঠাৎ-ই বিষাদে রূপ নেয়, যখন গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এতে দগ্ধ হন ৫ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হন রনি ও জিল্লুর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রনি আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর দ্রুত তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমিও অনুষ্ঠান ফেলে ছুটে যাই ঢাকায়, বার্ণ ইউনিটে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি স্যারের নির্দেশে আহতদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করি আমরা।
অশেষ কৃতজ্ঞতা বার্ণ ইউনিটের প্রতিটি ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফদের। এছাড়াও আমার জিএমপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। সকলের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আন্তরিকতায় তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছেন। হাসপাতাল ছাড়ার মুহূর্তে রনির কণ্ঠে যা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘ডক্টর ইজ দ্যা সেকেন্ড গড। এক মাসের চিকিৎসাধীন সময়ে যতবার রনি ও জিল্লুরকে দেখতে গিয়েছি, প্রাণশক্তিতে ভরপুর দুই তরুণকে আবিষ্কার করেছি। বিশেষ করে রনি- যন্ত্রণায় কাতর সে তার স্বভাবসুলভ রসবোধের প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের বিস্মিত করেছে। আইজিপি স্যারের নির্দেশে আমরা দুজনকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে চাইলে, তারা রাজি হননি। বলেছেন, “দেশেই চিকিৎসা নেবেন, কোথাও যাবেন না।”এই দৃঢ় মানসিকতা ও দেশপ্রেমই ছিল তাদের বড় শক্তি। যে শক্তি দিন শেষে তাদের জিতিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: অনেকে জানেন না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’
রনির শিশু বাচ্চা, স্ত্রী ও কনস্টবল জিল্লুর সন্তান সম্ভাব্য স্ত্রীর দিকে যতবার তাকিয়েছি, একটা গভীর খারাপ লাগা বোধ তাড়িয়ে বেরিয়েছে আমাকে। মন খারাপ যেন পিছু ছাড়ছিল না। বিশেষ করে আমাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে রনির এই পরিণতি মেনে নিতে পারছিলাম না কিছুতেই। ফলে রনির সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য ভীষণ এক স্বস্তির ঘটনা।
অবসর সময়ে ও যানজটে বসে বহুবার রনির কৌতুক আমাকে আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু রনিকে যে এত মানুষ ভালোবাসে, তা ছিল কল্পনার বাইরে। প্রিয় অভিনেতার জন্য হাজারো মানুষের প্রার্থনা আর উদ্বেগ চোখে পড়েছে গত এক মাসে। এই অস্থির আর যান্ত্রিক সময়ে যে মানুষ অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তাকে তো বেঁচে থাকতে হবে আরও বহুদিন। হিংসা, বিদ্বেষ আর ক্ষোভের দাবানলে ছড়াতে হবে অকৃত্রিম আনন্দের বৃষ্টি।
আবু হেনা রনি আরও একটু সুস্থ হয়ে মঞ্চে ফিরলেই তাকে গাজীপুরে আবারও একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। সে ইচ্ছা পূরণের জন্য অধীর অপেক্ষায় রইলাম। গত এক মাসের দুঃসময়ে যারা আমাদের পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।
লেখক: পুলিশ কমিশনার,গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ