একযুগ ধরে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস, নেপথ্যে ছাপাখানাকর্মীর সিন্ডিকেট
একযুগ ধরে মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে আসছে আবদুস সালাম খানের পারিবারিক সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর ছাপাখানার সাবেক এই মেশিনম্যান প্রশ্নফাঁস করতেন। আর সরবরাহ ও টাকা আদায় করতেন তার খালাতো ভাই ও অন্যরা। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চক্রটি জমি-বাড়িসহ প্রায় ৫৪ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে।
সিআইডির তথ্যমতে, ১৩৫ ব্যাংকে সিন্ডিকেটের ৯ সদস্যের ৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার তথ্য পেয়েছে। চলতি মাসেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ জব্দের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ বিষয়ে মামলা করা হয় শাহবাগ থানায়। মামলার তদন্তের সময় সিআইডি জানতে পারে ২০০৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেডিকেলেও প্রশ্নফাঁস হচ্ছে।
এরপর গতবছর এ চক্রের সদস্য সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরপর জানা যায়, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত এই পারিবারিক সিন্ডিকেটের তথ্য। স্বাস্থ্যের ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন দেয় মেশিনম্যান সালাম। এরপর তার খালাতো ভাই জসিম প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয় টাকার বিনিময়ে। গত জুলাইতে মিরপুর থেকে জমিস আর অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয় এ চক্রের মূলহোতা সালাম।
এরপর শুরু হয় পারিবারিক এ সিন্ডিকেটের সম্পদের খোঁজ। প্রাথমিকভাবে খবর পাওয়া যায় রাজধানীর শাহ আলীর পৃথ্বী ভিলার। সেখান একটি ৫ তলা ও একটি তিন তলা ভবন স্ত্রীর নামে বানিয়েছেন জসিম।
এছাড়াও কিনেছেন একটি ফ্ল্যাট। মিরপুর শাহ আলী মাজারের সামনে শ্বশুরের নামে গড়েছেন বাণিজ্যিক ভবন। জসিম ও তার স্ত্রীর সম্পদ রয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকার।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থের পর খোঁজ মেলে এ সিন্ডিকেটের ৯ সদস্যের ৭৪টি জমির দলিল। যেগুলোর বেশিরভাগই মানিকগঞ্জের সিংগাইরে।
সিআইডির সন্ধানে প্রাপ্ত প্রমাণে দেখা যায়, এই সিন্ডিকেটটি সদস্যরা ২০০৬ সালে প্রশ্ন ফাঁস শুরুর পর থেকে সাড়ে ৪২ একর জমি কিনেছেন। বানিয়েছেন বাগানবাড়িও। যেগুলোর বাজার মূল্য ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এ চক্রের আরেক সদস্য ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ। যাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযোগ আছে, প্রশ্ন ফাঁসের টাকায় ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ৫ তলা এ ভবন কিনছেন ময়েজ।
এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান, পারবারিক এ সিন্ডিকেটের ৫৪ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। পাশাপাশি ৯ জনের ১৩৫ ব্যাংক হিসেবে মিলেছে ৬৫ কোটি টাকা লেনদেনর তথ্য।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, আদালত জব্দের নির্দেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত এসব সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে অভিযুক্তরা। তাই, দ্রুত তথ্য প্রমাণ আদালতে দাখিলের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মানিলন্ডারিং মামলার পর অধিকতর তদন্তে এই সিন্ডিকেটের আরও সম্পদের খোঁজ মিলবে বলে ধারণা করছে সিআইডি।
সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ