নার্সের যৌন হয়রানি, ৪ কর্মকর্তাকে ঢাকায় তলব
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকের হাতে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের কাছে গোপন করে সংশ্লিষ্টরা। কী কারণে ঘটনাটি গোপন রাখা হলো জানতে চেয়ে রাজশাহীর চার কর্মকর্তাকে অধিদফতরে তলব করা হয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি তাদের ঢাকায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাই স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়। ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ ওই চার কর্মকর্তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
ওই চার কর্মকর্তার মধ্যে বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (নার্সিং) পদটি ফাঁকা আছে। এ পদে প্রায় দুই মাস ধরে কোনো কর্মকর্তা নেই। বাকি তিন কর্মকর্তা হলেন- জেলা পাবলিক হেলথ নার্স ফ্রান্সিসকা সরেন, রামেক হাসপাতালের সেবা তত্বাবধায়ক আনোয়ারা খাতুন এবং উপসেবা তত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন।
অধিদফতরের চিঠিতে বলা হয়েছে, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধিদফতরে অবহিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে এই চার পদের কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু তারা নার্সের যৌন হয়রানির বিষয়টি অধিদফতরকে জানাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে অধিদফতর বিষয়টি অবহিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অধিদফতরকে না জানানোর কারণে যৌন হয়রানির শিকার সিনিয়র স্টাফ নার্সের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্ণিত চার পদের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অধিদফতরকে না জানানো দায়িত্বে চরম অবহেলা, অদক্ষতা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল যা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য। তাই সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ তাদের অধিদফতরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের সেবা তত্বাবধায়ক আনোয়ারা খাতুন বলেন, এটা তো আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা কী করব সেটা আমাদের বিষয়। অধিদফতরের চিঠি পেয়েছি। কী করা যায় দেখছি।
গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে মামুন-অর-রহমান নামে এক চিকিৎসকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। মামুন সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ে ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে আসেন রামেক হাসপাতালে। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করা ডা. মামুন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ছুটি নিয়ে তিনি অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছেন।
রামেক হাসপাতালে যৌন হয়রানির ঘটনা জানাজানি হলে গত ২০ জানুয়ারি ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে একজন নার্স, বাকি চারজন চিকিৎসক। তারা ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নার্সরা। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতালের ব্যানারে ২৬ জানুয়ারি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ হয়।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, কমিটি এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তারা আরো সময় চেয়েছে। তাদের সময় দেয়া হয়েছে। নার্সিং বিভাগের আলাদা তদন্ত হওয়ার কথা না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত করছে সেই প্রতিবেদনই অধিদফতরে যাবে।