০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩৫

ফেসবুক কমেন্টে ‘ইমোশনাল ব্যালেন্স’ জরুরি, মানতে হবে দুই নিয়ম

ফেসবুক কমেন্টে ‘ইমোশনাল ব্যালেন্স’ জরুরি, মানতে হবে দুই নিয়ম
ইমোশনাল ব্যালেন্স  © সংগৃহীত

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক, যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পোস্ট এবং কমেন্ট দেখে বা শুনে আমাদের মাঝে এক্সট্রিম ইমোশন তৈরি হয়। এই ইমোশনগুলোর মধ্যে যেমন রাগ, দুঃখ, আনন্দ বা বিরক্তি থাকতে পারে, তেমনি অনেক সময় আমরা এসব অনুভূতির প্রভাবে দ্রুত রিয়্যাক্ট করতে চাই। কিন্তু, আপনি জানেন কি? আমাদের রিয়্যাকশানগুলো কখনও কখনও ইমোশনাল রিফ্লেক্সের ফলস্বরূপ হতে পারে, যা আমাদের চিন্তা-ভাবনা না করেই ঘটে।

শরীরের বডি রিফ্লেক্সের মতো, ইমোশনাল রিফ্লেক্সও আমাদের মস্তিষ্কের অচেতন অংশ থেকে আসে। এই ধরনের অনুভূতি খুব দ্রুত সৃষ্টি হয় এবং আমাদের মধ্যে যে ভাবনা-চিন্তা চলে না, তা থেকেও তীব্র আবেগ তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে, ইমোশনাল রিফ্লেক্সের প্রসেসিং সময় থাকে এক সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ থেকে এক সেকেন্ড পর্যন্ত। তবে, যখন আমাদের চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ কনসাস থাকে, তখন সেই প্রক্রিয়া অনেক সময় নেয়—সেকেন্ড থেকে মিনিট পর্যন্ত।

এই সময়ে যদি আমরা আমাদের রাগ বা দুঃখ প্রকাশ করতে শুরু করি, তবে তা প্রায়ই হয় ঝামেলাপূর্ণ, কারণ ইমোশনাল রিফ্লেক্স সাধারণত দ্রুত ও অপরিণত হয়। আর এই অপরিণত রিয়াকশানগুলোই সোশ্যাল মিডিয়ায় অকারণ বিতর্ক, অশালীন কমেন্ট এবং কট্টর রিয়াকশান সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু যদি আমরা আমাদের এই ইমোশনাল রিফ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তবে এটি আমাদের মানসিকভাবে আরও ব্যালেন্সড মানুষ হতে সাহায্য করবে।

ইমোশনাল ব্যালেন্স বাড়ানোর দুটি নিয়ম:

১. প্রথম প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করা
আমাদের প্রথম ইমোশনাল রিয়াকশান যেন আমরা সরাসরি প্রকাশ না করি। এক্ষেত্রে, কিছু সময় অপেক্ষা করা জরুরি, যাতে আমাদের কনসাস চিন্তা ইমোশনাল রিফ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। রাসূল (সা.) এর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাগ হইলে চুপ থাকা ভাল’। এক্সট্রিম ইমোশনাল মুহূর্তে কিছু সময়ের জন্য সাইলেন্ট থাকা অনেক সময় কার্যকর হয়। কুরআনেও আল্লাহ্‌ মুমিনদেরকে শোনা কথা যাচাই না করে বিশ্বাস করতে এবং তার উপর রিয়্যাক্ট করতে নিষেধ করেছেন।

২. অবস্থান পরিবর্তন করা
ইমোশনাল রিফ্লেক্স কমাতে, কখনও কখনও আমাদের শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন করা দরকার। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ হলে বসো, এবং অজু করো।’ যখন আমরা শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন করি, তখন তা আমাদের মানসিক অবস্থা এবং অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, ফেসবুকে কমেন্ট করার সময় যদি প্রথমে যে রিয়াকশান আসে, তা প্রকাশ না করি এবং একটু চিন্তা করে ধীরে সুস্থে মন্তব্য করি, তাহলে সেই মন্তব্য আরও র‍্যাশনাল এবং সুষম হবে। এইভাবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এক শান্তিপূর্ণ এবং সম্মানজনক আলাপ আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

এছাড়া, এই দুটি নিয়ম শুধু ফেসবুকেই নয়, বরং ইন পারসন আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রেও কার্যকর। ফলে, আমাদের মাঝে যদি ইমোশনাল ব্যালেন্স বাড়ানোর চেষ্টা করি, তবে সামাজিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় এবং সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।

অতএব, ফেসবুকে বা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের ইমোশনাল রিফ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে এই দুইটি নিয়ম মানতে হবে, যাতে করে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, র‍্যাশনাল এবং সুচিন্তিত সমাজ গড়ে তুলতে পারি।