২৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৬

বিএসএমএমইউ’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মঙ্গলবার

বিএসএমএমইউ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ২২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামীকাল মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যালে শ্রদ্ধাঞ্জলি, জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়ানো, র‌্যালি, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ূয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ২২তম বিশ্ববদ্যালয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে বিএসএমএমইউ’র ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ’র ভিসি ছাড়াও প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর, ২২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে গঠিত প্রচার উপ-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারায় অন্যতম উপাদান বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মোট ১ হাজার ৯০৪ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে বিনাভাড়ার বিছানা হলো ৭৫৮টি, কেবিনের সংখ্যা ১২৪টি, আইসিইউ, এনআইসিইউ ও পিআইসিসিইউ-এর মোট সংখ্যা ৯১টি। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৭ হাজারের অধিক রোগী এবং বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোরে ৯০০ থেকে ১০০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। মোট ২৭টি বিভাগে বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর সেবা চালু রয়েছে। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে অনকোলজি (ক্যান্সার) বিভাগে বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর সেবা চালু হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রোগীদের আধুনিক ও উন্নতসেবা প্রদান করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান আরও বলেন, বিগত ২০১৮ সালে মোট ২০ লাখ ৬০ হাজার ১ শত ৫৯ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। এরমধ্যে বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোরে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। একই বছর প্রতিদিন বর্হিবিভাগে গড়ে ৭ হাজারের অধিক রোগী সেবা নিয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রায় ৪০ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত বছর প্রায় ৪৬ হাজার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক গড়ে ১৬০ জন রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর মে মাসে স্লিপ ল্যাব চালু করা হয়েছে। নিরাময় অযোগ্য রোগীদের প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হসপিস এন্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার এলায়েন্স-এর সহায়তায় মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। গত বছর আধুনিক লেবার রুম, সিজার ওটি ও পোস্ট অপারেটিভ কমপ্লেক্স চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউ আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সুনাম অর্জন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২টি রেসিডেন্সী কোর্সসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের সংখ্যা ৯৫টি। বিভাগের সংখ্যা ৫৬টি। ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, প্যালেস্টাইন, ভূটান, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় সাড়ে তিনশত জন ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণার জন্য ভর্তি হয়েছেন।

গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ কৃতি শিক্ষার্থী ইউজিসি প্রবর্তিত প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেন। গত বছর রেসিডেন্সী প্রোগ্রাম ফেজ-এ এর মার্চ ২০১৯ সেশনের ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল ধরণের ভর্তি পরীক্ষা অতীতের ধারাবাহিকতায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জনবল নিয়ে পরিচালিত বিএসএমএমইউ গবেষণার ক্ষেত্রেও অবদান রেখে চলেছে। টাটা মোমোরিয়াল সেন্টার, জন হপকিন্স, শিকাগো ইউনিভার্সিটি, মাহিদোল ইউনিভার্সিটি, মিন্সক বিশ্ববিদ্যালয়, বেলারুশের স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিসহ ৩০টির বেশি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে গবেষণা মঞ্জুরী ও থিসিস গ্রান্ট।

গত ৪ বছরে ১৪৮ জন শিক্ষক ও ৬৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ মোট ৭৮৩ জনকে গবেষণা মঞ্জুরী ও থিসিস গ্রান্ট প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯ সালের গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২১১ ছাত্রছাত্রীকে গবেষণার জন্য গবেষণা অনুদান (থিসিস গ্রান্ট) প্রদান করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ল্যাবরেটরি সাপোর্ট সমৃদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যা শিগগির শিক্ষক, চিকিৎসকদের গবেষণার মূল কেন্দ্র হিসেবে পুরোদমে কাজ করবে বলে আমরা আশা করছি।