০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৪

ঢাকায় পড়তে এসে ধর্ষণের শিকার, কোলকাতায় পালিয়ে গেলেন মেডিকেল ছাত্রী

অভিযুক্তের সাথে ভুক্তভোগী ছাত্রী  © সংগৃহীত

কক্সবাজারের একটি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন কোলকাতার এক ছাত্রী। তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়ালেখা করেন। 

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, গত ৮ থেকে ১১ আগস্ট কক্সবাজারের হোটেল গ্যালাক্সির ৫০১ নম্বর কক্ষে তাকে তিনদিন ধরে ধর্ষণ করেন একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্র । এই ঘটনায় গত ১২ আগস্ট ঢাকার ওয়ারী থানায় অভিযোগ করতে গেলেও সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। অভিযুক্তের হত্যার হুমকির কারণে তিনি ঢাকা ছেড়ে কোলকাতায় পালিয়ে গেছেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযুক্তের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি অভিযুক্তের সাথে দেখা করতে একবার ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন। অভিযুক্তও তার সাথে দেখা করতে ঢাকায় এসেছিল। তবে তাদের মধ্যে মনমালিন্য হওয়ায় মাঝখানে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে আবারও তাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হলে তাকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেন ওই ছাত্র। নানা শর্তে ভুক্তভোগী ছাত্রী কক্সবাজার যেতে রাজি হন। গত ৭ আগস্ট রাতে যাত্রাবাড়ী থেকে তারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কক্সবাজারে পৌঁছে হোটেল গ্যালাক্সিতে ওঠার পর সেখানে তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারীর কোমরে ছিল পিস্তল

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কক্সবাজার যাওয়ার পর সে আমার মোবাইল এবং টাকা নিয়ে নেয়। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি ভয়ে কাউকে কিছু জানাতে পারিনি। সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। আমি কোনো মতে কক্সবাজার থেকে ১১ আগস্ট ঢাকায় ফিরি।

তিনি জানান, ঢাকায় ফেরার পর এই ঘটনা কাউকে জানালে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি কোলকাতায় অবস্থানরত আমার বাবা-মাকে ফোন করেও হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের কাছে আমাদের ভিডিও দিয়ে সেগুলো ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এই ঘটনায় সাংবাদিকরা আমার কাছে টাকা দাবি করেন। 

এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, আমি ১১ আগস্ট রাত ১টায় ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর ১২ আগস্ট প্রথমে ওয়ারি থানায় অভিযোগ করতে যাই। সেখান থেকে আমাকে যাত্রাবাড়ী থানায় পাঠানো হয়। তবে তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। পুলিশ বলেছে আমাকে কক্সবাজার গিয়ে মামলা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তের  ব্যবহৃত নাম্বারে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন: চাকরি হারাতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩০ শিক্ষক

ঘটনার সত্যতা জানতে হোটেলে গ্যালাক্সিতে ফোন করা হলে হোটেল ম্যানেজার শফিউল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৮-১১ আগস্ট স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলের এক ছাত্রী এবং একজন ছেলে ৫০১ নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন। ছেলেটি তার ভোটার আইডি কার্ড আর মেয়েটি পাসপোর্ট জমা রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ’‘ময়মনসিংহের শেরপুরের নার্সিং ইনস্টিটিউটে পড়েন। সে গত ৮ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের হোটেল গ্যালাক্সি রুমে ৫০১ নম্বরে আমাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে । সে আমার নগদ টাকা ও মোবাইল চুরি করেছে এবং আমাকে খুন করবে বলে আমার বাবা-মাকে হুমকি দিচ্ছে । দয়া করে আমাকে ন্যায় বিচার দিন । একজন বিদেশী ছাত্র হিসাবে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বিশাল হুমকি স্বরূপ । দয়া করে আপনারা প্রতিবাদে সরব হোন ।’’

আরেকটি স্ট্যাটাসে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‘‘ওই ছাত্র এখন আমার ভিডিও ভাইরাল করতেছে। ওর কিছু বন্ধুরা এবং সাংবাদিকরা মিলে আমার কাছে টাকায় আদায় করার চেষ্টা করতাছে। প্লিজ আপনারা কিছু করুন।’’ স্ট্যাটাসে তিনি একজন সাংবাদিকের ফোন নাম্বার উল্লেখ করে দিয়েছেন।

ওই নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে নিজেকে দুটি পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে জনি নামে একজন বলেন, অভিযুক্ত এবং ওই ছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই ছাত্রীই ওয়াকিলকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করেছে।

টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ওই ছাত্রীকে বলেছি, আমাদের কোনো বেতন নেই। আপনার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে আমাদের মোটরসাইকেলের তেল খরচ হবে। সেটার টাকা আপনাকে দিতে হবে। প্রথমে ওই ছাত্রী টাকা দিতে রাজি হলেও তিনি আর সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদারকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এ বিষয়ে ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন।

পরে ওয়ারি থানার ডিইটি অফিসার আব্দুল আলিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনাস্থল কক্সবাজারে হওয়ায় আমাদের এখানে মামলা নেওয়ার এখতিয়ার ছিল না। সেজন্য হয়তো তাকে কক্সবাজারে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে ঘটনা অনেক আগের হওয়ায় তখন কে দায়িত্বে ছিল সে বিষয়ে বলা মুশকিল।