‘শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ’

অধ্যাপক দুলাল বিশ্বাস
অধ্যাপক দুলাল বিশ্বাস  © টিডিসি ফটো

 ত্রিশ লক্ষ নক্ষত্র দিয়ে আমরা বানিয়েছি, আমাদের নতুন আকাশ
আকাশের ভেতরের আকাশে অনন্ত সূর্যের মতো জ্বলে জনকের মুখ
আমাদের শিয়রে শিরায় জেগে থাকে তিনলক্ষ ছত্রিশ হাজার রাইফেল
আমাদের স্মৃতিজুড়ে  অমিত বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয়ের পতাকা ওড়ে
আমাদের হৃদয় আত্মীয়তার, ভালোবাসি মানুষ, ভালোবাসি দেশ।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
যুদ্ধের; আর রক্তের; আর স্বাধীনতার সূর্য-উঠার বাংলাদেশ
সবুজ পাতা, ঘন মেঘ বৃষ্টিজল, সমুদ্র-হাওয়ার বাংলাদেশ
নৌকায় দাঁড় হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝির মতো অগণিত মানুষের বাংলাদেশ
আমার মায়ের কণ্ঠস্বরের পলল মাটির বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
মৃত্যুর পাণ্ডুলিপি লেখে যারা আর যারা মৃত্যুর চেয়েও হিসেবী ঘাতক
যারা পোড়ায় মানুষের ঘর, কেড়ে নেয় সোনামুখী মেয়েটির নাকের নলক
তাদের বলীয়ান সীমানা ভেঙে জেগে ওঠো তুমি বদ্বীপ-বাংলা; বদ্বীপ সময়
তোমার আঙিনায় গ্রামপুঞ্জ শহরের গড় নতুন অংক সাহসিকতার।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তোমার সহিষ্ণুতা আমাদের গাছগুলো শেখে, মাঠ প্রান্তর শেখে, নদীগুলো শেখে
আকাশ এখানে একাকী আঁকে ছায়ার ডানায় তোমার ছায়া
তোমার নামে মুগ্ধতা নামে এখানে ওখানে আলোর মঞ্চে,
ধ্বনি আর ধমনীর ভেতরে তুমি আমাদের ভাষার উপমা।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তুমি তো শোনাও রূপান্তরের রূপকথা গান পাহাড়ের গাঁয়ে
কল্পলতায় বিছিয়ে দাও একটি ছবি, সোনার বাংলা, স্বর্ণভূমি
রমিজা মায়ের মুখের হাসি, তুমি এনে দাও, ঘর বেধে দাও অনাশ্রিতের
অন্ন যোগাও প্রান্তবাসী, লক্ষ-হাজার প্রাচীন চাষীর, নর নারীর।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
দু:সময়ের দুয়ার খুলে তুমি বাতাসে এনেছো ফসলের গান
জলের আয়নায় রূপালী ছবি, মাছের কাকলি রাত্রিদিন
বিজলি পাখায়, কলে-কারখানায় বিদ্যুৎ হয়ে বয়ে যাও তুমি
তোমার আভায় পুড়ে পুড়ে যায় দেশের শত্রু, জঙ্গী এবং বিপথগামী।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
অন্ধকারের ঘন বারুদের কালো কোলাহল সারা দেশ জুড়ে
তখন তুমি দু’হাতে উপড়ে, ফেলে দিলে খুনী ঘাতকের দল এবং দালাল
সিপাহ শালার সব রাজাকার, রাষ্ট্রবিনাশী ক্ষুরের আওয়াজ;
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন সকল নদীর অববাহিকায়।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
আলো হতে আজ স্কুলে যায় আলেকজানের সবকটি মেয়ে
জলের সীমায় আমাদের জয়, ঢেউকে শেখালে জয় বাংলা,
মহাকালের মনের ভেতর উড়িয়ে দিলে বাংলাদেশের চিহ্ন বোধক নামের ফলক
অতল তলের পিলার জুড়ে তুমি পাখনা উড়াও দূরবিসারী পদ্মা সেতুর।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তোমার সাথে বই হেঁটে যায় সকল পাড়ায় দামকোহল আর উমেদপুরে
তুমি বলে দাও শিশুদের কাছে চারিদিকে আজ বাজছে সানাই জীবন জয়ের
‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে’ ভয় পেওনা, আমি তো আছি বর্ণমালায়
আমি তো আছি, কাছাকাছি লোকালয়ে হিজল তলায়।


শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
মানুষের সাথে মানুষের যোগ অণুর চৌম্বকে গেঁথে দিলে তুমি
 তোমার আঙ্গুল বেয়ে পাতাল থেকে উঠে আসে ঝমঝম রেলগাড়ি
তুমি সাবলীল শব্দে শব্দে, যত মিথ্যে ভেঙে দিলে কুয়াশার কারুকাজ
তোমার কোলে জন্ম নেন পিতা, জন্ম নেয় মাতা, জন্মায় ইতিহাস।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তোমার মানবিকতা আর বিবেকের দায় ফিরে ফিরে দেখে পৃথিবীর চোখ
সীমান্তে তখন মৃত্যুর হানা, রক্তে ভেজা-আগুনে পোড়া উদ্বাস্তু সব মানুষের ঢল
তুমি করতল বিছিয়ে দিলে, মায়ের মতো অভয় দিলে বাঁচিয়ে রাখার
অভয় দিলে যুদ্ধ শিশুর, লক্ষ শিশুর মুখের খাবার জুগিয়ে যাবার।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
আমাদের আত্মা আর মুখের দু’পাড়ে কালি জমে আছে পরাধীনতার
আমাদের মনের হিমঘরে থাকে আত্মসম্মান-অকালমৃত আমাদের লাশ
আমরা সবাই জবাই করি, পিচ ঢালা পথ, উত্তরণের উচ্চারণ
তুমি এনে দিলে ঘন জাগরণ, দূঢ় বাতায়ন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
আমাদের ঠিকানা লিখা হয়ে গেছে জনকের সেরা স্বপ্নের অক্ষরে
তোমার পায়ের চিহ্ন দেখে আমরা হাঁটি, সে পথে হাঁটি দূরের যাত্রী
আমাদের সাথে জাগেন পিতা, জাগে আবহমান, জাগে ভবিষ্যৎ
তোমার পায়ের শব্দ শোনে ওৎপাতা কান, শোনে মহাকাল, কালের বয়ান।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তুমি আমাদের শক্তিপুঞ্জ, দীপ্র-প্রেরণা, দুর্দম গতি এগিয়ে চলার
ক্ষুধা ভয় আর মহামারির সব উপকথা শেষ হয়ে যাক
 শেষ হয়ে যাক পাশবিকতা, নির্যাতন আর লুটতরাজের অশুভ দিন
ঘর-কেড়ে-নেয়া মানুষের বোবা কান্নার অশ্রু শেষ হয়ে যাক।
শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
তোমার দু’হাতে প্রতিদিন ফোঁটে সূর্যমুখী, দু’চোখে আকাশে-উড়া পাখীদের ভিড়
তারার তিমির মুছে রঙধনু রঙের সাতটি রেখায় তোমাকে সম্ভাষণ
আমি কবি নই, তবু দেখি, পয়ারের সাঁকো বেয়ে তুমি
হেঁটে যাচ্ছো নক্ষত্রের দিগন্তের দিকে, তোমার দুপায়ে আলোর ঝুমুর।

শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নীচে এই বাংলাদেশ
যুদ্ধের; আর রক্তের; আর স্বাধীনতার সূর্য উঠার বাংলাদেশ।

 

শেখ হাসিনা

কবিঃ দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস

অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি


সর্বশেষ সংবাদ