যশোর শিক্ষা বোর্ড

৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, এখনও স্বপদে বহাল চেয়ারম্যান-সচিব

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা  © সংগৃহীত

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে চেক জালিয়াতি করে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান, সচিবসহ অন্যরা স্বপদে রয়েছেন। স্বপদে থেকে অভিযুক্তরা মামলা ও তদন্ত প্রভাবিত করছেন বলে বোর্ডের অনেক কর্মকর্তা দাবি করেছেন। শুধু তা-ই নয়, অডিট ও হিসাব শাখাও পুরো বন্ধ করে দিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে তারা এই সুযোগ পাচ্ছেন বলে বোর্ডের এক অংশের দাবি।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট মিলকরণে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় অ্যাকাউন্ট থেকে ৯টি চেক পরিশোধিত হয়েছে। কিন্তু বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের চেকে উল্লিখিত টাকার পরিমাণের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পরিশোধিত টাকার মিল নেই। মুড়ি বইয়ের চেকের তারিখ অনুযায়ী হিসাব শাখায় ব্যয় রেজিস্ট্রারের ব্যয় বিবরণীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য চেকগুলো ইস্যু করা হয়। কিন্তু ইস্যুকৃত চেকের বিপরীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে অর্থ পরিশোধিত হয়নি। শিক্ষা বোর্ডের ইস্যুকৃত নয়টি চেক জালিয়াতি করে দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা তুলে নিয়েছে।

১৮ অক্টোবর দুদকের সমন্বিত যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলমের নামে মামলা করেন। দুই ধাপে মোট ৫ কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু এত বড় দুর্নীতির অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবসহ অন্যরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দুর্নীতি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন দেয়নি। অবশ্য তদন্ত কমিটির প্রধান যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী জানান, তদন্ত শেষ। তারা দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, আইন অনুসারে মামলা হওয়ার পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও গ্রেফতার হলে তারা সাময়িক বরখাস্ত হবেন। এছাড়া দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপকর্ম উল্লেখ করে তাকে অপসারণে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট যশোর-২ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অ.) নাসির উদ্দিন ও যশোর-৬ আসনের এমপি শাহীন চাকলাদার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে, দুদক মামলা করলেও এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। ফলে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা কথা। তারা আশঙ্কা করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান তদবির করে আটকে দিয়েছেন তদন্ত কার্যক্রম।

জানতে চাইলে দুদক যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, বোর্ডের দুর্নীতির মামলার ফাইল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। আশা করছি চলতি মাসের যেকোনো দিন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হবে।


সর্বশেষ সংবাদ