১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫৭

আসলে আমাদের কোনো সিস্টেমই নেই

অধ্যাপক কামরুল হাসান

ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার ৫৩শতাং মানুষের কোন ধর্মে বিশ্বাস নাই কিন্তু ঐতিহ্যকে তারা সম্মান করে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর থেকে চার্লসের রাজা হওয়ার প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতাই হয়েছে চার্চে। এইসব অনুষ্ঠানের ড্রেস থেকে শুরু করে সব কিছুই বর্তমান যুগের সাথে যায় না।

অনেক অনেক বছর আগে রাজা বাদশাহরা যখন হাতি ঘোড়া তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করে রাজ্য জয় করতো তখন রাজপরিবার ও সভাসদরা যেমন ড্রেস পড়তো, যেমন রিচুয়াল ছিল সেইসব অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চার্লস রাজা হয়েছেন।

পুরো আনুষ্ঠানিকতার অধিকাংশই ছিল চার্চে। এইসব অনুষ্ঠানে জীবিত সকল সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ প্রায় সকলে উপস্থিত ছিলেন। আমি বিবিসির অনুষ্ঠানগুলো দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কিভাবে তারা এই দ্বিচারিতা করতে পারেন। ধর্মে কোন বিশ্বাস নাই অথচ কি সুন্দর চার্চের সকল অনুষ্ঠান অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে পালন করতে কোন অসুবিধা হয়নি। এর নাম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানো। 

চার্লস রাজা হওয়া মাত্র তার নিজস্ব মতামত বলে পাবলিকলি কিছু আর থাকলো না। তিনি হয়ে গেলেন সম্পূর্ণ নিউট্রাল। এমন কোন কথা বলা বা এমন কিছু তিনি আর করতে পারবেন না যা কোন দলের পক্ষে যায়। তার লাইফ অনেকটা ডিটারমিনিস্টিক। এই চারের পরিবর্তে তিনি পাবেন সম্মান। কিন্তু সেই সম্মানের সাথে কোন ক্ষমতা থাকবে না। থাকার জন্য উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা, উৎকৃষ্ট খাওয়ার ব্যবস্থা কিন্তু মন যা চায় তা করতে পারা ও বলতে পারার বিনিময়ে তিনি এইসব পাবেন।

ব্রিটিশরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান চায় যেটা খেলার রেফারীর মত থাকবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের খেলায় সম্পূর্ণ নিউট্রাল থাকবে। এক দল থেকে আরেক দল কিংবা একজন থেকে আরেকজনে ক্ষমতার বদল রাজা বা রানীর রেফারীতেই হবে। আমাদের প্রেসিডেন্টেরও এমনই হওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের প্রেসিডেন্টরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও সকলের হতে পারেননি। সম্পূর্ণ নিউট্রাল হতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী যেমন সকলের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না তেমনি অন্যসব কিছু। নামে মাত্র পার্লামেন্টারি সিস্টেম। আসলে আমাদের কোন সিস্টেমই নেই।

লেখক- অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

[ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]