‘মদপানে মৃত্যু’ ঢাকা মেডিকেল ছাত্রী নন্দিনীর, আসলে কী হয়েছিল?
দুর্গাপূজা উদযাপনে ঝিনাইদহে মামার বাড়িতে এসে মদপানে নন্দিনী রানী সরকার (১৮) নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মানিকগঞ্জ জেলার গিলান্দ গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে নন্দিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় নন্দিনী রানী সরকারের অবস্থান ছিল ১৩৩তম। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। এর আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মেডিকেলের পরীক্ষায় দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। এমবিবিএস শেষ করে দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা বড় মেয়ে নন্দিনীর আর পরিবারের হাল ধরা হলো না।
তার বাবা অনিল চন্দ্র সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। ঠিক আট মাস আগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন নন্দিনী রানী সরকার। কিন্তু সেই আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার বাবার দুশ্চিন্তা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো মানুষটি কীভাবে মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাবেন? সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন অনেকেই। সেই মেধাবী নন্দিনী এবার সংবাদের শিরোনাম হলেন হৃদয়বিদারক খবরে।
তার পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয়েছে, আসলে কী ঘটেছিল?
পরিবারের সদস্যরা জানান, নন্দিনী সরকারের চাচা গণেশ চন্দ্র সরকার প্রতিবছর পূজায় ভাতিজিসহ সপরিবারে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভান্ডারিয়া গ্রামে আসেন। এবারও সপ্তমীর দিন এখানে এসেছিলেন। বিজয়া দশমীর দিনে বিকেলে নন্দিনী তার বান্ধবীদের সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনে যায়। এ সময় সে তাদের সঙ্গে মদ পান করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২টার দিকে তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে ওই রাতই তাকে বাড়িতে আনা হয়।
আরও পড়ুন: ঢামেক শিক্ষার্থী সেই নন্দিনীর করুণ মৃত্যু, শেষ হয়ে গেল চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন
একদিন পর গত শনিবার রাতে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার ভোরে দিকে তার মৃত্যু হয়।
নন্দিনীর নানা সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, দশমীর দিনে বান্ধবীদের সঙ্গে বিসর্জন উপলক্ষে ঘুরতে গিয়ে তারা মদপান করে বলে জানা যায়। পরে রাতে নন্দিনী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থবোধ করলে চিকিৎসক ছাড়পত্র দেন। তবে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে মারা যান নন্দিনী।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, শনিবার রাতে নন্দিনী নামে এক তরুণী মদপানে অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুম খান জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে মদ বিক্রেতাকে আটকের কাজ শুরু করেছে পুলিশ।