চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে দুই দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলা শুরু
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে (চাঁমেক) শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও উদ্ভাবনী চিন্তা তুলে ধরতে দুই দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দলভিত্তিক শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী প্রজেক্ট প্রদর্শন ও ব্যাখ্যা করেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ভবনের ছাদে আয়োজিত মেলায় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মেলায় ২২ প্রজেক্ট নিয়ে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষকরা প্রতিটি প্রজেক্ট পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা শোনেন এবং মূল্যায়ন করেন। মূল্যায়ন কার্যক্রমে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা অংশ নেন।
প্রজেক্ট নিয়ে অংশগ্রহণ করে তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রেজেন্টেশন নবজাতকের জন্মের পর শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধান নিয়ে। যদি কোন নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাহলে কীভাবে গোল্ডেন মিনিটের মধ্যে নবজাতকক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা যায় তা তুলে ধরা হয়েছে।
চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গবেষণার বিষয় ছিল মোবাইল ব্যবহারকারীদের মানসিক প্রভাব। যারা মোবাইল ব্যবহার করে না এবং যারা ব্যবহার করে তাদের মধ্যে পার্থক্য, সমস্যার ধরন ও সমাধান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্যও দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’
তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদিয়া জান্নাত বলেন, ‘হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে কীভাবে প্রাথমিক সহায়তা দিতে হয়, সাধারণ মানুষ কীভাবে পদক্ষেপ নিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব, তা সহজভাবে তুলে ধরেছি।’
চতুর্থ ব্যাচের মুমিতা জাহান বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে এমন আয়োজন আমাদের জন্য একধরনের বিনোদন এবং শেখার দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে। সময়টা খুব উপভোগ করেছি।’
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেলা নাজনীন বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই এ রকম একটি আয়োজনের চিন্তা ভাবনা করেছিলাম। অবশেষে আয়োজন করতে পেরেছি। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরকম বিজ্ঞান মেলা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই প্রথম। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকায় অন্যান্য মেডিকেল কলেজ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বড় পরিসরে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিকভাবে এবং হাতে-কলমে পারদর্শী করে তুলবে। এই প্রজেক্ট ও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াগুলো আনন্দের সঙ্গে শিখে নিচ্ছে।শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংগ্রহণ তাদের সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছু নিয়ে আসবে।’
মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করতেই এই বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন। শিক্ষকরা প্রতিটি স্টল মূল্যায়ন করছেন এবং বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘এ কলেজের প্রথম ব্যাচের দুজন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই মূল ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হবে এবং শিক্ষার্থীরা নিজস্ব ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।’
দুই দিনব্যাপী বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ও বিজ্ঞান মেলায় কলেজের সাবেক দুই অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জামাল সালেহ উদ্দিন এবং অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদসহ মেডিকেল কলেজের সব শিক্ষক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ, কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।