পানের দোকানদারের ছেলে পেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ

বাবার সঙ্গে পানের দোকানে পিয়াল
বাবার সঙ্গে পানের দোকানে পিয়াল  © ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় নজরুল কলেজ মার্কেটের পাশে আব্দুল কাদের আকন্দের ছোট্ট একটি পানের দোকান। পান, চা আর সিগারেট বিক্রি করে চলে তার সংসার। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোই তাদের পরিবারে সৌভাগ্যের বিষয়। সেই ভাঙা ঘরে আলো জ্বালিয়েছে তার ছেলে পিয়াল। তিনি এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৩০তম স্থান দখল করায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। 

পিয়াল তার পরিবারের সাথে পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেদারপাড় গ্রামে বসবাস করেন। তার স্কুলজীবন শুরু স্থানীয় শুকতারা বিদ্যানিকেতনে। তিনি ময়মনসিংহের স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র। পিয়াল এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ৮৪ নম্বর পেয়ে জাতীয় মেধায় ৩০তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।

মেহেদী হাসান আকন্দ পিয়াল বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া ও বাবা-মায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলের চেষ্টা ও দোয়ার কারণেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। জাতীয় মেধায় ৩০তম হওয়া অনেক বড় অর্জন।

পিয়াল আরও বলেন, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাবা-মার পরই আমার শিক্ষকদের অবস্থান। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন ক্লাসে খুব চুপচাপ থাকলেও রেজাল্টের কারণেই আমার প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ ছিল। আমার রেজাল্ট সব সময়ই ভালো ছিল ও ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলাম। সেদিক বিবেচনায় শিক্ষকদের বিশেষ নজরে ছিলাম আমি। তারা আমাকে সব সময় সার্বিক দিক দিয়ে প্রেরণা যুগিয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত বাবা-মায়ের অবর্তমানে শিক্ষকরাই আমার অভিভাবক ছিলেন।

বাবা আব্দুল কাদের তার অভাবের সংসারে দুই ছেলেকেই পড়াশোনা করানোর ব্যাপারে কখনো কৃপণতা করেননি। 

পয়াল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সে পিএসসি ও জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। যার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এসএসসিতে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন পিয়াল। 

বাবা আব্দুল কাদেরের বলেন, নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমি কোনো রকমে তার পড়াশোনার খরচ নিজেই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত শিক্ষকরাও তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ নিয়ে এভাবেই সে ধাপে ধাপে এগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছেলে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাবে এটি কল্পনা করিনি। তবে আশা ছিল তাকে ডাক্তার বানাবো। তার নানাও খুব ইচ্ছে ছিল নাতি ডাক্তার হবে। তিনি মারা যাওয়ার আগে দোয়া করে গেছেন যেন সে ডাক্তার হয়। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।

শুকতারা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন আকন্দ বলেন, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় ও দৃঢ় মনোবল এতো দূর এগিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা তার সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করছি।

এমবিবিএস ভর্তির প্রস্তুতির ব্যাপারে পিয়াল বলেন, মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই জিপিএ ৫ লাগবে। তারপর মেডিকেলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আর নিজের ভেতরে ইচ্ছার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটাতে পারলেই মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া সম্ভব।

কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি মা-বাবা, শিক্ষক ও স্বজনদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় মেডিকেলের সেরা বিদ্যাপিঠে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দারিদ্র্যতার কাছে হার না মানা পিয়াল। তিনি চান, আগামীতে এমবিবিএস সম্পন্ন করে অসহায় ও গরিব রোগীদের পাশে দাঁড়াতে।


সর্বশেষ সংবাদ