অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছয় কোটি টাকার বিলে স্বাক্ষর!
দুর্নীতি, লুটপাট, ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বিতর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে এবার অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার পিআইওর বিরুদ্ধে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ তুলেছে অনেকে।
অভিযোগ আছে, গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ১৪টি প্রকল্পের বিলে স্বাক্ষর নিতে যান পিআইও নুরুন্নবী সরকার। এ সময় কোনো ঠিকাদারের স্বাক্ষর ও ভাউচার ছাড়াই সাড়ে ছয় কোটি টাকার বিলে স্বাক্ষর চান তিনি। এ ধরনের অনৈতিক প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানালে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন পিআইও।
বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করার হুমকি দেন তিনি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে বিলে স্বাক্ষর করেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এরপর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। উল্টো সেই বিলে স্বাক্ষর করতে খোদ ইউএনও তাঁকে সুপারিশ করেছেন বলে জানিয়েছেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অগ্রিম বিল উত্তোলনের কোনো নিয়ম না থাকায় স্বাক্ষর করতে রাজি হইনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করেন পিআইও। একপর্যায়ে অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখান আমাকে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সেই বিলে স্বাক্ষর করি।’
এদিকে ঘুষ, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে গত রবিবার পিআইওর বদলির আদেশ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর। তাঁকে আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়। বদলির আদেশ পাওয়ার পর তা তুলে নিতে নানা কৌশলে বিভিন্ন মহলে তদবির চালাচ্ছেন পিআইও।
পিআইও নুরুন্নবী সরকারের এক ঘনিষ্ঠজন জানান, বদলির আদেশ স্থগিত করতে বগুড়া ও রাজশাহী শ্রম আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করার চেষ্টা করছেন পিআইও। এ জন্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন দিনের ছুটিও নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাদেকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘এবার আর কোনো তদবির পিআইওকে সুন্দরগঞ্জে রাখতে পারবে না। যদি আদালতে রিট পিটিশন করেন, তাহলে আমরাও তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।